অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার তাগিদ অনেক দিনের। প্রশ্নের আদল বদলে নম্বরের দৌড়ে নিজেদের পড়ুয়াদের এগিয়ে দিতে এ বার ব্যবস্থা নিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
স্নাতক স্তরে ভর্তির সময় নম্বরের বিচারে প্রতি বারেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের পিছনে ফেলে দেন আইএসসি, সিবিএসই বোর্ডের ছেলেমেয়েরা। কী ভাবে এর সমাধান করা যায়, তা নিয়ে সংসদ ভাবনাচিন্তা করছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।
এ বছর একাদশে চালু হওয়ানতুন পাঠ্যক্রমের ব্যাপারে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে সোমবার থেকে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে সংসদ। সেখানে আলোচনার পরে সংসদ-সভাপতি মহুয়া দাস মঙ্গলবার জানান, এ বার প্রশ্নপত্রের ৫০ শতাংশে থাকবে এক নম্বরের প্রশ্ন। তার মধ্যে থাকবে মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ)-সহ নানা ধরনের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন। বর্ণনামূলক প্রশ্নও ছোট ছোট ভাগে ভেঙে দেওয়া হবে। যাতে নম্বর তোলা সহজ হয় এবং অন্যান্য বোর্ডের ছেলেমেয়েদের থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে না-পড়েন, সেই জন্যই এই উদ্যোগ।
উচ্চ মাধ্যমিকের ছেলেমেয়েদের নম্বরের দৌড়ে এগিয়ে রাখার জন্য ছোট প্রশ্নের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন সংসদের আগের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। সেই অনুযায়ী প্রশ্নের ধরন কিছুটা বদলানোও হয় এবং প্রায় সব বিষয়েই প্রজেক্টের কাজ বাধ্যতামূলক করা হয়।
বর্তমান সভাপতি বলেন, “রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, প্রাণিবিজ্ঞান, অঙ্কের মতো বিজ্ঞানের বিষয়ে ৩০ নম্বরের এবং অন্যান্য বিষয়ে ২০ নম্বরের প্রজেক্ট থাকবে। বিজ্ঞানের লেখা পরীক্ষায় ৩৫ আর বাকিগুলিতে ৪০ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন রাখা হবে।” সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মধ্যে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ২১ নম্বর আর অন্য বিষয়ে ২৪ নম্বরের এমসিকিউ থাকবে বলে জানান তিনি। বর্ণনামূলক প্রশ্নে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর থাকবে। বাংলা, ইংরেজির মতো সাহিত্যের বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়গুলিতে এই প্রশ্নও দুই বা তিন নম্বরের ছোট ছোট ভাগে ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানান মহুয়াদেবী।
এই উদ্যোগের কারণ হিসেবে অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে সমতা বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। তবে আইসিএসই, সিবিএসই-তে এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্ন দেওয়া হয় না। এক নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের সংখ্যাও সেখানে অনেক কম। বড়জোর ১০। শিক্ষাবিদ মর্মর মুখোপাধ্যায় প্রশ্নপত্রে বেশি সংখ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন রাখার উদ্যোগকে স্বাগতই জানিয়েছেন। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া এমসিকিউ চালু করার পক্ষপাতী নন তিনি। তাঁর কথায়, “এমসিকিউয়ের দর্শনটা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাল ভাবে বুঝতে হবে। তা না-হলে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নে খামতি থেকে যাবে।”
আবার সংসদের দুই প্রাক্তন কর্তা তথা শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত দুই প্রবীণ আধিকারিক এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন না। এঁদের এক জনের কথায়, “এমসিকিউ প্রশ্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সঙ্গত। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নে এর কোনও প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে না।” অন্য এক কর্তা বলেন, “অনেক সময় নেট পরীক্ষায় এমসিকিউয়ের উত্তরে অসঙ্গতি দেখা যায়। ইউজিসি-র মতো সর্বভারতীয় সংস্থা পরিচালিত নেট-এই যদি তা হয়, এখানে সেটা হবে না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। পরীক্ষার হলে এই ধরনের অসঙ্গতি ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্তি বাড়াবে।” সংসদের উদ্যোগ সম্বন্ধে শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে তাদের দাবি, প্রশ্নের ধরন বদলের ফলে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নের পদ্ধতিটা যেন অতিরিক্ত সরল হয়ে না-যায়, সেটা দেখতে হবে।
সংসদ অবশ্য জানিয়েছে, সব দিক বিচার করে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই প্রশ্নের আদল বদলানোর এই সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংসদের অন্যতম পরামর্শদাতা, রাজ্য সরকারের পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, “বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকে। সেই ধাঁচটার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের পরিচিত করানোর জন্যই একাদশ শ্রেণি থেকে এই ধরনের প্রশ্ন রাখা হচ্ছে।” এই ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা, সেই ছাত্রছাত্রীদের কোনও সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে সংসদ। |