এত দিন যাঁরা ব্যাঙ্ক, পাশবই কী তা জানতেন না এখন তাঁদের হাতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশবই। দশ টাকা থেকে দশ হাজার টাকা বাড়ির অদূরে ব্যাঙ্কের জমা টাকা তুলতে পারছেন। সৌজন্যে আলট্রা স্মল ব্রাঞ্চ। ঘাটালের শিলা রাজনগরের শশাঙ্ক মাইতি, ক্ষুদিরাম ভুঁইয়া, শিতলপুরের উত্তম দাস, অভিরাম আদক, মিনি মাইতি, ঝর্ণা শাসমলদের কথায়, “আমাদের আগে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। এখন দশ-কুড়ি-পঞ্চাশ, যখন যেমন টাকা বাঁচিয়ে জমা দিচ্ছি।”
প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি অণুশাখা (আলট্রা স্মল ব্রাঞ্চ) খুলছে। ২০১২ সাল থেকে দেশ জুড়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক এই রকমের ব্রাঞ্চের মাধ্যমে প্রান্তবাসীরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক হয়েছেন বলে দাবি প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের।
কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ প্রকল্পটির কতটা সুফল পাচ্ছেন?
পশ্চিম মেদিনীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষদের দাবি, গত অগস্ট মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছিল। যদিও তার আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্টরা সাধারণ মানুষকে বিষয়টি বোঝাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতে ততটা সুফল মেলেনি। একাধিক ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্টের দাবি, সাধারণ মানুষ বিষয়টি বুঝতে না পারায় উল্টে অপমান করেছিলেন। কেউ কেউ এটিকে নতুন ধরনের প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থা বলেও মনে করেছিল। কিন্তু এখন গ্রাহক হওয়ার হুড়োহুড়ি পড়েছে সব শাখাতেই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লিড ডিস্ট্রিক ম্যানেজার সমরেন্দ্র সান্নিগ্রাহী বলেন, “জেলায় ২৭৩টি এই ধরনের ব্রাঞ্চ চালু হয়েছে। প্রতি ব্রাঞ্চে গড়ে ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি গ্রাহক হয়েছেন। প্রতিদিনই সংখ্যাটা বাড়ছে।”
গোটা রাজ্যে এ ধরনের ব্রাঞ্চ চালু হয়েছে। প্রায় ২০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অধীনে একাধিক আলট্রা স্মল ব্রাঞ্চ চলছে। এগুলিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এক একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিলেও মূল নিয়ন্ত্রণ থাকছে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কেরই।
সাধারণ মানুষ কী সুবিধা পাবেন এই সব ব্রাঞ্চ থেকে?
গ্রামের মানুষ দশ টাকা দিয়ে যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক হতে পারবেন। এত দিন যেটা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য ছিল না। প্রতিদিনই তাঁরা দশ থেকে কুড়ি যাঁর যে রকম সামর্থ্য তেমন অর্থ জমা দিতে পারবেন। অন্য দিকে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়িতে বসেই তা তুলতেও পারবেন। এ ছাড়াও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বা জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে লোনের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্রাঞ্চের ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্টদের কাছে আবেদন জমা দিতে পারবেন। তাঁরা তা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবেন। তা ছাড়া এ বার থেকে সরাসরি বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা, কন্যাশ্রী প্রকল্প-সহ সরকারি অনুদানের সমস্ত টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যাবে।
প্রকল্পটি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ঘাটালের শিলা রাজনগর, আজবনগর, প্রতাপপুর, জলসরা প্রভৃতি ব্রাঞ্চে গিয়ে তার প্রমাণও মিলল। শিলা রাজনগর ব্রাঞ্চে এখনই ১৫৯০ জন গ্রাহক হয়েছেন। ওই ব্রাঞ্চের ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট শান্তনু দোলই বলেন, “আগে আমার অনেকে অপমান থেকে তাড়িয়েও দিয়েছেন। এখন তাঁরাই ব্রাঞ্চে এসে টাকা জমা দিচ্ছেন।” আজবনগরের সত্যনারায়ণ গিরি, ঘিসরার কানাই পোড়েরা বলেন, “আগে একশো দিনের টাকা পেতে ছুটতে হত চার কিলোমিটার। এখন বাড়ির সামনেই তা মিলবে।” রথিপুরের ষাটোর্ধ্ব কল্পনা বসুর কথায়, “আগে দু’কিলোমিটার হেঁটে বিধবা ভাতা আনতে হত। এখন বাড়িতে বসেই জানতে পারব এসেছে কিনা। ওই ব্রাঞ্চের করেসপন্ডেন্ট সমিত বসু বলেন, “গ্রামের মানুষকে সাহায্য করতে পেরে ভাল লাগছে।” |