বেশ কয়েক বছর ধরে থিম পুজোর আয়োজনে জেলা শহরগুলিও কলকাতার সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে। সিউড়িতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সিউড়ির একটি সর্বজনীন পুজো কমিটি যেমন এ বার তাদের মণ্ডপে তুলে আনছে পুরুলিয়ার জয়পুর গ্রামকে। অন্য দিকে, দু’টি প্রাচীন সর্বজনীন পুজো কমিটি মণ্ডপ সাজাচ্ছে শিশুদের জনপ্রিয় হিন্দি কার্টুন ‘ছোটা ভীম’কে ঘিরে। পাড়ায় পাড়ায় এমন নানা অঙ্গের থিমপুজোকে ঘিরে সিউড়িতে ক্রমশ উত্তেজনার পারদ চড়ছে। সব মিলিয়ে তাই জেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্ত এ বার ভিড়ে থৈ থৈ করবেই বলে মনে করছে পুজো কমিটিগুলি।
সিউড়ি পুলিশ লাইন লাগোয়া ২৫ বছরের পুরনো যাত্রিক ক্লাব সর্বজনীন পুজো মণ্ডপ যেন পুরুলিয়ার ছৌ-গ্রাম জয়পুর। স্থানীয় চিত্রকর শ্যামল মণ্ডলের ভাবনায় এ বার ওই পুজো মণ্ডপে দেবদেবী সজ্জিত থাকবেন ছৌ-এর আঙ্গিকে। মূল প্রতিমা ছাড়াও প্রায় ৮০টি ছৌ মুখোশ বাকি মণ্ডপে সাজানো থাকছে। মণ্ডপের মূল আধারটি থাকছে খোলা আকাশের নীচে, ভাঙা প্রাচীন মন্দিরের আদলে। এ ছাড়াও থাকছে ৮টি মতো খড়ের ও খাপড়ো টালির কুটির। তারমধ্যে একটিতে থাকবে ছৌয়ের সরঞ্জামের প্রদর্শনী। যেখানে জয়পুরের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছৌশিল্পী মধু রায়ের সাজপোশাকও। গত দেড় মাস ধরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মধুবাবুর নাতি কাঞ্চন রায় কয়েক জন সহকারীর সঙ্গে এখানে ছৌ মুখোশের গয়না অলঙ্করণের কাজ করছেন। এ ছাড়া ষষ্ঠী থেকে নবমীর সন্ধ্যায় ছৌয়ের বিভিন্ন পালা তো থাকছেই। সঙ্গে সর্বক্ষণের জন্য হাল্কা সুরে ছৌয়ের বাজনা।
শহরের অপরপ্রান্তে, দত্তপুকুরে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তায় ৩৪ বছরের পুরনো চৌরঙ্গী সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে ঢুকে পড়লেন সমুদ্র গহ্বরে। গোটা মণ্ডপটাই যেন নীল সমুদ্র। সেখানেই থাকবে মৎস্যরূপী দেবী, বিভিন্ন সামুদ্রিক অর্কিড, মাছ, কচ্ছপ, প্রবালদ্বীপ। আলোর খেলায় দর্শকরা সমুদ্র গর্ভে প্রবেশের রোমাঞ্চ পাবেন।
চৌরঙ্গীরই কাছাকাছি জোনাকি এবং স্বাধীন ভারত ক্লাব দু’টির পুজোর বয়স যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৫ বছরে পড়ল। দুই পুজো কমিটিই শিশু বিনোদের কথা মাথায় রেখে মণ্ডপ সাজাচ্ছে ছোটা ভীমকে দিয়ে। অন্য দিকে, এ বারই প্রথম থিমপুজো করার উদ্যোগ নিয়েছে এলাকার জনপ্রিয় আনন্দপুর আদি সর্বজনীন। ৬৪ বছরের প্রাচীন ওই পুজো কমিটির থিম ‘মহাশক্তি মহামায়া’। দুর্গাকে দেবদেবীদের বর ও অস্ত্র দানই সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
এ দিকে বিষ্ণপুর ঘরানায় সেজে উঠছে ৪৩ বছরের পুরনো রবীন্দ্রপল্লির পুজো মণ্ডপ। অনির্বাণ বড়ালের পরিকল্পনায় ‘তাসের দশ-অবতার’ থিমে শিল্পীরা ৪ ফুট বাই ৮ ফুটের তাস দিয়ে ওই মণ্ডপ গড়ে তুলছেন। |