চারপাশে আলো, পাথুরিয়া আঁধারে |
বিপ্লব ভট্টাচার্য • বুদবুদ |
রাত নামলেই পাশের গ্রামের কারখানার আলো এসে পড়ে পাথুরিয়ায়। হতাশা বাড়ে পাথুরিয়ার ১৫-১৬ ঘর আদিবাসী পরিবারের। কারণ, স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও এখনও বিদ্যুৎ আসেনি বুদবুদ থানার দেবশালা পঞ্চায়েতের জঙ্গলঘেরা পাথুড়িয়া গ্রামে।
এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় খেতমজুর। কেউ চাষ করেন। কেউ তৈরি করেন শালপাতা। তাঁদের অভিযোগ, আশেপাশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ এলেও পাথুরিয়ায় বিদ্যুৎ আসেনি। এমনকী বারবার পঞ্চায়েত বা বিদ্যুৎ দফতরে আবেদন করেও প্রতিকার মেলেনি। ফলে অন্ধকার নামলে আজও বাসিন্দাদের ভরসা লম্ফ কিংবা হ্যারিকেন। স্থানীয় বাসিন্দা পারু হেমব্রম, লখু হেমব্রম, মদন মাড্ডিদের আক্ষেপ, পাশের হাড়িফেলা গ্রামে আমাদের গ্রামের অনেক পরে জনবসতি তৈরি হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও পাথুরিয়ায় বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে বেরাতে সমস্যা হয় তাঁদের। বাসিন্দারাই জানান, গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তাঘাটও মন্দ নয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকাটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। সন্ধ্যের পরে তাই বাড়িতেই বন্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা। সাপ, নানা রকম পোকা মাকড়ের ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও পাড়ায় বেরিয়ে কারও সঙ্গে গল্প করার উপায় থাকে না বলে অভিযোগ লখুবাবু, মদনবাবুদের। গ্রামের আর এক বাসিন্দা সোম মাড্ডি বলেন, “এমনিতেই সারাদিন মাঠে বা অন্য কোথাও কাজ করি। তারপর বাড়ি ফিরে যে একটু টিভি দেখব তাও হয়ে ওঠেনা।” |
ভরসা হাতপাখাই।—নিজস্ব চিত্র। |
আঁধারে সমস্যা হয় ছাত্রছাত্রীদেরও। গ্রামবাসীরা জানান, রেশন থেকে যা তেল পাই তাতে প্রয়োজন মেটেনা। ফলে বাইরে থেকে বেশি দামে কেরোসিন কিনতে হয়। ফলে অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালাতে আরও কাহিল হয়ে পড়েন তাঁরা। দশম শ্রেণির ছাত্রী লক্ষ্মী মুর্মু বলে, “সন্ধ্যায় লন্ঠনের আলোয় পড়তে অসুবিধা হয়। অনেক সময় কেরোসিন তেলের অভাবে পড়তে পারি না।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার আবেদন করা হলেও পঞ্চায়েত থেকে এ বিষয়ে সেরকম কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। তাঁরাই জানান, মাসখানেক আগে বিদ্যুৎ দফতর থেকে কয়েক জন গ্রামে এসেছিলেন। গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও একটা বিদ্যুতের খুঁটি গ্রামে বসেনি।
শুধু পাথুরিয়াই নয়, দেবশালা পঞ্চায়েতের আমানিডাঙা গ্রামেও এখনও আসেনি বিদ্যুৎ। তবে এখানে অবশ্য বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। পার্থক্য এইটুকুই। আদিবাসী প্রধান এই গ্রামে থাকেন প্রায় ২০ ঘর পরিবার। পাথুরিয়ার মতোই রাত নামলে অন্ধকারে ডুবে যায় এই গ্রাম।
কী বলছে প্রশাসন? দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সি বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমার পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে যে এলাকাগুলিতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।” পানাগড় বিদ্যুৎ দফতরের কাস্টমার কেয়ার বিভাগের স্টেশন ম্যানেজার তাপস কুমার মণ্ডল বলেন, “এ বিষয়টি এখান থেকে দেখা হয় না। গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা দফতর (বর্ধমান) এই বিষয়টি দেখে।” আউশগ্রাম ২-এর বিডিও দিপ্তীময় দাসেরও আশ্বাস, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। গ্রামীণ বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করব।” |