ভয় উড়িয়ে ক্যানসার জয়ই মন্ত্র যুবি-মনীষার
কে বলে ক্যানসার রোগীরা নাচতে পারেন না?
তখন মঞ্চ মাতাচ্ছেন উষা উত্থুপ। সেই সুরে দুলে উঠছেন ক্যানসার-উত্তীর্ণ দুই তারকা— যুবরাজ সিংহ ও মনীষা কৈরালা! তাঁদের দেখেই মঞ্চে উঠলেন নিশি লোহারুকা। মাস ছয়েক হল, অ্যাপেন্ডিক্সের ক্যানসারের সঙ্গে যিনি বসবাস শুরু করেছেন। ঠিক তখনই দেখা গেল তাপস রাহাকে। মস্তিষ্কের গ্রেড ফোর টিউমারের সঙ্গে পাঁচ বছর সাত মাস ধরে লড়ে যাওয়া তাপস হুইলচেয়ার ভুলে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় ধরছিলেন মুহূর্তগুলো।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে মনীষা বা যুবরাজ, কেউই এক বারের জন্যও মুখ গোমড়া করার সুযোগ দিলেন না। তাঁদের খুশিয়াল মেজাজটাই পাঁচতারা হোটেলের বলরুমে ছড়িয়ে গেল। ক্যানসারকে হারানোর পরে শহর কলকাতাতেই প্রথম বার মুখোমুখি হলেন বাইশ গজ আর রুপোলি পর্দার দুই শিল্পী। তাঁদের ছোঁয়ায় এই আসর হয়ে উঠল ক্যানসার নিয়ে গুচ্ছের মিথ, ভুল ধারণা ভাঙার লগ্ন।
আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের টিম ইন্ডিয়ায় সুযোগ পাওয়া যুবরাজ বলছিলেন, “ক্রিকেটে ফেরার টানটাই বরাবর আমায় ক্যানসার জয়ের শক্তি জুগিয়েছে। আমি যদি পারি, আপনারাও আলবত পারবেন।”
আর মনীষা বললেন, “আমি ক্যানসার-রোগী ছিলাম বলবেন না। বরং ‘ক্যানসার-যোদ্ধা’ বলার মধ্যে যে কলার-তোলা শ্লাঘার মেজাজটা আছে, সেটা আমার দারুণ পছন্দ। তাই তো নিজেকে ‘ক্যানসার ক্রুসেডার’ বলি। ভাবি-ও।”
মৃত্যুঞ্জয়ী
ক্যানসার সচেতনতা বাড়াতে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যুবি ও মনীষা। ছবি: উৎপল সরকার।
ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা-অভিযানে জীবনভর ব্রতী থাকার কথা বললেন দু’জনেই। কিন্তু তা বলে নিজেদের হাসিখুশি পাগলাটে মেজাজটা মুছে দেওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না যুবি-মনীষা। উষা উত্থুপের গান শুরু হতেই সেটা মালুম হল। মনীষা ছুট্টে গিয়ে উষার কানে-কানে বললেন, “এটাই আমার প্রিয় গান।” উষা তখন বাংলা ও ইংরেজি তর্জমা মিশিয়ে ‘একলা চলো রে’ গাইছেন। মনীষার ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা উষা ঘোষণা করতেই যুবিও একই কথা বললেন তাঁকে। সংগঠকেরা মঞ্চ ও দর্শকাসনে হাতে-হাতে কয়েকটি টর্চ তুলে দিয়েছিলেন। তার আলোকবর্তিকা তুলে ধরে রবীন্দ্রনাথের গান অনুরণিত হল বুকে-বুকে।
রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলছিলেন, মনীষা-যুবির মতো লড়াকুরাই দুনিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁদের পাশাপাশি আরও অনেক যোদ্ধাকেও কিন্তু দেখল এই সান্ধ্য আসর। স্তন ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা অসমের প্রতীতি বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষ মাইক টেনে নিয়ে বললেন, “দোহাই, ক্যানসার হলে বাবাজিদের ভরসায় না-থেকে ঠিক সময়ে ডাক্তার দেখাবেন।” আর এক ক্যানসার-জয়ী রিনা সিংহের কথায়, “ক্যানসার শেষ নয়। জীবনকে নতুন চোখে দেখার শুরুয়াত!”
মনীষা তো আগেই বলছিলেন, “শরীর-স্বাস্থ্যকে এক সময়ে ঠুনকো ভেবে ভুল করেছি। ক্যানসার চোখ খুলে দিয়েছে। আপনারা আমার ভুল করবেন না।” অভিজাত কারুকাজের ঢলঢলে আনারকলি সালোয়ার-কুর্তার সাজে মনীষার বয়স ১০ বছর কমে গিয়েছে বলে শংসাপত্র দিলেন যুবি। শরীরে পুরনো রোগের চিহ্নবিহীন সুঠাম যুবা তার পরেই প্রায় মিনতি করে উঠলেন, “দয়া করে মনীষাকে আমার মতো ‘কামব্যাক কবে হবে’ বলে জ্বালিয়ে মারবেন না! ঠিক সময়ে মনীষাও ফিল্মে ফিরবে।” অনুষ্ঠানের পর যুবরাজ তাঁর আত্মজীবনীর এক কপি উপহার দিয়েছেন মনীষাকে। মনীষা যে বলেছিলেন, বইটা তিনি পড়তে চান!
আমরা পেরেছি, পারবে তোমরাও। কলকাতায় এসে বার্তা দিলেন যুবরাজ-মনীষা।
মাঝে নিশি লোহারুকা, ক্যানসারের সঙ্গে যাঁর লড়াই চলছে মাস ছয় ধরে।
মঞ্চে অন্যতম আয়োজক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও। —নিজস্ব চিত্র।
দুই তারকার মায়েদের নামেও হাততালি পড়ল এ দিনের আসরে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও তাঁর অগ্রজপ্রতিম বন্ধু সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দু’টি সংস্থার আয়োজনে এমন সন্ধে কিন্তু শুধু ক্যানসার রোগীদের জন্য নয়, সার্বিক ভাবে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই নিয়েও একটা বার্তা ছড়িয়ে দিল। সেই বার্তা হল নির্ভীকতার।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, শৈবাল মুখোপাধ্যায়, সৈকত গুপ্তদের মতো চিকিৎসকদের মতে, সময়ে ধরা পড়লে শতকরা ৭৫ ভাগ ক্যানসারই সেরে যায়। তাই সচেতনতা জরুরি। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে সহায়তা করে একটি হাসপাতাল-গোষ্ঠী। তাদের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা রূপালি বসু বললেন, “ক্যানসার মৃত্যু পরোয়ানা নয়। ডায়াবিটিস, রক্তচাপ, কিডনির ব্যামোর মতোই একটি কঠিন রোগ। যার মোকাবিলার কিছু কসরত আছে। এ ভাবে ভাবুন।”
যুবরাজের ‘ইউ উই ক্যান ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে ৬০ হাজার রোগীর চিকিৎসা করছেন। মনীষার চিকিৎসক জগৎ নারুলার সঙ্গে তাঁর গড়ে তোলা মঞ্চ ‘বি ম্যাড’-ও মাঠে নেমেছে একই লক্ষ্যে।
ভয় নয়, এ বার জয় করার পালা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.