|
|
|
|
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ
|
ক্যানসারে মরিনি আমরা
মারি নিয়ে ঘর করি
ক্যানসার বিরোধী লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় দুই আইকন একসঙ্গে আবির্ভূত হচ্ছেন কলকাতার
মঞ্চে।
যুবরাজ আর মনীষা। অক্টোবরের প্রথম দিবসে। খবর পেলেন গৌতম ভট্টাচার্য |
মৃত্যুঞ্জয়ী।
মৃত্যুঞ্জয়ী।
এক বিশেষণ দু’জনের সম্পর্কে গত এক বছরে ব্যবহার হয়েছে বারবার। দু’জনেরই যে ক্যানসার। একজনের ওভারিয়ান। আরেক জনের জার্ম সেল। দু’জনকেই এক ডাকে ভারতবর্ষ চেনে। দু’জনেই চূড়ান্ত নৈরাশ্যের মুহূর্ত এবং যাকে বলে খাদের কিনার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যোদ্ধা।
ক্যানসার বিরোধী লড়াইয়ে আইকনসদৃশ সেই মনীষা কৈরালা আর যুবরাজ সিংহ অবশেষে এক মঞ্চের তলায় এসে দাঁড়াচ্ছেন! আর সেটা কিনা ঘটছে শহর কলকাতাতেই।
|
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
শ’খানেক ক্যানসার রুগির সামনে। অসুস্থতার সময় যুবরাজ-মনীষা হালকা যোগাযোগ ছিল এসএমএসের মাধ্যমে। দু’জনেই চিকিৎসারত ছিলেন আমেরিকায়। মনীষা নিউ ইয়র্কে। যুবরাজ কয়েক ঘণ্টা মোটর দূরত্বের বস্টন ক্যানসার রিসার্চ ইন্সটিটিউটে। কিন্তু তাঁদের গভীর কোনও অন্তরঙ্গতা কখনওই তৈরি হয়নি। অনুপ্রেরণামূলক কোনও অনুষ্ঠানেও কখনও দু’জনে একসঙ্গে হননি। অথচ মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে আগামী পয়লা অক্টোবর সেটাই হতে যাচ্ছে।
“ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুবরাজের কাছে স্রেফ একটা ফোন কলই যথেষ্ট। যখন যেখানে সম্ভব, এই যুদ্ধ করতে ও চলে যেতে রাজি থাকে,” বললেন যুবরাজের মুখপাত্র। জানা গেল, মনীষা একদিন যুবরাজকে ফোনও করেছিলেন তাঁর ডায়েট চার্টটা জানার জন্য। ক্রিকেট মাঠে ক্যামব্যাক করার পর, যুবিও একদিন ফোন করে মনীষাকে উৎসাহ দেন। কিন্তু এক মঞ্চে দু’জনের কখনও দেখা হয়নি।
“আমার মেজো মাসি মারা যান ব্রেস্ট ক্যানসারে। নাম ছিল অনিতা গুপ্ত। ক্যানসার নিয়েও উনি প্রচণ্ড লড়াই করে গেছিলেন। একটা ব্রেস্ট বাদ যাওয়ার পরেও উনি অদম্য উৎসাহে ছবি আঁকতেন। গান শিখতেন। আমার আর এক বন্ধু আছে পিটস্বার্গে। সে-ও ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে স্টেজে নাচছে। আমাদের অনুষ্ঠানে সেই স্পিরিটটাকেই সম্মান জানাতে চাই,” বললেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। যুগ্ম ক্যানসারজয়ী নিয়ে কলকাতার অভুতপূর্ব অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ঋতুপর্ণা। তাঁর সংস্থা ‘ভাবনা আজ ও কাল’-য়ের সঙ্গে থাকছে ইলিউশনস্ এনজিও এবং কর্পোরেট জগতের সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
ঋতুপর্ণা ভাবছেন অনুষ্ঠানের থিম করবেন ‘ক্যানসার তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করব না’।
|
|
আর এই থিমের জন্য যুবরাজ-মনীষার চেয়ে আদর্শ আর কে আছেন। মনীষা প্রথম অনুরোধেই কলকাতায় এমন অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হয়ে যান। ঋতু তাঁর বহু দিনের বন্ধু। নিউ ইয়র্কে সঙ্কটজনক শারীরিক অবস্থার মধ্যে ঋতু দেখেও এসেছিলেন মনীষাকে। যুবরাজকে কলকাতার অসংখ্য পুজো কমিটি এ বার উদ্বোধন করানোর জন্য চেষ্টাচরিত্র করছেন। যুবি রাজি হননি। কিন্তু কলকাতার অনুষ্ঠানের জন্য ফোন পেয়ে প্রথমেই বলে দেন, “বোর্ড যদি আপত্তি না-করে। কোনও খেলা যদি না-থাকে। অবশ্যই আসছি।” পরে লিখিত সম্মতি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কলকাতার বিশিষ্ট কিছু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকবেন অনুষ্ঠানে। তাঁদেরই একজন ডা. সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “শুধু তো ক্যানসার রুগিরা নন। মনীষা-যুবি এক মঞ্চে এলে উপকৃত হবে গোটা সমাজ। ওঁরা শুধু আইকনই নন, এমন একটা জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত যে, ক্যানসার আক্রান্ত হলেও দিব্যি জীবনে থাকা যায়।” ডা. চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, সব চেয়ে উপকৃত হবে তরুণরা। কমবয়সে ক্যানসার হলেও সংকোচে ডাক্তারের কাছে অনেকে আসতে চান না। ওই দু’জনকে সামনে থেকে দেখলে, এঁরা বুঝবেন ক্যানসারের পরেও মুক্ত জীবন থাকতে পারে। তাই লজ্জা না-করে ডাক্তার দেখিয়ে আসি। অঙ্কোলজিস্ট ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমরা বললেও অনেক সময় রুগিরা শুনতে চান না। তাঁদের মনে রেখাপাত করানো যায় না। এঁরা এলে দুর্ধর্ষ ইমপ্যাক্ট হবে। মনীষা থাকায় মেয়েরা অনেক বেশি একাত্মতা বোধ করতে পারবেন। আর যুবরাজ তো রোল মডেল হিসেবে সব চেয়ে বেশি সাহস দিতে পারেন। তরুণরা, যাঁদের ক্যানসার হয়েছে, দ্রুত কাজে ফিরতে চান, তাঁরা যুবরাজকে দেখে বুঝবেন ক্যানসারকে হারিয়েও আবার জেতা যায়। সেটা কিন্তু মনীষা এখনও করেননি। রোগ সারিয়ে উঠেও ওঁর বলিউডে ফেরত যাওয়া হয়নি।” দুই চিকিৎসক একমত, এমন ক্যানসার বিরোধী দৃষ্টান্তরা হাজির হলে তাঁদের পেছন পেছন হাজির হবে জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা।
অসম্ভব মানসিক জোর পাবে গোটা বাংলার ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষ। বিশেষ করে যাঁদের রোগ টার্মিনাল পর্যায়ে পৌঁছয়নি। অবশ্য অনুষ্ঠানের থিম-ই তো তাই।
ক্যানসার তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করব না।
|
মনীষা-যুবি শুধু আইকনই নন, এমন একটা জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত যে, ক্যানসার আক্রান্ত হলেও দিব্যি জীবনে থাকা যায়
ডা. সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|
|