হাতে আর মাত্র দশ দিন। প্রতি বার এ সময় পুজোর বাজারে ভিড় উপচে পড়ে। খদ্দের সামলাতে নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায় কাপড়ের দোকানের মালিক থেকে কর্মচারীদের। ডুয়ার্সে এ বার চিরাচরিত ছবি অনেকটা আলাদা। গোটা ডুয়ার্সে পুজোর মুখে খদ্দেরদের দেখা সে ভাবে না পেয়ে কার্যত মাথায় হাত ব্যবসায়ীর। পুজোর জন্য আলাদা করে আনা মালপত্র সব বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ওই ব্যবসায়ীরা। বাসিন্দাদের কথায়, “সারদা কাণ্ডের জেরে একের পর এক লগ্নিকারী সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলায় শিক্ষক, কর্মী থেকে কৃষক, মজুর, ব্যবসায়ী সবারই টাকা গিয়েছে। টাকা মিলবে কি না নিশ্চয়তা নেই। এর প্রভাবই পড়েছে পুজোর বাজারে।” ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ দত্তের কথায়, “পুজোর বাজার যে এতটা মন্দা হবে তা কেউ ভাবতে পারিনি। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থায় টাকা রেখে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাই পুজোর বাজার একেবারেই জমল না এ বার।”
একইভাবে ধূপগুড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিড-এর সম্পাদক হিমাদ্রি সাহার কথায়, “এ সময় সব কাপড়ের দোকানে ভিড় উপচে পড়ে। এ বার বাজারে তেমন ভিড় নেই। বাসিন্দারা ওই সংস্থাগুলিতে টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাতে বাজারে তার প্রভাব পড়ছে।” চলতি সপ্তাহেই ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে বোনাস দেওয়া শেষ হবে। তাতে বাজার কিছুটা চাঙা হতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশা।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ২০০২ সাল থেকে শুরু হয় চা বাগানে মন্দা দশা। একের পর এক বাগান বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত শ্রমিকরা পুজো বোনাসের পুরো টাকায় বাজারে খরচ করতেন। বাগানে মন্দ দশা শুরু হতেই তা কমতে থাকে। বাসিন্দারা জানান, অনেকে বোনাসের টাকা অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করতেন। বাগান শ্রমিকেরাও সেই টাকা খোয়ানোয় বাজারে প্রভাব পড়ছে। পুজোর কেনাকেটা হচ্ছে না। দেড় বিঘা জমি চাষ করে কোনও মতে সংসার চালান ফালাকাটার কৃষক নবানু বর্মন। প্রতিবেশী দুই এজেন্টের কথায় বেশি সুদের আশায় সঞ্চয়ের ৫০০০০ টাকা অর্থলগ্নি সংস্থায় জমান। তাঁর কথায়, “এ বার পুজোর বাজার করে টাকা নষ্ট করতে চাই না। বাড়ির ছোটদের জন্য কেবল জামা কিনব।” ধূপগুড়ির কৃষক অনিল বর্মনের কথায়, “এবার পাটের দামও ভাল পাচ্ছি না। নতুন জামাকাপড় কেনার প্রশ্ন নেই।” |