‘বামেদের ভরসায়’ চলতে গিয়ে প্রতি পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে ‘সংখ্যালঘু’ কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত শিলিগুড়ি পুরবোর্ডকে। সোমবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে তাই যেন স্পষ্ট হল। বামেরা না চাওয়ায় বাড়ির নকশা অনুমোদন থেকে বেশ কিছু কাজ এ দিন অনুমোদন করাতে পারেনি কংগ্রেস পুরবোর্ড। কারণ, পুরসভায় রয়েছেন ৪৭ জন কাউন্সিলর। বর্তমানে ১৪ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে কংগ্রেস ‘সংখ্যালঘু’ পুরবোর্ড চালাচ্ছে। তৃণমূল কাউন্সিলরের সংখ্যাও ১৪ জন। তারা এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে যাননি। বোর্ড মিটিংয়ে ছিলেন কংগ্রেসের ১১ জন এবং বামেদের ১৪ জন। ফলে, বামেরা আপত্তি করলে বোর্ড মিটিং-এ একটি প্রস্তাবও পাস হত না। সম্ভবত সেটা বুঝেই মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে অধিবেশন কক্ষে বারেবারেই কার্যত অনুরোধের সুরে বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, “আপনাদের সহযোগিতা চাই। পুরসভার তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা নেই। প্রস্তাব আটকে গেলে অসুবিধা হবে। একটু দেখুন।”
এর পরেও নুরুলবাবুরা বেশ কিছু কাজ আটকে দেন। জোটের পুরবোর্ড ছেড়ে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পর বাজেট পাস নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। দলত্যাগী কাউন্সিলর নান্টু পাল চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা। নান্টুবাবু ইস্তফা দেওয়ার পর সম্প্রতি ফের বাজেট অধিবেশন হয়। বোর্ড মিটিংয়ের বিভিন্ন প্রস্তাব পাস করানোর ক্ষেত্রে তাই বামেরাই পুরবোর্ডের ভরসা হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। তাই সেগুলি অনুমোদনে মত দিইনি।” তাতে বেশ কিছু বিল্ডিং প্ল্যান, ইউপিই সেলের অধীনে রাস্তা, নর্দমার সংস্কার, কমিউনিটি হল তৈরির কাজ আটকে পড়েছে।
বামেদের বাধায় হোঁচট খেতে হওয়া প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, “এ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা বিরোধীদের কথা সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে শুনি। স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই বোর্ড সভায় বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বামেরা আপত্তি তোলায় সেগুলি আপাতত অনুমোদন করা হবে না।” তৃণমূলের কাউন্সিলরদের পক্ষে কৃষ্ণ পাল জানান, তাঁরা দলের কাজে শহরের বাইরে থাকায় যেতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, “সংখ্যালঘু হয়েও বোর্ড চালাতে চাইছেন কংগ্রেসের মেয়র। বেআইনি ভাবে বিল্ডিং প্ল্যান পাস করানোর চেষ্টা করছেন। সেবক রোডে পুরসভার জমিতে ব্যবসায়ীকে নির্মাণ করতে দিচ্ছেন।” এর পরেই কৃষ্ণবাবুর কটাক্ষ, “যাদের সাড়ে তিন দশকের কাজে মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন, সেই বামেদের ভরসায় বোর্ড চালাতে গেলে কী পরিণতি হয় তা কংগ্রেস আগেও দেখেছে। ফের দেখবে।” |