পুজোর ফ্যাশন? কাম অন...
মাদের ছোটবেলায় জামাকাপড় কেনা মানে ছিল মোটে তিনটে সুযোগ। জন্মদিন, পয়লা বৈশাখ আর দুর্গাপুজো।
আর এখন, বাঙালির ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’। ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার্স, ভ্যালেনটাইন্স ডে, রোজ ডে, ফ্রেন্ডশিপ ডে...। পোশাক কেনারও তাই তেরোটা সুযোগ।
ভাবলে বেশ মজাই লাগে।
আসানসোলের মতো মফস্সল শহরে, আমি যেখানে বড় হয়েছি, জামা-কাপড় কেনার কোনও অপশন ছিল না। রেডিমেড পোশাক মানেই সস্তা, লো গ্রেড। তাই মায়ের হাত ধরে রেকস্ টেলরে যাওয়া। টেলর মাস্টারের ঝুরঝুরে হয়ে যাওয়া ‘ইউরোপিয়ান ফ্যাশন বুক’ থেকে ডিজাইন পছন্দ করে দেওয়া।
এখন টেলর মাস্টার নেই, ঝুরঝুরে ফ্যাশন বুক নেই। হাজারো অপশন। ক্যাটরিনার ফ্ল্যাপার্ড ড্রেস, দীপিকার স্কার্ট শাড়ি, সোনমের প্যালাজ্জো প্যান্ট শুধু শপার্স স্টপ, প্যান্টালুন্সের তাক থেকে নামিয়ে নেওয়ার অপেক্ষা। শুধু প্যান্ডেল কাঁপালে তো আর হবে না, ৩৬৫ দিনই যেন দেখায় ‘ভোগ’য়ের কভার গার্ল।
পরিবর্তনটা হচ্ছিল একটু একটু করে। এখন কেউ তো আর জন্মদিনে বই উপহার দেয় না বা অ্যানিভার্সারিতে সিডি গিফ্ট র্যাপ করে দেয় না। অনুষ্ঠানের উপহার মানেই এখন ‘ড্রেস’। নিজের জন্যও তো আমরা বারো মাস ধরেই পোশাক কিনি। প্রতি মাসে একটাও ‘ড্রেস’ কিনবে না জেন ওয়াই, তা আবার হয় নাকি?
পোশাক কেনার ব্যাপারেও বেশ সচেতন এঁরা। কখনওই এমন পোশাক কিনবে না যা সারা বছর পরা যায় না। এমন পোশাক কিনবে যা ক্লাবেও পরা যাবে, আবার অফিসেও। ভ্যালেনটাইন্স ডে-র জন্য কেনা লাল গাউন দেখবেন পরে নেবে নবমীর সন্ধ্যায়। বা ফ্রেন্ডশিপ ডে-র জন্য কেনা প্যাস্টেল শ্রাগ পরবে অষ্টমীর বিকেলে। আমাদের সময় এমন কিছু কিনতাম যা পুজোর দিনগুলো ছাড়া পরাই যেত না। ছোটবেলায় মা একবার ধোতি-সালোয়ার কিনে দিয়েছিল। মাধুরী দীক্ষিত আর সঙ্গীতা বিজলানি পরদায় চমৎকার ক্যারি করলেও, আমি পুজোর পরে আর কখনও ওগুলো পরতে পারিনি। হাই-হিলের জুতোও পুজোর চার দিন ফোস্কা ফেলে চিরজীবনের জন্য নির্বাসিত হত জুতোর র্যাকে। এখন স্টিলেটো কেনা মানে, পুজো তো থাকলই, শুক্রবারে অফিসেও পরে চলে যাওয়া যাবে।
শাড়িতে
লা-জবাব দীপিকা
বলিউড ছবির ছোঁয়াও তো সে ভাবে আমাদের মধ্যে আসেনি তখন। হিন্দি ছবি মানে ছিল ‘রিকশাওয়ালা ছাপ’। আর মধ্যবিত্ত বাঙালি হলে তো কথাই নেই। এমনিতেই তাদের প্রধান লক্ষ্য তিনটি ভাল শিক্ষা, ভাল খাবার-দাবার, বেড়াতে যাওয়া। জামাকাপড় মানেই বাজে খরচ, এই মনোভাবটাও এখন পালটে গিয়েছে।
গত বছর একটি মেয়ে ফোন করল আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে। যে দিন দেখা করতে এল, হাতে কোয়েলের একটা সিনেমার স্টিলের প্রিন্টআউট। সিনেমাটার ডিজাইনার আমিই ছিলাম। বলল, কোয়েলের মতো একটা ড্রেস ওকে বানিয়ে দিতে হবে। একদম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি। বানিয়ে দিয়েছিলাম। আসলে বানিয়ে বেশ মজাই পেয়েছিলাম।
১৯৯৭-য়ে যখন ‘অগ্নিমিত্রা পল’ লেবেল চালু করি, আমার ক্রেতার অধিকাংশই ছিল অবাঙালি। আজ ২০১৩-তে তো আমার মনে হয় বাঙালি-অবাঙালি ক্রেতা সমান সমান। বাঙালিরা কখনও কখনও নিজের সাধ্যের কিছুটা বাইরে গিয়েও খরচ করছে পোশাকে। শুধু ‘পোশাক’ই নয়, খরচটা সব ক্ষেত্রেই বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রুমিং, বডি পলিশিং, সল্ট স্পা কত কিছু। বিজ্ঞাপনেও দেখুন না কেমন লোভনীয় সব হাতছানি।
আমার ছোটবেলায় ছিল শুধু পার্লার। একটু জাতের পার্লার মানেই নাম হবে ইভস্। সেখানেই আই ব্রো শেপিং, ফেসিয়াল, থ্রেডিং, ওয়াক্সিং, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হেয়ার কাট। সেই চুল কাটা নিয়ে আবার বিপত্তি কম না। পুজোর কমপক্ষে দু ’মাস আগে কাটাতেই হবে চুল। দু’মাসে চুল সেট হয়ে গেলে তবেই প্যান্ডেলসুন্দরীর দৌড়ে থাকা যাবে। আমাদের তবু এত কিছু ছিল! মায়ের তো তা-ও না। পার্লারে আই ব্রো করাচ্ছে মা, কল্পনাও করতে পারি না।
আগে যাঁরা সকালে পাড়ার দোকান থেকে পাউরুটি আনতে নাইটির ওপর ওড়নাটা জড়িয়ে নিয়েই চলে যেতেন, তাঁরাই আজ তোলা শাড়ি পরে পাড়ার দোকানে যান। এই ‘মাস কনসাসনেস’টা হতে পারে সিরিয়ালের প্রভাব, যেখানে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ও ঠোঁটে থাকে ভারমলিন লিপস্টিক। তাই, এক মাস আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না-করালে জায়গা পাবেন না কোনও ভদ্রস্থ পার্লারে।
ছেলেরাও কিন্তু সমানে টক্কর দিয়ে যাচ্ছে। বুশ শার্ট আর লোকাল দর্জি দিয়ে বানানো প্যান্ট ছেলেদের পুজোর এই কনসেপ্ট এখন ডায়নোসরের থেকেও প্রাচীন। ছেলেরা এখন মধুবনী পেন্টিং করা ধুতি, ইক্কতের কুর্তিতে ম্যাডক্স স্কোয়ারে বসে যাচ্ছে আড্ডায়। মেক আপ ব্যবহারেও কম যাচ্ছে না। আর ওই যে বলছিলাম, স্যালোতে যাওয়া। সেখানেও ভিড়। কেউ পেডিকিওর করাচ্ছে, তো কেউ ম্যানিকিওর, কেউ সল্ট স্পা। আর এগুলো কিন্তু শুধু দুর্গাপুজোর জন্য নয়। সারা বছর ধরে।
তার মানে কি পুজোর ফ্যাশন বলে আর কিছু নেই? আছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সিনেমায় যে ট্রেন্ড থাকবে, সেটাই পুজোর ফ্যাশন। এ বছর যেমন পাকিস্তানি কুর্তা, আনারকলি কামিজ, জাম্পস্যুট আর কলমকারি চুড়িদার। পুজোর কথা ভেবে না-ই বা হল, ট্রেন্ড মনে করেই নয় কিনে নিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.