অমানবিকতার উদাহরণ এমনও যে হতে পারে, তা জেনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো বিস্মিত। আহতও। ক্যানসারে আক্রান্ত তরুণীকে ছেড়ে স্বামী, শ্বশুর-সহ সকলেই পিঠটান দিয়েছেন। রোগাক্রান্ত শরীরে দেবশ্রী দেবকে ডোমজুড় থেকে এসে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
মঙ্গলবার মামলাটি হাইকোর্টে ওঠে। কিন্তু দেবশ্রী এতটাই অসুস্থ যে, এ দিন আদালতে হাজির হতে পারেননি। বিচারপতি নির্দেশ দেন, পণের এক লক্ষ টাকা, গয়না-সহ সব নিয়ে ৮ অক্টোবর তরুণীর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে হাইকোর্টে হাজির হতে হবে। সে-দিনই অমানবিক আচরণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বিচারপতি।
দেবশ্রী তাঁর আবেদনে জানান, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ দেবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। বিয়ের আগে তিনি চাকরি করতেন। কিন্তু বিয়ের পরেই তাঁকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করানো হয়। স্বামীর কর্মস্থল ছিল রাজস্থানে। প্রথম দিকে দেবশ্রী শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। পরে স্বামী তাঁকে রাজস্থানে নিয়ে যান। সেখানে নানা ভাবে তাঁর উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালানো হতে থাকে। এমনকী গাড়ি চাপা দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলারও চেষ্টা হয়েছিল বলে দেবশ্রী অভিযোগ করেছেন। তার পরে তিনি হুগলির বলাগড়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানেও অত্যাচার চলতে থাকায় বাধ্য হয়ে হাওড়ার ডোমজুড়ে বাপের বাড়িতে চলে যান।
২০১২ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে দেবশ্রীর। তাঁর বাপের বাড়ির তরফে সেই খবর জানানো হয় শ্বশুরবাড়িতে। তার পর থেকেই একক লড়াই চলছে দেবশ্রীর। ওই তরুণী বধূর অভিযোগ, এক দিনের জন্যও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কোনও খবর নেননি। এমনকী তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানানোর পরে স্বামীর দিক থেকেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে ওই তরুণী আদালতে নিজের আবেদনে অভিযোগ করেছেন। এই অবস্থায় চিকিৎসা চালানোই কঠিন হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই স্বামী বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রস্তাব পাঠান। দেবশ্রী সেই প্রস্তাব মানেননি। আর কোনও পথ না-পেয়ে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার ও অবহেলা আর মারণ রোগের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন ওই গৃহবধূ।
এ দিন শুনানির সময় দেবশ্রীর আইনজীবী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ, বনিবনার অভাব, বিবাহ-বিচ্ছেদ, স্ত্রীর উপরে অত্যাচার ইত্যাদি নিয়ে অনেক মামলা হয়। কিন্তু এমন অমানবিক ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। তিনি আদালতে প্রশ্ন তোলেন, শ্বশুর-শাশুড়ি তো মুখ ঘুরিয়েই নিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীর এমন বিপন্ন অবস্থায় স্বামীরও এতটুকু সমবেদনা থাকবে না কেন?
বিচারপতি বলেন, “এমন ঘটনায় সত্যিই বিস্মিত হতে হয়।” তিনি জানিয়ে দেন, ৮ অক্টোবর দেবশ্রী আদালতে হাজির থাকবেন। থাকতে হবে তাঁর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকেও। পণ হিসেবে নেওয়া এক লক্ষ টাকা এবং বিয়েতে পাওয়া দেবশ্রীর গয়না এবং অন্য উপহার সামগ্রী সব ফেরত দিতে হবে ওই দিন। |