প্রথম বছরেই কলা চাষ করে পঁচানব্বই শতাংশ সাফল্য পেয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের চাষিরা। এ বার তাই জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে কলার সঙ্গেই আম, জামরুল, লেবু, পেয়ারার বাগান তৈরির প্রকল্পকে ওই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
নিজের জেলার ২৬টি ব্লকে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে তাই তৎপর হয়েছেন উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা। বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। মন্ত্রী বলেন, “প্রথম বছরের সাফল্যে উৎসাহিত চাষিরা। গত বছর কলা চাষের উদ্যোগ ছিল ১২টি ব্লকে। এ বার ২৬টি ব্লকের সব ক’টিতেই ফল চাষকে একশো দিনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরে অন্য জেলাতেও একই ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
এই প্রকল্পে যে সব চাষির ৫ কাঠা জমি রয়েছে, সেখানেই তাঁরা কলা, পেয়ারা, আম, লেবু-সহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করতে পারবেন। বাগানের জন্য গাছ দেবে উদ্যান পালন দফতর। আর যিনি বাগান করবেন তাঁকেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গাছ লাগানো থেকে শুরু করে বাগানের তদারকির জন্য ৬০ দিনের মজুরি বাবদ অর্থ দেওয়া হবে। তৈরি হওয়া বাগান থেকে যাবতীয় আয় বাগান মালিকই পাবেন।
মুর্শিদাবাদের সহ-উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “গত বছর জেলায় ৫১২৪ জনের আবেদন করেছিলেন। এই সাফল্যকে ধরেই এবারে কলা ছাড়াও পেয়ারা, আম, লেবু ইত্যাদি ফলের ২৫ হাজার বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এই প্রকল্পটি বর্তমানে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান উন্নয়ন কর্পোরেশন। মন্ত্রী সুব্রতবাবুই তার চেয়ারম্যান। ওই প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার সুব্রত বসু বলেন, “জেলায় এ বার ২৫ হাজার বাগান তৈরি হবে যাঁদের ৫ কাঠা করে জমি রয়েছে তাঁদের জন্য। যাঁদের জমি নেই অথচ উৎসাহ রয়েছে, তাঁদের জন্যও গোষ্ঠীভিত্তিক বাগান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে এলাকার স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীগুলিকে। তাঁরা রাজ্য ও গ্রামীণ সড়ক পথের দু’ধারে ফলের গাছ লাগাবেন। তাঁদের দেওয়া হবে জামরুল, তেঁতুল, কাঁঠাল, আম ইত্যাদি গাছ। প্রতিটি মহিলা গোষ্ঠী এক মাইল এলাকা জুড়ে রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগাবেন। সেই গাছ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ওই মহিলা গোষ্ঠীরা তো পাবেনই, দেওয়া হবে ৯২ দিনের মজুরির টাকা ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে।”
উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের এই মেলবন্ধনকে একটি ‘অনন্য নজির’ বলে মনে করছেন কর্মনিশ্চিত প্রকল্পের জেলা আধিকারিক কৌশিক সরকার। তিনি বলেন, “জেলায় ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে মেয়েরা। মাত্র ১৬ শতাংশ মহিলা কাজ পেয়েছেন। এই বাগান প্রকল্পে মেয়েদের কাজ দেওয়া গেলে ১৫ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হবে মহিলাদের। সড়কের দু’পাশে গাছ থাকলে রাস্তার ভাঙনও এড়ানো যাবে।”
শুভদীপবাবু বলেন, “মুর্শিদাবাদের সর্বত্রই কলা থেকে আম সব ফলেরই যথেষ্ট চাহিদা ও বাজার রয়েছে। গত বছরে যাঁরা কলা ফলিয়েছেন ইতিমধ্যেই বাজারে তা বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্লকের বিডিও-রা প্রকল্প রূপায়ণে উৎসাহ দেখিয়েছেন।”
বেলডাঙা-১ ব্লকের রামেশ্বরপুর গ্রামের নাসিম আলির কথায়, “১০৫টি কলাগাছের মধ্যে ৯০টি বেঁচে রয়েছে। ইতিমধ্যে বড় কাঁদি ধরেছে ৬৫টিতে।” হরিহরপাড়া ব্লকের মসুরডাঙা গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, “১০০টি কলাগাছের মধ্যে ৮০টি বেঁচে আছে।”
|