জঙ্গি ব্যূহেও দুর্নীতির ঘুণ,
বুলেট পাচার
স্ত্র নিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীতে কারচুপি নতুন নয়। সেই দুর্নীতির হাওয়া এ বার লেগেছে কিছু জঙ্গি সংগঠনের গায়েও। এবং সেই দুর্নীতির হদিস পেয়েছে পুলিশই!
পুলিশ বা কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে অনেক সময়েই অভিযোগ ওঠে, প্রশিক্ষণের সময় যত রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে বলে খাতায়-কলমে দেখানো হয়, বাস্তবে খরচ হয় তার চেয়ে অনেক কম বুলেট। এক শ্রেণির অফিসার ও কর্মী লিখিত হিসেবের বাইরে থাকা অতিরিক্ত সেই সব বুলেট গোপনে জঙ্গি বাহিনীর অস্ত্রাগার থেকে সরিয়ে ফেলেন এবং চড়া দামে বেচে দেন বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে। নাগাল্যান্ডের জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর আইজাক-মুইভা গোষ্ঠীতেও এই ধরনের দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে বলে এক বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ীকে জেরা করে সম্প্রতি জানতে পেরেছে এ রাজ্যের গোয়েন্দা পুলিশ (ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ)।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর মালদহ স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের ৬১০ রাউন্ড বুলেট এবং একে-৪৭ রাইফেলের একটি ম্যাগাজিন-সহ ধরা পড়ে বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা সত্যনারায়ণ সিংহ। তাকে জেরা করেই এনএসসিএন (আইজাক-মুইভা)-এর ওই দুর্নীতির বিষয়টি জানা গিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
আইবি সূত্রের খবর, গত চার বছরে সত্যনারায়ণ এবং তার সঙ্গী অরবিন্দ কুমার কালাশনিকভ ও এসএলআরের মতো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের অন্তত চার হাজার বুলেট নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর থেকে কিনে বিহারে বেশি দামে বিক্রি করেছে।
সব বুলেট ৭.৬২ এমএম ক্যালিবারের। আইনি পথে ওই বুলেট কেনা সম্ভব নয়। জেরায় সত্যনারায়ণ জানিয়েছে, ভিকাটো সেমা নামে এনএসসিএন (আইজাক-মুইভা)-এর এক সক্রিয় সদস্যই ওই সব বুলেট বিক্রি করেছে।
সেমা শুরুতেই সত্যনারায়ণকে জানিয়েছিল, নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে সে তাদের সংগঠনের অস্ত্রাগার থেকে এই সব বুলেট সরিয়েছে।
এনএসসিএন-এর আইজাক-মুইভা গোষ্ঠী এখন শান্তি-আলোচনা চালাচ্ছে। সম্ভবত সেই সুযোগেই সংগঠনের কেউ কেউ এই ভাবে অস্ত্র ও বুলেট গোপনে সরিয়ে বিক্রি করছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ।
আইবি-র এক কর্তা বলেন, “স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের ৭.৬২ বোরের ৫০০ বুলেটের জন্য সেমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হত বলে সত্যনারায়ণ জেরায় জানিয়েছে। বিহারে নিয়ে গিয়ে সেই বুলেট ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বেচত সে।” কী ভাবে বুলেট পাচার হত, তা-ও জানিয়েছে সত্যনারায়ণ। বলেছে, ট্রেনে-বাসে নিয়ে যাওয়ার সময় বুলেট থাকত দু’তিনটি প্লাস্টিকের মোড়কের ভিতরে। তার উপরে থাকত ফয়েল পেপারের মোড়ক।
সত্যনারায়ণের কাছ থেকে একে-৪৭ রাইফেলের যে-ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি দু’টি কার্বন পেপারে জড়ানো ছিল, যাতে মেটাল ডিটেক্টরে ধরা না-পড়ে।
এ বারেও সে মেটাল ডিটেক্টর ও পুলিশি নজরদারির ফাঁক গলে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে চেপে মালদহে নেমে কাটিহার যাওয়ার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু স্টেশনে মোবাইল ফোনে তার কথাবার্তা শুনে এক যাত্রীর সন্দেহ হওয়ায় তিনি পুলিশকে খবর দেন।
সত্যনারায়ণদের কাছে থেকে কারা কিনত ওই সব বুলেট?
গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বিহারের মাওবাদীরা, মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের দল এবং স্থানীয় সমাজবিরোধীরাই ছিল সত্যনারায়ণের খদ্দের।
তার প্রধান সহযোগী, বিহারের খগড়িয়া জেলার পর্বত্তা এলাকার কোলওয়ারার বাসিন্দা অরবিন্দ কুমার এখন ফেরার। সত্যনারায়ণের দাবি, নাগাল্যান্ড থেকে বুলেট এনে তুলে দেওয়া হত অরবিন্দেরই পরিচিত, সত্যনারায়ণের গ্রাম টিনটাঙা দিয়ারার বাসিন্দা মনোজ জায়সবাল ও পবন সিংহের হাতে। তারাও পলাতক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.