প্রচলিত প্রথা ভাঙতে চান না পাঠক পরিবারের সদস্যরা
নিজেদের হাতে গড়া মূর্তি নিজেরাই পুজো করেন। তবে নিছক কোনও চমক সৃষ্টি বা ‘সৌখিন মজদুরি’র তাড়নায় নয়। দেবীর স্বপ্নাদেশে পুরুষানুক্রমে এ ভাবেই পুজো করে আসছেন নানুরের আলিগ্রামের পাঠক পরিবার।
সে প্রায় ৪০০ বছর আগেকার কথা। পরিবারের বর্তমান সদস্যেরা জানালেন, ষষ্ঠীর দিন রাতে পুজো প্রচলনের স্বপ্নাদেশ পান যুগল কিশোর পাঠক। আকাশ ভেঙে পড়ে দুঃস্থ পুরোহিত যুগল কিশোরের মাথায়। পুজো প্রচলনের মতো আর্থিক সামর্থ তাঁর কোথায়। আর সেই সময়ই বা কোথায়। খুব কম সময়ের মধ্যে পুজোর সামগ্রী জোগাড় করা যে কোনও মতেই সম্ভব নয়। মা তাঁকে আস্বস্ত করেন, ‘কোনও চিন্তা নেই তোর। সকালে উঠে দেখবি প্রতিমা থেকে পুজোর যাবতীয় সামগ্রী পৌঁছে গিয়েছে বাড়িতে।’ ঘটনাচক্রে ওই বছরই প্রতিমা তৈরি-সহ সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পরে, পারিবারিক কারণে গ্রামেরই একটি পরিবারের পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
সপ্তমীর ভোরে দেখা যায়, ওই পরিবারের লোকেরাই যাবতীয় উপচার-সহ প্রতিমা পৌঁছে দেন পাঠক পরিবারে। নিজে হাতে সেই প্রতিমা পুজো করেন যুগল কিশোর। প্রথম বছর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় কোনও রকমে পুজো সম্ভব হলেও পরের বছর সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয়দের উৎসাহেও ভাটা পড়ে। তখন অকুল পাথারে পড়েন যুগল কিশোর। ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান বলে জানা জানা গিয়েছে। স্বপ্নে দেবী বলেন, ‘তুই নিজেই আমার মূর্তি পুজো কর।’ সেই থেকেই পাঠক পরিবার নিজেরাই মূর্তি গড়ে পুজো করেন।
অবস্থা বদলেছে। কাঁথা স্টিচের ব্যবসা করে সুদিনের মুখ দেখেছে পাঠক পরিবার। এখন কোনও শিল্পীকে দিয়ে মূর্তি তৈরি করিয়ে নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না তাঁদের। কিন্তু প্রচলিত প্রথা ভাঙেননি তাঁরা। বরং মূর্তি গড়তে গড়তে নিজেরাই শিল্পী হয়ে উঠেছেন। প্রবীণ সদস্য ভবানী পাঠক, দুর্গাপ্রসাদ পাঠক, অভয়প্রসাদ পাঠকেরা বলেন, “বর্তমানে কোনও শিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা তৈরি করিয়ে নিতে আমাদের খুব একটা কষ্ট হবে না। কিন্তু পূর্বপুরুষদের প্রচলিত প্রথা ভাঙতে সত্যিই খুব কষ্ট হবে।”
এখন নিজেদের ছাড়াও এলাকায় আরও ৩-৪টি প্রতিমা গড়েন এই পাঠক পরিবারের সদস্যরা। স্বভাবিক ভাবে পুজো এলেই সাজো সাজো রব পড়ে যায় পাঠক পরিবারে। বাড়ির মূর্তি গড়তে বড়দের সঙ্গে হাত লাগায় ছোটরাও। ষষ্ঠ শ্রেণির রাজা পাঠক, নবম শ্রেণির দেবী পাঠকদের কথায়, “বাবা-কাকাদের সঙ্গে কাঠামোয় খড় বাঁধা থেকে সাজ সরানোর কাজ করি। কিন্তু যখন প্রতিমা তৈরি সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তখন ভাবতেই পারি না আমরাই ওই সব করেছি।” প্রভাস পাঠক, প্রভাত পাঠাকেরা বলেন, “প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি ছোটদের মন্ত্র উচ্চারণের তালিম দেওয়া হয়। এ ভাবেই পরবর্তী প্রজন্মে চালিত হয়, পূর্বপুরুষদের প্রচলিত প্রথা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.