পাঁক না পেরোলে পদ্মফুল মিলবে না। মল্লিকঘাট ফুলবাজারের অবস্থাটা যেন সে রকমই। এক দিকে বাজার পরিচালন সমিতির উদ্যোগে বাজারের ভিতরে উন্নয়নের চেষ্টা, অন্য দিকে বাজারে ঢোকার পথের নারকীয় অবস্থা এই দুইয়ের বিসম সহাবস্থান কার্যত থমকে দিয়েছে বাজারের হাল বদলের গোটা প্রক্রিয়াটাই।
বাজার সংলগ্ন রাস্তা থেকে শুরু করে ঢোকার গেট, সবই যেন নরক। যত্রতত্র জমে আছে জঞ্জালের স্তূপ। তার মধ্যে কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় হাঁটাচলা দায়। তবে বাজারের ভিতরে মূল অংশের ৩৪০০ বর্গমিটার জায়গা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে চলতি বছরে। বাজারের ভিতরে পরিচিত কাদা প্যাচপ্যাচে ছবিটাও আর নেই। তার জায়গায় বাঁধানো মেঝেতে ফুলের পসরা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। সংস্কার বলতে এইটুকুই।
সামনেই উৎসবের মরসুম। তবু এখনও কেন এই হাল ফুলবাজারের? |
মল্লিকঘাট ফুলবাজার সূত্রে খবর, বাইরের রাস্তা-সহ যেখানে বাজার বসছে, পুরো জায়গাটাই কলকাতা বন্দরের। বাজার সংস্কারের জন্য রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরকে ফুলবাজারের ৩৪০০ বর্গমিটার জায়গা ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় তারা। রাস্তা-সহ বাকি অংশ দেওয়া হয়নি। মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতিকে ৩৪০০ বর্গমিটার অংশ দেখভাল করতে বলে উদ্যানপালন দফতর। সমিতির সদস্যেরা জানান, সেই অনুযায়ী মল্লিকঘাটের পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রতিদিন ফুলচাষিদের থেকে দৈনিক সাত টাকা ও স্টল হোল্ডারদের কাছ থেকে বর্গমিটার পিছু মাসে ১০৪ টাকা করে নেওয়া হয়। এক সদস্য অশোক গিরি বলেন, “ওই টাকাতেই আমরা সম্প্রতি ৩৪০০ বর্গমিটার বাঁধিয়ে দিয়েছি, বাজারে আলো লাগিয়েছি, শৌচাগার তৈরি করছি।”
তবে মল্লিকঘাট ফুলবাজার বলতে তো আর শুধু ওই ৩৪০০ বর্গমিটার জায়গা নয়, বাজারের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে সংলগ্ন রাস্তাও ফুলবাজারের মধ্যেই পড়ে। রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে ফুল বেচেন কয়েক হাজার বিক্রেতা। সেই রাস্তার হাল না ফেরায় বাজারের উন্নয়ন কার্যত চোখেই পড়ছে না বলে জানাচ্ছেন মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির সদস্যরা।
কবে ফিরবে সেই হাল? চাষিদের মতে, ফুলবাজারের রাস্তার সংস্কার করা দরকার এখনই। না হলে পুজোর মরসুমে ব্যবসা মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কলকাতা বন্দরের এক জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “ওই রাস্তা ফুলবাজারের ঠিক পাশ দিয়ে গিয়েছে। বিক্রেতাদের একটা বড় অংশ ওই রাস্তার পাশে বসেন। তাই ওই রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। খুব শীঘ্রই ওই রাস্তার দেখভালের দায়িত্ব নেবে তারা।” পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ বলেন, “জায়গাটা বন্দরের। তাদেরই সারানোর কথা। তবে যেহেতু সামনেই ফুলবাজার রয়েছে, তাই ওই রাস্তা মেরামতির দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। পুজোর আগেই ওই রাস্তা মেরামতি শুরু হত। বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে ওই রাস্তা সারানো শুরু হবে।” |
তবে শুধু ওই রাস্তাটিই নয়, পুরো মল্লিকঘাট ফুলবাজারেরই উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “আগের সরকারকে মল্লিকঘাট ফুলবাজারের উন্নয়নে ৫ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকা উন্নয়নের জন্য খরচ না হওয়ায় সুদ-সহ কেন্দ্রকে ফেরত দিতে হয়। বর্তমান সরকার ফের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের কাছে টাকা চেয়েছে। এ বার ৩৫ কোটি টাকায় মল্লিকঘাট ফুলবাজারের উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ হবে।”
কী কী কাজ হবে উন্নয়ন প্রকল্পে? জানা গিয়েছে, ৩৪০০ বর্গমিটার মূল অংশে তৈরি হবে চারতলা ভবন গড়বে রাজ্যের উদ্যানপালন বিভাগ। বিভাগীয় আধিকারিক সুব্রত বসু বলেন, “আগের প্রকল্পে ভবনের নীচের তলায় স্বীকৃত স্টল, দোতলায় খুচরো ব্যাপারীদের জায়গা দেওয়ার কথা হয়েছিল। এখন একতলায় খুচরো ব্যাপারী, দোতলায় স্টলমালিকদের জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তিনি জানান, প্রস্তাবিত চারতলা ভবনে বৈদ্যুতিন নিলাম বিভাগ, কোল্ড স্টোরেজ, গবেষণাগার, অতিথিশালা, পার্কিং-ব্যবস্থা সবই থাকবে। নয়া প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা। তিনি জানান, প্রাথমিক সম্মতি মিলেছে। মোট খরচের ৬৫ শতাংশ বরাদ্দ করবে কেন্দ্র। রাজ্য দেবে বাকি ৩৫ শতাংশ। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, “আপাতত কাছেই অস্থায়ী ছাউনি করে ৭৫টি স্টল স্থানান্তরের পরিকল্পনা হয়েছে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা সমীক্ষা করে গিয়েছেন। শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে।”
|
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী। |