হরিজন পল্লির পুজোয় সামিল ত্রিপুরা
স্পৃশ্যতার তকমা দিয়ে তাঁদের সমাজের এক কোণে সরিয়ে রেখেছিলেন তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষ। এখন তাঁদেরই শারদোত্‌সবে সামিল সবাই। ত্রিপুরার হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের এলাকায় দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল রাজ-আমলেই। প্রথম পুজো হয়েছিল টাউন ইন্দ্রনগরের হরিজন কলোনিতে। রাজা বীরবিক্রম মানিক্যের আর্থিক সহায়তায়। ওই পুজো কমিটির সদস্য, স্কুলশিক্ষক রাজেন্দ্র বাস্ফর জানান, ১৯৪০ সাল নাগাদ কলোনিতে পুজো শুরু হয়। এখন তার পরিধি অনেকটাই বেড়েছে।
ইতিহাসের নথি জানায়, হরিজন সম্প্রদায়ভুক্ত কয়েক জনকে সাফাই কর্মী হিসেবে নিয়োগ করেছিল ত্রিপুরার রাজপরিবার। সমাজের ছুঁত্‌মার্গের হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করতে রাজা বীরবিক্রম মানিক্য বাহাদুর হরিজন পরিবারগুলিকে আস্তাবল ময়দান-সংলগ্ন এলাকায় বসবাসের জায়গা দেন। শহর সম্প্রসারণের সময়ে মহারাজের উদ্যোগে তাঁদের জন্য টাউন ইন্দ্রনগরে কাঁচা ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়।
রাজ-কোষাগারের টাকায় হরিজন পল্লিতে যে পুজো শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে। রাজ আমলে হরিজনদের পুজোর মূর্তি গড়েছিলেন হরিকর্তা মহাশয়। হরিজন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষও মূর্তি গড়ার কাজে পিছিয়ে ছিলেন না। ১৯৭৭ সালে হরিজন বাবুল বাস্ফর নিজেই দুর্গামূর্তি গড়ে মৃত্‌শিল্পী হিসেবে পরিচিত হন।
বর্তমানে হরিজন পরিবারগুলির শাখাপ্রশাখা বেড়েছে। সকলের ঘরের জায়গা হয়নি ইন্দ্রনগরে। রাজ্য সরকারের সাহায্যে আরও কয়েকটি হরিজন পল্লি গড়ে উঠেছে আগরতলায়। সে গুলির মধ্যে রয়েছে বড়জলার আদর্শ হরিজন কলোনি, কালিকাপুরের হরিজন কলোনি, জিবি ৭৯ টিলা হরিজন পল্লি, আইজিমএম হরিজন পল্লি। প্রত্যেকটিতেই দুর্গাপুজো হয়। কালিকাপুরে ভগত্‌ সিংহ হরিজন কলোনিতে পুজো হচ্ছে ৩০-৩২ বছর ধরে। পল্লির বাসিন্দা সীতা হরিজন বলেন, ‘‘কম বাজেটের পুজো। কিন্তু আশপাশের বহু মানুষই সামিল হন।’’
শহরের আইজিএম সরকারি হাসপাতালের কাছে হরিজন কলোনি সামাজিক সংস্থার পুজোতেও আসেন অনেকেই। বড়জলার আদর্শ হরিজন কলোনিতে সাবেকি দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। জিবি ৭৯ টিলার হরিজন পল্লির পুজোর আয়োজন স্বল্প হলেও, উত্‌সাহ-আনন্দের ঘাটতি নেই।
আগরতলা শহর এবং শহরতলির সমস্ত হরিজন পুজোতে আর্থিক সাহায্য দেয় পুর পরিষদ। আগরতলা পুর পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফুল্লজিত্‌ সিনহা বলেন, ‘‘ঐতিহ্য মেনেই এ বারেও তাঁদের পুজোর জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।’’
টাউন ইন্দ্রনগর হরিজন পুজো কমিটির সদস্য রাজেন্দ্র বাস্ফর বলেন, ‘‘সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত, শান্তি গুপ্ত, মুকুল দাশগুপ্ত, নীলমণি মুখোপাধ্যায়-সহ সমাজের উচ্চ বর্ণের মানুষ হিসেবে পরিচিত অনেকেই পুজোর দিনগুলিতে হরিজনদের সঙ্গেও উত্‌সবে সামিল হতেন। তাঁদের সান্নিধ্যে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার প্রেরণা খুঁজে পেয়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা।’’ সেই উত্‌সাহের প্রভাব যে ‘সূদূরপ্রসারী’ ছিলতা আগরতলার হরিজন পল্লিগুলির পুজোতেই স্পষ্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.