|
|
|
|
রাইসিনায় আশার আলো
বিশেষ আমন্ত্রণে ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ দেখতে এসেছিলেন আশা ভোঁসলে রাষ্ট্রপতি ভবনে।
গাইতে নয়। তবুও তিনি গাইলেন। লিখছেন সঙ্গীতা ঘোষ। |
‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে... ’ আশা ভোঁসলে গাইছেন। খালি গলায়। খাবার টেবিলে বসে!
বিভোর হয়ে শুনছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, ফার্স্ট লেডি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়, তাঁদের কন্যা শর্মিষ্ঠা, পুত্রবধূ চিত্রলেখা, নাতনি শুচিস্মিতা ও পালিতা কন্যা দীপান্বিতা। রয়েছেন আশার পুত্রবধূ অনুজা ভোঁসলে এবং আর এক সেলিব্রিটি গায়ক উদিত নারায়ণ। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েক জন। আশ্বিনের এক শারদরাতে। নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে।
একটু পরেই রাষ্ট্রপতি ভবনের ফ্যামিলি উইংয়ের এই ডাইনিং হলে শুরু হবে একান্ত ঘরোয়া নৈশভোজ।
খানিক আগেই ভবনের অডিটোরিয়ামে ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ দেখে এলেন আশা ও উদিত নারায়ণ। প্রধানমন্ত্রী-পত্নী গুরশরণ কৌর-সহ দিল্লির হুজ হু-র সমাবেশে। রাষ্ট্রপতি ভবনের সংস্কৃতি বিভাগ ‘ইন্দ্রধনুষ’-এর উপস্থাপনায় ফার্স্ট লেডির ‘গীতাঞ্জলি ট্রুপ’-এর শিল্পীরা কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন। রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্টলেডির অতিথি হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছেন আশা ভোঁসলে ও উদিত নারায়ণ সেই অনুষ্ঠান দেখতে। অনুষ্ঠান করার বরাত নিয়ে নয়।
তবুও... । তবুও আশা গাইলেন। ব্রজভাষায় রচিত পদাবলীর গান শুনে আপ্লুত আশা কারও কোনও অনুরোধ ছাড়াই গাইলেন। ভবনের অন্দরমহলে, খাবার টেবিলে বসে। |
রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজ। প্রণববাবুর ডান দিকে (পরপর)
আশা, চিত্রলেখা, অনুজা, শুচিস্মিতা। রাষ্ট্রপতির বাঁ দিকে শুভ্রা, উদিত, শর্মিষ্ঠা |
রাষ্ট্রপতি অভিভূত। “... এখনও এত মধুর কণ্ঠস্বর আপনার!” বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি প্রণববাবুও।
আগে কখনও রাষ্ট্রপতি ভবনে অতিথি হয়ে এসেছেন? “এ ভাবে নিমন্ত্রিত হয়ে কখনও আসিনি। পুরস্কার নিতে এসেছি। পদ্মবিভূষণ। তারও আগে ‘উমরাও জান’ ও ‘ইজাজত’-এর গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার নিতে।” একটু থামলেন আশা। “‘মেহমান’ হয়ে এই প্রথম। মনে হচ্ছে যেন শ্বশুরবাড়িতে এসেছি...”। আশার গলায় বিহ্বলতা ও উচ্ছ্বাস। “আমি তো হাফ বাঙালি। আর ডি-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। শুভ্রার কাছে এসে...কী বলব... এত ভালবাসা, এত আদরযত্ন! আমার ছেলে আনন্দের বৌ অনুজাকেও নিয়ে এসেছি। ”
শ্বশুরবাড়ি! শুভ্রা কে হলেন আপনার? ননদ, জা...? হেসে ফেললেন সুরের মালিকা। “ইয়ে প্যার কা সম্বন্ধ কোনও নিদিষ্ট সম্পর্কে বাঁধা যাবে না। গহেরা প্যার”।
প্রসঙ্গত, প্রণব-শুভ্রার ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাট ও শচীনকর্তার ঢাকুরিয়ার বাড়ি তো কার্যত একই পাড়ায়!
আশা-শুভ্রার মধ্যে কী কথা হল?
“আশা জানতে চাইছিলেন আমি নজরুলগীতি শিখিনি কেন,” বললেন শুভ্রা। “নজরুলগীতি মূলত রাগপ্রধান তো, প্রচুর চর্চার প্রয়োজন। ঘর-সংসার সামলে... পেরে উঠিনি।” স্বীকারোক্তি ফার্স্ট লেডির। “আর যা কথা হল তা সবই ঘর-সংসারের” জানালেন শুভ্রা।
হঠাৎ আশাকে ডাকলেন কেন? |
|
“আশার গানে এত বৈচিত্র... বরাবরই দারুণ লাগে। ভার্সাটাইল,” একটু থামলেন শুভ্রা। “আমাদের যখন অল্প বয়স, যাকে বলে জীবনের বসন্তকাল, সেই সময় আশার গান... এখনও যেন দোলা দিয়ে যায়! তাই ওঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।” আর উদিত নারায়ণকে? “উদিতের গানও সকলের খুব পছন্দের,” উত্তর শুভ্রার।
অনুষ্ঠানের আগের রাতে মুম্বই থেকে দিল্লি আসেন আশা, অনুজা, উদিত। রাষ্ট্রপতি ভবনের এক তলায় নতুন করে সাজানো অতিথিশালা বিবেকানন্দ ও টেগোর স্যুইটে থাকেন তাঁরা। পরদিন, রবিবার সন্ধ্যায় ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ দেখা। তার পর রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যে ডাইনিং রুমে রোজ মাছের ঝোল বা শুক্তো দিয়ে ভাত খান, সেখানে বসে এক্কেবারে ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়াদাওয়া।
শুভ্রা কী কী খাওয়ালেন তাঁর অতিথিদের? আশা নিরামিষাশী। আমন্ড স্যুপ তাঁর খুব পছন্দের। বাটলার মোতিলাল আশাকে সার্ভ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত। রাঁধিয়ে জগদীশ ও সুনীল খুব যত্ন করে সব রান্না করেছিলেন।
কী ছিল মেনুতে? ...পনির পসিন্দা, কুরকুরি ভিন্ডি, চানা ডাল, পরমল কি সব্জি, কুন্দুরি সব্জি, সাবুদানা কি টিক্কি, দহি বড়া, ঠাসা (চাটনি)। আমিষের মধ্যে গ্রিল্ড ফিশ, ফিশ কারি। শেষ পাতে গুলাব জামুন, আপেল পাই।
পরদিন মুঘল গার্ডেন্স-সহ ভবন চত্বর ঘুরে দেখলেন অতিথিরা। লাঞ্চের পর বিদায় পর্ব। শুভ্রার কাছে বিদায় নিতে এলেন আশা। জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে। দু’জনের চোখে জল।
‘শ্বশুরবাড়ি’র সুখস্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন আশা ভোঁসলে। |
|
|
|
|
|