পুজোর আগে তামাঘাটা ফের ভাঙনের আতঙ্কে
বৃষ্টি দেখলেই প্রমাদ গোণে তামাঘাটা।
ভাগীরথীর জল বাড়লেই আলগা হতে শুরু করে পাড়ের মাটি। বৃষ্টি শেষে রোদ উঠতেই ফাটল ধরে সেই পাড়ে। তার পরে তা চলে যায় নদীগর্ভে। প্রতি বছরই এই ছবি দেখেন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের তামাঘাটার বাসিন্দারা। এ বারও বৃষ্টি শেষ হলেই সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে, আশঙ্কা তাঁদের। পুজোর আগে তাই ফের ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামবাসীরা। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসখানেকে ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে ওই গ্রামের সাতটি বাড়ি। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসন অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে এক সময়ে গোটা গ্রামই চলে যেতে পারে ভাগীরথীর গর্ভে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দু’দশক আগেও পূর্ব ও পশ্চিম তামাঘাটা মিলিয়ে বাস করতেন প্রায় দু’হাজার পরিবার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচশোয়। এলাকাবাসী জানান, আগে গ্রামে প্রচুর চাষযোগ্য জমি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অনেকটাই তলিয়ে গিয়েছে ভাগীরথীতে। তলিয়ে গিয়েছে বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, এমনকী প্রাথমিক স্কুলও। যে ক’টি পরিবার গ্রামে রয়েছেন, চাষাবাদ, খেতমজুরি বা তাঁত বুনে তাদের সংসার চলে। প্রতি বার বর্ষা এলেই আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন তাঁরা।
ভাগীরথীর গ্রাসে পাড়। ছবি তুলেছেন মধুমিতা মজুমদার।
মাসখানেক আগে বৃষ্টি কিছুটা কমার পরপরই পশ্চিম তামাঘাটা এলাকায় পাড়ের বড় অংশে ফাটল দেখা দেয়। পরে তা ধসে পড়ছে নদীতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জনা সাতেকের বাড়িও তলিয়ে গিয়েছে। তাঁদের জন্য প্রশাসনের তরফে ত্রাণ ও ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়। ভাঙনে গৃহহীন এমনই এক খেতমজুর স্বপন সরকারের দাবি, “এক সময়ে আমাদের দশ বিঘা জমি ছিল। ভাঙন সব শেষ করে দিয়েছে। এখন ঘরও হারিয়ে কোনও মতে বেঁচে আছি। এ ভাবে চললে গোটা গ্রামই হয়তো এক দিন নদীগর্ভে চলে যাবে।” গৃহহীন মহাদেব সেন, ধর্মদাস সরকারেরা জানান, বছর দু’য়েক আগে পূর্ব তামাঘাটা গ্রামে ভাঙন রুখতে সেচ দফতর বেশ কিছু বাঁশের খাঁচা ফেলেছিল। সেগুলির বেশির ভাগও এখন নদীগর্ভে। নদীপাড়ের কাছাকাছি রয়েছে প্রায় তিনশো মিটার লম্বা একটি বাঁধ। বছর দু’য়েক আগে সেচ দফতর বাঁশের টুকরো, বালির বস্তা-সহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে সেটি গড়ে। এখন তারও খুব কাছে ভাঙছে পাড়। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এই বাঁধও তলিয়ে যেতে পারে যে কোনও সময়ে।
তামাঘাটায় ভাঙনের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গত ২০ মার্চ বিধানসভায় এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি জানিয়ে সেচমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বর্ষার জল কিছুটা কমলেই ভাঙন মেরামতিতে কাজ শুরুর প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানানো হয়।” তিনি জানান, ৩ জুলাই সেচ দফতর একটি চিঠিতে তাঁকে জানায়, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে যে ছ’টি জায়গায় পাথর ফেলে পাড় বাঁধানোর কাজ হবে, তার মধ্যে রয়েছে তামাঘাটা। সেখানে পাড় বাঁধানোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে এক কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা।
তপনবাবু আরও জানান, তামাঘাটা ছাড়াও পাথর ফেলে পাড় বাঁধানোর কাজ হবে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের আরও বেশ কিছু এলাকায়। ঝাউডাঙায় ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দামপালে ভাঙন রুখতে ১ কোটি ৭০ লক্ষ, যজ্ঞেশ্বরপুর ন’পাড়াতে ৭ কোটি ১১ লক্ষ, কুঠুরিয়ায় ১ কোটি ১৪ লক্ষ এবং কাষ্ঠশালীতে ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পূর্বস্থলী ১ এবং কালনা ১ ব্লকেও পাড় বাঁধানোর কাজ হবে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সিদ্ধেপাড়া, ডাঙাপাড়া গ্রামে ভাঙন রুখতে বরাদ্দ হয়েছে ১০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। কালনা ১ ব্লকের কালীনগর, উদয়গঞ্জ এবং পেয়ারিনগরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া কাটোয়ার অগ্রদ্বীপেও পাড় বাঁধানোর জন্য ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা খরচ করা হবে বলে বিধায়ক জানান। বর্ষা সেষ হলেই এ বার কাজে নামা হবে বলে সেচ দফতর তাঁকে জানিয়েছে, আশ্বাস বিধায়কের।
টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হবে, সেই প্রশ্ন নিয়েই এখন দিন কাটাচ্ছে তামাঘাটা।
ভাঙন রোধে
• মার্চে সেচ দফতরের কাছে আর্জি স্থানীয় বিধায়কের।
• পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ছ’জায়গায় পাড় বাঁধানোর আশ্বাস জুলাইয়ে।
• তামাঘাটার জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা।
• পূর্বস্থলী ১ ও কালনা ১ ব্লকের জন্য বরাদ্দ প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
• এ বার বর্ষা শেষ হলেই কাজ শুরুর আশ্বাস সেচ দফতরের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.