এক দিকে চরকায় কাটা সুতোর পোশাকের ক্রমহ্রাসমান চাহিদা, অন্য দিকে যুযুধান দুই পরিচালন সমিতি দুইয়ের মাঝে পড়ে বেলেঘাটার গাঁধী ভবনে ‘খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ’ পরিচালিত ‘চরকা প্রকল্প’ বন্ধ হতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পর্ষদের দেওয়া ১০টি চরকা সেখানে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কোনও সুতোই কার্যত উৎপাদন হচ্ছে না। মহাত্মা গাঁধীর ১৪৫তম জন্মদিনে এ খবর জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছেন পর্ষদ কর্তারা। কিছু দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
বেলেঘাটার এই বাড়িতেই ১৯৪৭ সালে দাঙ্গা চলাকালীন প্রায় এক মাস ছিলেন মহাত্মা গাঁধী। রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্প দফতর সূত্রে খবর, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী রাজ্যপাল থাকার সময়ে একাধিক বার জানিয়েছিলেন মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতিধন্য এই বাড়িতে খাদির চরকা প্রকল্প শুরু হলে সেটি হবে মহাত্মার দেখানো পথে সঠিক ভাবে চলা। সেইমতো ২০১২ সালে প্রকল্প উদ্বোধন করেন তৎকালীন মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা। ‘খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ’ থেকে ১০টি চরকা দেওয়া হয়। স্থানীয় ১০ জন দুঃস্থ মহিলাকে দু’মাস প্রশিক্ষণও দেয় পর্ষদ। ঠিক হয়, এক লাছি সুতো কাটলে তাঁদের ৩ টাকা করে দেওয়া হবে। এই ভাবে এক-এক জন ১০০ টাকার কাজ শেষ করলে ১২ টাকা করে কেটে বাকি টাকা তাঁদের হাতে দেওয়া হবে এবং ওই ১২ টাকা করে জমা করা হবে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু প্রকল্প শুরুর কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই কর্মীর সংখ্যা কমতে থাকে।
এখন তিন থেকে চার জন মাত্র কাজে আসেন। তা-ও নিয়মিত কাজ হয় না।
প্রকল্পটির শুরু থেকে কাজ করছেন কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। বললেন, “সকাল দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে হয় এখানে। তা সত্ত্বেও মাসে ৩০০ টাকার বেশি হয় না। এত কম টাকায় কেন মেয়েরা কাজ করবে? তা-ও গাঁধীজির নামে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু মেয়ে এসেছিল। কিন্তু এখানে ভবন পরিচালনা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর যে মারামারি শুরু হয়েছে, তাতে সেই আগ্রহও হারিয়ে যাচ্ছে।” দুই সমিতির এই দ্বন্দ্বের ব্যাপারে ‘পূর্ব কলকাতা গাঁধী স্মারক সমিতি’র যুগ্ম সচিব পাঁপড়ি দাশগুপ্তের বক্তব্য, “চরকা প্রকল্পের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রকল্প গাঁধী ভবনে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে প্রধানত ‘পূর্ব-কলকাতা বাপুজি সেবা সমিতি’র উৎপাতে। যেহেতু প্রকল্পটি আমরা উদ্যোগী হয়ে শুরু করেছিলাম, তাই ওরা নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করছে।”
অন্য দিকে, বাপুজি সেবা সমিতির সভাপতি দীপক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “অভিযোগটি মিথ্যা। আসলে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স যুগে চরকায় সুতো কাটার মতো প্রকল্প সফল হওয়ার কথা নয়। তা সফল করতে কর্মীদের যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দেওয়া প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা হচ্ছে না।” কেন পারিশ্রমিক বাড়ছে না? ‘খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ’-এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কেন্দ্রের খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন’-এর নির্ধারিত পারিশ্রমিক আমরা দিই। সারা ভারতে এই টাকাই দেওয়া হয়। যদি দেখা যায় বেলেঘাটা গাঁধীভবনে প্রকল্প ঠিকঠাক চলছে না, তা হলে সেটি বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।” |