অস্ত্র শুধু রক্তপাতের জন্য নয়, আত্মরক্ষা বা অন্যকে রক্ষা করার অন্যতম মাধ্যমও। প্রহরণ বা অস্ত্রের মাধ্যমেই দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করেন। তাই খিদিরপুরের ২৫ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির এ বছরের থিম ‘দশপ্রহরণধারিণী’। এই পুজোর এ বার ৬৯ বছর। দেবী ও তাঁর হাতের অস্ত্রগুলিই মণ্ডপের মূল কাঠামো। মণ্ডপ তৈরি হবে মূর্তির কাঠামোর রূপে। এক উদ্যোক্তা বললেন, “অস্ত্রের মধ্যে দিয়ে সৌন্দর্যের সন্ধানই এ বারের ভাবনা।” এই অঞ্চলেরই অপর একটি পুজো খিদিরপুর নবরাগ। এ বছর তাঁদের ৪৪তম বছর। মণ্ডপ নাটমন্দিরের আদলে। সঙ্গে থাকবে মানানসই সাবেক প্রতিমা।
খিদিরপুর পল্লি শারদীয়ার এক উদ্যোক্তা জানালেন, আমরা দেবীকে ভক্তি নিবেদন করি তাঁর পায়ে অঞ্জলি দিয়ে। তাই আমাদের মণ্ডপ সেজে উঠছে মায়ের চরণ চিহ্নে। স্বর্গ থেকে দেবী যেন মর্ত্যে আসছেন সিঁড়ি বেয়ে নেমে। দেবীর রাজবেশ।
অসুরদের অত্যাচারে দেবতারা যখন প্রায় স্বর্গছাড়া তখন উপায়ান্তর না দেখে তাঁরা সমবেত ভাবে হাজির হন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের কাছে। দেবকুলকে এই চরম বিপদ থেকে রক্ষা করতে এই তিন দেবতার তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে জন্ম নেন অসুরবিনাশিনী দেবী দুর্গা। দেবীর জন্মের এই কাহিনি ফুটে উঠছে হালতুর রামলাল বাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবে।
উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বার ৭৩ বছর। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্মের সার্ধ শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে মূল মণ্ডপের বাইরের অংশে থাকছে তাঁর বিভিন্ন লেখা ও ছবি। থাকছে গুপি-বাঘা থেকে সন্দেশের অলঙ্করণ। মূল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পুরনো রাজবাড়ির আদলে। প্রতিমার রূপ হবে সাবেক।
বেলঘরিয়ার আর্যনগর কিশোর সঙ্ঘের থিম ‘সৃষ্টির অন্তরে’। সূর্যের সাত রং থেকে রঙের সৃষ্টির পাশাপাশি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের তেজরশ্মি থেকে দুর্গার সৃষ্টি বর্ণিল হয়ে উঠছে এখানে। যাদবপুরের নর্থ রোড সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির পুজো পা রাখছে ৩০ বছরে। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে সেখানে। উল্টোডাঙা দাসপাড়ার ৬৮তম বছরের থিম বাঙলার ব্রতকথা। পাইকপাড়া আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বার ৯১ বছর। তাঁদের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে স্থায়ী ভাবে। এক উদ্যোক্তা জানালেন, এখন থেকে প্রতি বছর মণ্ডপ তৈরির সমস্যা থাকবে না। এই মণ্ডপেই পুজো হবে।
বসাকবাগান স্বস্তিক সঙ্ঘ পরিবেশ ভাবনাকে মাথায় রেখে তৈরি করছে নিজেদের মণ্ডপ। বাঁশ, কঞ্চি, মাটির ঢেলা, বিভিন্ন রকমের ফলের বীজ, ও শুকনো পাতার ব্যবহারে একটু একটু করে সেজে উঠছে তাঁদের পুজো। মণ্ডপ হবে পিঁপড়ের বাসার আকারে।
মা তাঁর স্নেহের আঁচলেই সন্তানদের আগলে রাখেন। এ কথা মাথায় রেখে সিঁথি মুন্সির বাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসবের থিম ‘মায়ের আঁচল’। প্রাণী থেকে উদ্ভিদ জগৎ সর্বত্রই সন্তানের জীবনে মায়ের উপস্থিতি মেরুদণ্ডের মতো। মানুষ থেকে পশু সব জীবের ক্ষেত্রেই সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ রং তুলিতে মূর্ত হচ্ছে এই মণ্ডপে। দেবী দুর্গা থাকছেন লাল পাড় সাদা শাড়িতে বাঙালি মায়ের বেশে। তাঁর আঁচল ঘিরে রাখছে গোটা মণ্ডপটি। |