সস্তায় মাদক পেতে ভিড় করছেন ভিন্‌দেশি তরুণীরা
জিম্বাবোয়ের বাসিন্দা ৪২ বছরের সেকাই দেবে এখন দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। মহিলা ওয়ার্ডের ভিতরে হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে তাঁকে। শরীরে তাঁর এইচআইভি সংক্রমণ।
গত ১৬ অগস্ট গভীর রাতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সেকাই ধরা পড়েছিলেন ২৩ কেজি মেথাকোয়ালন পাউডার-সহ। সৌভ্রাতৃত্বের রাখী ভর্তি প্যাকেটে লুকোনো ছিল সেই মাদক। বিদেশে সিগারেটের সঙ্গে মিশিয়ে সেই মাদক সেবন করা হয়।
সেকাই একা নন। তাঁর মতো ভারতের মাটিতে ইদানীং ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমন অনেক মহিলা। সম্প্রতি এমন তিন তরুণীর কথা জেনেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ওই তরুণীদের সঙ্গে রয়েছেন এক যুবকও। এই মূহূর্তে তাঁরা দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-কলকাতা বা দেশের অন্য কোনও প্রান্তে আছেন। কেউ কাউকে চেনেন না। কিন্তু খবর এসেছে, সেকাই-এর মতো তাঁরাও ভারত থেকে নেশার পাউডার লুকিয়ে নিয়ে যেতে চান বিদেশে। চার জনই দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দা। তাঁদের পাসপোর্ট নম্বর জোগাড় করেছেন গোয়েন্দারা।
ভারতে এখন ওষুধ সংস্থার রমরমা। নিয়মিত প্রচুর ওষুধ তৈরি হচ্ছে। তার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এফিড্রিন বা মেথাকোয়ালন-এর মতো পাউডার। ঘুরপথে তা পৌঁছে যাচ্ছে সেকাই-দের হাতে। ভারতের বাজারে যার এক কিলোগ্রামের দাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, সেই পাউডারই বিদেশে বিকোচ্ছে লক্ষাধিক টাকায়। ফলে, দক্ষিণ আফ্রিকা-নাইজেরিয়া-কেনিয়া-উগান্ডা-জিম্বাবোয়ে থেকে বিমানের ভাড়া গুনে ভারতে এসে হোটেল-খরচ মিটিয়েও মুনাফা রয়ে যাচ্ছে বিস্তর।
সেকাই-দের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে সেই সব দেশের পুলিশের সঙ্গে। এনসিবি-র পূর্ব ভারতের অধিকর্তা সুব্রত বিশ্বাস জানান, সেকাই-এর দাবি অনুযায়ী দিল্লিতে এক নাইজেরীয় যুবক তাঁর হাতে ওই প্যাকেট তুলে দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন না ওই প্যাকেটে মাদক আছে। দিল্লি পুলিশের সাহায্যেও কোনও নাইজেরীয় যুবককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে তদন্তে জানা গিয়েছে, এর আগে দু’বার ভারতে এসেছিলেন সেকাই। প্রথম বার দিল্লি বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয় তাঁকে। ভারতে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া ছিল না তাঁর। কয়েক দিন বিমানবন্দরে কাটিয়ে তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হয়।
দ্বিতীয় বার মুম্বই বিমানবন্দর দিয়ে ভারতে ঢোকেন সেকাই। সে বার অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের চোখে ধুলো দিয়ে প্রচুর চুলের ক্লিপ নিয়ে ফিরে যান। সুব্রতবাবুর কথায়, “আমরা জেনেছি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেকেই চুলের ক্লিপের মধ্যে মাদক পাচার করছেন।” ফলে সেকাই যে মাদক পাচারে যুক্ত, তা কার্যত নিশ্চিত হয়ে যান গোয়েন্দারা।
এ বার সেকাই সম্পর্কে আগেই খবর ছিল এনসিবি-র কাছে। কলকাতা থেকে দোহা-নাইরোবি ঘুরে বোট্‌সওয়ানায় নামার কথা ছিল তাঁর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানকার গ্যাবোরন বিমানবন্দরে কনভেয়ার বেল্ট-এর উপরে মাদক ভর্তি প্যাকেট রেখে ট্যাক্সি নিয়ে জোহানেসবার্গ চলে যেতেন সেকাই। ফলে তাঁকে আটকাতে পারত না সেখানকার পুলিশ। তাঁর দলের অন্য কেউ সেই প্যাকেট নিয়ে নিতেন বিমানবন্দর থেকে।
সুব্রতবাবু জানান, এ বার আরও দুই মহিলার নাম তাঁরা জেনেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার থোলা কেলে (৩৮) সেকাই ধরা পড়তেই সজাগ হয়ে যান। কলকাতা থেকে ২০ অগস্ট একই রুটে মাদক নিয়ে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কাতার বিমানসংস্থার উড়ানে যাত্রী তালিকায় তাঁর নামও ছিল। কিন্তু, বিপদের গন্ধ পেয়ে তিনি পালিয়ে যান দিল্লি। যেহেতু তাঁর পাসপোর্ট নম্বর অভিবাসন দফতর পেয়ে গিয়েছিল, তিনি দিল্লিতে নিজের দেশের দূতাবাসে গিয়ে বলেন, পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছে। তাই অন্য নম্বরের অস্থায়ী পাসপোর্ট বার করে কোচি বিমানবন্দর থেকে পালান বিদেশে। সঙ্গে ছিল ৩১ কেজি এফিড্রিন পাউডার। কিন্তু, ততক্ষণে সেই খবর এনসিবি মারফত পেয়ে যায় বোট্‌সওয়ানার পুলিশ। থোলা ধরা পড়েন গ্যাবোরন বিমানবন্দরে।
সেকাইয়ের দলের আর এক মহিলা বানজি ফিকিলে-ও দক্ষিণ আফ্রিকার। তিনিও থোলা-র মতো বিপদের আঁচ পেয়ে পালিয়ে যান। তাঁকে জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে আটকায় পুলিশ। তবে তাঁর সঙ্গে কোনও মাদক ছিল না। পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি গ্যাবোরন বিমানবন্দরে মাদক নামিয়ে দিয়ে চলে যান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.