শ্রাবন্তী নয়, কোয়েলদি এক নম্বর

এখনও আপনি এক সময়কার করিনা কপূরের মতো সাইজ জিরোতে। এই ফ্যাশনটা তো উঠেই গিয়েছে। ট্রেন্ড চলছে কার্ভি লুকের। সাইজ জিরোর প্রতি এত টান কেন?
আমি ফিটনেস ফ্রিক। ছিপছিপে থাকতেই ভালবাসি। তবে ইন্ডাস্ট্রির লোকজন জিরো সাইজ পছন্দ করেন না জানি। অনেকে সরাসরি বলেওছেন “‘জিরো সাইজ’ তোকে মানাচ্ছে না।”

তা সত্ত্বেও এত স্লিম?
এখন একটু ওজন বাড়িয়েছি তো। ভারিক্কি কার্ভি লুক আমার একদম পছন্দ নয়। ওজন বাড়লে আমার আত্মবিশ্বাস কমে যায়।

আত্মবিশ্বাস কমে ওজনের জন্য? এখন তো আপনার দারুণ আত্মবিশ্বাস থাকার কথা। ‘বস’, ‘খোকা ৪২০’ দু’দুটো ছবি এ বছর পর পর হিট...
সে তো অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। এখন আমি ভাবছি এই ছবিগুলোর মতো যেন আমার পরের ছবিগুলোও হিট হয়।

মানে এখন সেই সেলিব্রেশন মুডটা আর নেই?
না নেই। পরবর্তী কাজ কী ভাবে আরও ভাল করা যায় সেটাই মাথায় আছে কেবল।

তা হলে এখনকার লড়াই কি এক নম্বর নায়িকা হওয়ার দৌড়?
এক নম্বর নায়িকা হওয়া, দু’নম্বর নায়িকা হওয়া এ সব বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি ভাল কাজ, ভাল পারফরম্যান্স, দর্শকদের ভালবাসা। এবং আমি সব শেষে বুঝি ছবি হিট বা ফ্লপ। ওটাই শেষ কথা।
বর্ধমান থেকে কলকাতায় এসে নিজের জায়গা করে নেওয়া এবং সেই জায়গাটাকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম তো চলেছেই। কাজ নিয়ে আমি এখন আগের থেকে অনেক বেশি সিরিয়াস। এখন বাছাই করে সব ধরনের ছবিতে কাজ করব। যাতে সব ধরনের দর্শকের আমার কাজ ভাল লাগে। কী বাণিজ্যিক ছবি, কী অন্য ধারার শহুরে ছবি সব কিছুই করব। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন করে ভাঙাগড়া করতে চাই।

সেই জন্যই আপনি অঞ্জন দত্তের ছবিতে অভিনয় করছেন?
হ্যাঁ, সেই জন্যই।

ওঁর ছবিতে কাজ করা মানে তো শহুরে দর্শকদের কাছে নিজেকে চেনানো। শুভশ্রীর মাল্টিপ্লেক্সমুখী হওয়া...
অঞ্জনদার যে ছবিতে অভিনয় করছি আমার বিশ্বাস গ্রাম ও মফস্সলের মানুষেরও সে ছবি ভাল লাগবে। আমার দর্শক যেখানেই থাকুন আমাকে এতটাই ভালবাসেন যে তাঁরা আমার মাল্টিপ্লেক্স ছবিও সুযোগ পেলে দেখবেন। উপরন্তু আমি শহুরে দর্শকদেরও পাব। গ্রামের দর্শক যদি অঞ্জনদার ছবি হলে দেখতে না পান ডিভিডিতে দেখবেন। বা পরে টিভিতে দেখবেন।

আপনি তো ফেসবুকে নেই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সবটা টুইটারে সম্ভব?
আমার তো বেশ ভালই যোগাযোগ আছে ফ্যানেদের সঙ্গে। ফ্যান ফলোয়িং প্রায় তেরো হাজার।

সেটা তো সংখ্যায় খুব বেশি হল না...
বাড়বে। আস্তে আস্তে বাড়বে। তা ছাড়া আমার একটা ফ্যান ক্লাবও আছে। বছরে দু’বার আমি আমার ফ্যানেদের সঙ্গে দেখা করি।

নতুন ছবি ভিথ্রিজি প্রযোজিত ‘শেষ বলে কিছু নেই’ শুরু
হওয়ার আগে পরিচালক অঞ্জন দত্তের সঙ্গে ওয়ার্কশপে শুভশ্রী
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আই ফোন) অথবা গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR Appটি ডাউনলোড করে এই ছবিটি স্ক্যান করুন। আর দেখে নিন শুভশ্রীর আরও অনেক ছবি
অঞ্জন দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ হল কী ভাবে?
ইন্ডাস্ট্রিতে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, যাঁরা জানেন যে আমি অন্য ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে চাই। তাঁরাই হয়তো কেউ আমার আগ্রহের কথা অঞ্জনদাকে জানিয়েছেন। তেমন কারও মাধ্যমেই অঞ্জনদা আমার ব্যাপারটা জানতে পারেন এবং আমাকে ফোন করেন। ব্যস্।

তার পর ওঁর বাড়ি গেলেন?
হ্যাঁ। অঞ্জনদার ছবির নাম ‘শেষ বলে কিছু নেই।’ বাড়িতে গিয়ে শুনলাম ওঁর ছবির চিত্রনাট্য। খুব ভাল চরিত্র। আর অঞ্জনদার মতো একজন পরিচালকের হাত ধরে অন্য ধারার ছবিতে আসা ভাগ্যের ব্যাপার। আই অ্যাম লাকি।

চরিত্রটা ঠিক কী রকম?
আমার অভিনয়ের কেরিয়ারে ‘শেষ বলে কিছু নেই’য়ে চরিত্রটা একেবারে আলাদা ধরনের। এমনটা সত্যিই আগে পাইনি। এক জন অত্যন্ত দৃঢ় ব্যক্তিত্বশালিনী মেয়ে। তার দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্বচ্ছ। আবার কোথাও সে মেয়ে খুব কোমল এবং মিষ্টি।

পরিচালকের সঙ্গে রোল নিয়ে কী আলোচনা হল?
আলোচনায় বুঝলাম অঞ্জনদা শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন না। বলেছেন খুব স্বাভাবিক ভাবে অভিনয় করতে। আমিও চেষ্টা করছি ক্যাজুয়াল অভিনয় করার। অঞ্জনদা খুব বড় অভিনেতা। ওঁর সঙ্গে ওয়ার্কশপ করার অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। আই ফিল গ্রেট। এটা মনেই হচ্ছে না আমি অঞ্জনদার সঙ্গে প্রথম কাজ করছি। তা ছাড়া উনি আমার বন্ধুর বাবার চরিত্রেও অভিনয় করছেন।

কিন্তু এই ছবি করতে গেলে গ্ল্যামারের আবরণটা খসিয়ে দিতে হবে হয়তো...
তা হয়তো হবে। আমি তো চাই কম সাজগোজে, গ্ল্যামার ছাড়াই আমার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ হোক।

অন্য ধারার আর কোনও পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছেন?
আমার পি-আর স্কিলটাই খুব খারাপ। কারও সঙ্গেই কাজ চেয়ে যোগাযোগ করতে পারি না। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিতদা (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) এঁদের সঙ্গে আমার খুব ভাল আলাপ। যদি মনে হয় আমাকে তাঁদের ছবিতে নেওয়া দরকার তা হলে নিশ্চয়ই আমায় নেবেন।

রাইমা সেন এখন অন্য ধারার ছবির প্রায় একচেটিয়া নায়িকা। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও আছেন এই ঘরানায়। এটা আপনার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং?
আমি কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাসই করি না। নিজের কাজটাই করতে চাই শুধু মন দিয়ে।

দীর্ঘদিন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লাইমলাইটে আছেন। উনিও লম্বা গড়নের। অসম্ভব পরিশ্রমী। আপনার চেহারাতেও একটা টানটান লম্বাটে ব্যাপার আছে...
উরি বাব্বা! ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে আমার তুলনা! ভাবতেই পারি না। আমি ওঁর ধারেকাছেও নেই। কী দুর্দান্ত অভিনেত্রী। দুই সন্তানের মা হয়েও কলকাতা-মুম্বই ছুটে বেড়াবার অদম্য উৎসাহ তাক লাগিয়ে দেয়।

আপনার চোখে কি এক নম্বর নায়িকা ঋতুপর্ণাই?
ঋতুপর্ণাদি এখন সিনিয়র। এক নম্বর এখন কোয়েল মল্লিক। কোয়েলদি।

শ্রাবন্তী নয় কেন? ওঁর ছবিও তো হিট করে। নায়িকা হিসেবে সুন্দরী। গ্ল্যামারাস...
না, কোয়েলদিই এক নম্বরে। প্রায় তেরো বছর ধরে একটানা নিজের জায়গাটা একই ভাবে ধরে রেখেছে। শ্রাবন্তী একটা ছবি করার পর বেশ কয়েক বছর আড়ালে ছিল। তখন আমার ছবি রিলিজ করে যায়। কাজের মান বজায় রেখে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এক নম্বর নায়িকা হওয়ার একটা বড় যোগ্যতা যেটা কোয়েলদির ছিল। এখনও আছে।
তা হলে তো কোয়েল মল্লিকই আপনার সব চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী?
একদমই না। কোয়েলদি যদি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হত, ওর কথা এত বড় মুখ করে আমি বলতাম?

আজকাল তো এক ছবিতে দুই নায়িকা অভিনয় করছেন। যেমন আপনি আর নুসরত ‘খোকা ৪২০’ করলেন। আপনি কোয়েলের সঙ্গে এক ছবিতে অভিনয় করবেন কি?
না। আমি অভিনয় করব না। তবে কোয়েলদি যদি কোনও দিন ছবি পরিচালনা করে, তা হলে আমি ওর ছবিতে প্রথম নায়িকা হতে চাই।

কবে রাম রাজা হবে, তবে সীতা রানি হবে!
সত্যি বলছি কোয়েলদি পরিচালনা করলে আমি ওর নায়িকা হতে খুব ইচ্ছুক।

‘খোকা ৪২০’ এবং ‘বস’ হিট হওয়ার পর শোনা যাচ্ছে যে শ্রাবন্তীর ছবির অফারগুলো নাকি আপনার কাছেই চলে যাচ্ছে।
শ্রাবন্তীর কাজের অফার আমার কাছে আসছে কিনা জানি না। আমি জানি যে কাজ আমার কাছে আসছে, সে কাজের যোগ্যতা আছে বলেই ঈশ্বর তা আমাকে দিচ্ছেন। প্রযোজক-পরিচালকেরা সেইজন্যই আমাকে চাইছেন।

এখন যে সব ছবি হচ্ছে তাতে মিমি-পায়েলদের মতো অভিনেত্রীরা উঠে আসছেন। ওঁরা আপনার কাজের খিদের কাছে কতটা চ্যালেঞ্জ?
আমি এত জটিল ভাবে জীবনটাকে দেখি না। এত কিছু ভাবতে গেলে তো আমি নিজের কাজের প্রতি মন দিতে পারব না।

যদিও দেব, জিৎ দু’জনের সঙ্গেই কাজ করেছেন, কিন্তু এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট কোনও জুটি নেই আপনার। এটা কি এক নম্বর হিরোইন হওয়ার পথে বাধা?
আমি অবশ্যই জুটি ব্যাপারটাকে বিশ্বাস করি। এখনও পর্যন্ত দেব আর আমি প্রতিষ্ঠিত জুটি। ভবিষ্যতেও একসঙ্গে কাজ করব। আমার আর জিৎদার জুটিটাকেও দর্শক দারুণ ভাবে গ্রহণ করেছে। আমরা ‘বস টু’ও করছি খুব শিগ্গির। সুতরাং আমার তো দু’ জন বড় স্টারের সঙ্গে জুটি আছেই।

দেবের সঙ্গে যেহেতু আপনার গভীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল, এই আশঙ্কা হয় কি যে সেই সম্পর্কটা মুছে যাওয়ায় পরদায় তার প্রভাব পড়তে পারে?
সম্পর্ক না থাকলেও আমাদের রসায়ন ভাল থাকবে। জিৎদার সঙ্গে ‘বস’ করতে গিয়ে দেখেছি কোনও সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও পরদায় আমাদেরকে ভাল লেগেছে দর্শকদের। অভিনয়ের প্যাশনটাই আসল কথা।

জিৎ, দেব দু’জনের সঙ্গেই কাজ করলেন? কাকে কেমন লাগল নায়ক হিসেবে?
আমি এরকম জাজমেন্টাল মন নিয়ে ওদের সঙ্গে কাজ করতে যাইনি। (হেসে) এবার থেকে যখন ওদের সঙ্গে কাজ করব বিচার করার চেষ্টা করব। (হাসি) এটা বলতে পারি জিৎদার প্রায় সাড়ে এগারো বছরের অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার ছাপ কাজে পড়ে। এবং কোঅ্যাক্টরদেরও তাতে সুবিধে হয়। তা ছাড়া জিৎদা মানুষটাই যে খুব ভাল আর পজিটিভ মাইন্ডেড। ফলে যারা ওর সঙ্গে যখন কাজ করে তাদের একটা পজিটিভ মানসিকতা তৈরি হয়।

আর দেব?
দেব খুব এনার্জেটিক। কাজের প্রতি একান্ত ডেডিকেটেড। সময়ের সঙ্গে নিজেকে দারুণ বদলাতে পারে। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

বছর পাঁচেকের সম্পর্ক দেবের সঙ্গে। প্রত্যেক পুজোতেই দেব ছিলেন। এই পুজোতে তিনি নেই। কোনও স্মৃতি মনে পড়ে?
স্মৃতি তো আছেই। কিন্তু সে সব বলার নয়। এই জায়গাটা ব্ল্যাঙ্ক থাক বরং! তবে হ্যাঁ, হয়তো বা মিস করব ওকে পুজোর দিনগুলোয়...

বিয়ের কথা কিছু ভাবছেন নাকি?
বিয়ে? অসম্ভব। এখন শুধু কাজ। শুধুই কাজ। কাজ ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবতেই চাই না।

ছবি: সোমনাথ রায়
শুভশ্রীর স্টাইলিং: স্যান্ডি
শুভশ্রীর মেক আপ: নবীন দাস



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.