বর্ধমান পুরসভার ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সিপিএমের অন্দরের বিতর্কে আরও নতুন মাত্রা যোগ হল! ভোটের ময়দান ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কি না, এই মতের পক্ষে-বিপক্ষে এখন জোর বিতর্ক চলছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেও। এরই মধ্যে বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের সবিস্তার ভোট-তথ্য হাতে নিয়ে মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব দাবি করলেন, “এই ফলাফলেই প্রমাণিত তৃণমূল গায়ের জোরে একতরফা ভোট করেছে! ভোটের দিন প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল বলে রাজ্য নেতৃত্ব মনে করেন।”
সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ভোটের দিন বর্ধমান জেলা সিপিএম প্রার্থীদের প্রত্যাহার এবং সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে নিষেধ করায় দলের অভ্যন্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। যা এখনও পুরোমাত্রায় জারি আছে। আলিমুদ্দিন এত দিন চুপ করে থাকায় বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব যথেষ্টই অসুবিধায় পড়েছিলেন। এ সপ্তাহের শেষে দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক। সেখানে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তার আগে বর্ধমান জেলার নেতারা চাপ দিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়েই বলিয়ে নিলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল! ফলে বর্ধমান শিবিরের আপাতত মুখরক্ষা হল। তবে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন আলিমুদ্দিনে থাকলেও সাংবাদিক বৈঠক করেন রবীনবাবু। ভোট বয়কটের সঙ্গে বিমানবাবু যে নিজেকে জড়াতে নারাজ, এ ঘটনায় তা স্পষ্ট।
বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব বারবার বলেছেন, বিমানবাবু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁরা ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বুদ্ধবাবু এবং বিমানবাবু, দু’জনের কেউই প্রকাশ্যে বর্ধমান জেলার সমর্থনে মুখ খোলেননি। বরং, দলীয় একটি সূত্রের খবর, দু’দিন আগেই রাজ্য পার্টি কেন্দ্রের সাধারণ সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানো কোনও সমর্থনযোগ্য পথ নয়! লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রবীনবাবুর এ দিনের বক্তব্যে বর্ধমান-সহ দলের একাংশের আপাতত মান বাঁচলেও বিতর্কের অধ্যায়ে ইতি পড়ল না।
দলের একাংশের বক্তব্য, পানিহাটি, হাবরা-সহ অন্য পুরসভাতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু কোথাও ভোটের দিন প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়নি। তা হলে বর্ধমান কেন লড়াই থেকে সরে দাঁড়াল? প্রথম থেকেই বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদার এবং পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন অবশ্য বলে আসছেন, ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। প্রার্থীদের প্রত্যাহার না-করে সন্ত্রাস প্রতিরোধ করলে রক্তক্ষয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটত।
রবীনবাবুর দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দু’টি ওয়ার্ডে বামেরা ৩০% ভোট পেয়েছে। আরও ৭টি ওয়ার্ডে ভোট পেয়েছে ২০%-এর বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সকাল ১০টার পরে বামপন্থী ভোটাররা ভোট না দিয়ে থাকেন, তা হলে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের এই হার কি খুব খারাপ? বিধানসভার ভোটে এই পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডেই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপমবাবু পরাজিত হয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে এ বার পুরভোটে বামেরা কতটা ভাল ফল আশা করেছিল? নাকি খারাপ ফল হবে বুঝতে পেরেই তড়িঘড়ি প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়? রবীনবাবু অবশ্য বলেন, “কেবল বামেরাই নয়, অন্য কোনও দলও ভোট পায়নি। এর থেকেই প্রমাণিত, তৃণমূল একতরফা ভোট করেছে! সুতরাং, জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই ঠিক।” |