আর দিন দশেক পরেই পুজো। এই সময়ে নিত্য দিনের যানজটে এমনিতেই কাহিল থাকে মহানগর। তার উপরে মঙ্গলবার অফিসটাইমে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তাকে কিছুক্ষণের জন্য থমকে দিল খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কনভয়।
এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ ঘুরে দেখার কথা ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থ-র। সেই মতো সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ পাইলট কার নিয়ে তিনি পৌঁছে যান দক্ষিণ কলকাতার বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের পুজোমণ্ডপে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি হেঁটে যান তালবাগান পুজোমণ্ডপে। এর পরে বিশাল কনভয় নিয়ে পুলিশ কমিশনার চলে যান একডালিয়ায়। সেখান থেকে বেরিয়ে আরও কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে চলে যান উত্তর কলকাতায়।
অভিযোগ উঠেছে, অফিসটাইমে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তার এই ভাবে বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ ঘোরার ফলে সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত ভোগান্তি হয়েছে। সিপি যাবেন বলে বিভিন্ন মোড়ের সিগন্যাল আগে থেকেই সবুজ করে রাখা হয়েছিল। সিপি না যাওয়া পর্যন্ত ক্রসিংগুলি দিয়ে কোনও গাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি। এর ফলে সাধারণ
মানুষকে দীর্ঘক্ষণ বাসে, গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। |
বিপুল যানজটের ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছে অনেকেরই। যেমন, রুবি থেকে দুপুর ১২টায় বাসে উঠে রাসবিহারী মোড় পৌঁছতে এ দিন সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। পুলিশ কমিশনার বোসপুকুর এলাকায় থাকার ফলে ওই সমস্ত এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এমনিতেই পুজোর কেনাকাটার জন্য গড়িয়াহাট মোড়ে ভিড় লেগেই রয়েছে। তার উপরে পুলিশের কনভয় বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে, এমনটাই মত আমজনতার। আবার মহম্মদ আলি পার্কে সিপি-র পরিদর্শনের সময়ে দেখা গিয়েছে, চাঁদনি চক স্টেশনের কাছের গলিগুলিতে গাড়ি ঢুকতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা বাধা দিচ্ছেন। গাড়ির সারি থমকে আছে ধর্মতলার কাছাকাছি অঞ্চলে।
প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিদর্শন কী রাতে বা দুপুরে করা যেত না? লালবাজারের ব্যাখ্যা, দিনের বেলা ব্যস্ত সময়ে ছাড়া পুজো-সংক্রান্ত এই পরিদর্শন সম্ভব নয়। সন্ধ্যায় বা বেশি রাতে মণ্ডপ পরিদর্শনে বেরোলে শহরের কোনও একটি এলাকার সমস্যা পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। প্রতি বার যা হয়ে থাকে, এ বারেও তাই হয়েছে। পুলিশকর্তাদের আরও দাবি, অন্য দিন একেবারে অফিসটাইমের ব্যস্ততম সময়েই এই পরিদর্শন শুরু হয়। বরং এ দিন পুলিশ কমিশনার মন্দিরতলায় নতুন সচিবালয় নবান্নে গিয়েছিলেন বলে কিছু দেরি হয়।
লালবাজার কর্তাদের কথায়, “এ দিন শুধু পুলিশ নয়, দমকল, পূর্ত দফতর, কেএমডিএ, সিইএসসি প্রমুখ সংস্থাগুলিও এক সঙ্গে বের হয়েছিল। তাই ১৪-১৫টা গাড়ির কনভয় ছিল।” কিন্তু এই কনভয়ের জন্য সাধারণ নাগরিকদের চলাফেরা ব্যাহত হবে কেন? পুলিশের দাবি, লালবাজারের কর্তারা সাধারণ মানুষের হয়রানির ব্যাপারে ইদানীং খুবই সজাগ। কিছুক্ষণের জন্য ট্রাফিক আটকে সরকারি কর্তাদের দ্রুত পার করে দিলে ব্যাপারটি আগে-ভাগে মিটে যায়। আমনাগরিকের তাতেই কম ভোগান্তি। তাই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি আমলাদের কনভয় ঠোক্কর খেতে খেতে এগোলে ভোগান্তি বাড়ত বই কমত না।
তবে শুধু এই কনভয়ের জন্যই নয়। শহর জুড়ে এ দিন বিভিন্ন মিছিল, সমাবেশও ছিল বলে জানান লালবাজারের কর্তারা। সেই কারণে যানজট আরও বেড়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।
কর্তারা জানান, এ দিনই ৩৫০০ জনের বিরাট মিছিল রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের খাদ্যভবনের দিকে যায়। বিড়ি শ্রমিকদের সমাবেশ ছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। আবার নেতাজি ইন্ডোরে ‘কন্যাশ্রী’ অনুষ্ঠানের জন্য আসা গাড়িগুলির কারণেও স্ট্র্যান্ড রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। |