গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে রাজ্যের মতবিরোধ আরও একবার সামনে এল সোমবার। কেন্দ্র, রাজ্য ও জিটিএ কর্তৃপক্ষের পরবর্তী ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কবে হবে, তা নিয়ে পরস্পর-বিরোধী কথা শোনা গেল সারাদিন। এ দিন দার্জিলিঙে মোর্চার তরফে দাবি করা হয়, আগামী ২৩ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানালেন, পুজোর পর আলোচনা হতে পারে, এমনটাই জানানো হয়েছে। আর রাজ্যের তরফে সাফ জানানো হল, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কবে ডাকা হবে তা রাজ্যই ঠিক করবে। কিন্তু মাত্র মাস চারেকের ব্যবধানে বৈঠকের পক্ষপাতী নয় রাজ্য।
এ দিন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব সুরেশ কুমারের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।” কিন্তু পরে স্পষ্ট হয়, এখনই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে রাজি নয় রাজ্য সরকার। মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দার্জিলিং নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কবে ডাকা হবে তা রাজ্যই ঠিক করে থাকে। তা ছাড়া, জিটিএ গঠনের পরে একাধিকবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। ঘন ঘন ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা মোর্চার চাপ সৃষ্টির কৌশল বলেই মনে করছে রাজ্য। তা মানা সম্ভব নয়, সে কথা কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে বলে মহাকরণসূত্রে খবর।
কেন্দ্রও রাজ্যের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজি থাকলে তবেই দার্জিলিং সমস্যা নিয়ে বৈঠকে বসবে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রেরই খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের কাছে মোর্চা নেতৃত্ব ও দার্জিলিঙের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার আবেদন জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মোর্চা নেতাদের ঘরোয়া ভাবে জানানো হয়েছে, ২২ অক্টোবরের পর কেন্দ্র ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও পৃথক রাজ্যের দাবি, বা জিটিএ-চুক্তির বাইরের কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে না। জিটিএ-চুক্তির রূপায়ণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা দেখতেই বৈঠকের ব্যবস্থা। জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী, রাজ্য চুক্তির কোনও শর্ত খেলাপ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বৈঠক ডেকে সমাধানের চেষ্টা করতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে, একতরফা ভাবে মোর্চা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দিন ঠিক হয়েছে বলে দাবি করল কেন? মোর্চার অন্দরের খবর, রাজ্যের চাপের মুখে মোর্চা বন্ধ তুললেও ২০ অক্টোবরের পরে ফের পাহাড়ে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হবে বলে জানিয়েছে। গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি (জ্যাক) এর শরিকদের পক্ষ থেকেও জিটিএ ছেড়ে লাগাতার আন্দোলনের জন্য মোর্চাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সোমবারই জ্যাক-এর সভাপতি পদ থেকে বিমল গুরুঙ্গ পদত্যাগ করেছেন। মোর্চা সূত্রেরই খবর, ২৩ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে বলে ঘোষণা করে পুজোর মরসুমের পরেই পাহাড়ে আন্দোলনে নামার চাপ এড়াতে চাইছেন বিমল গুরুঙ্গরা।
পাহাড়ের পরিস্থিতি দেখে এখনই কেন্দ্রীয় বাহিনী সরাচ্ছে না রাজ্য সরকার। সোমবার মহাকরণে এক কর্তা জানান, পাহাড়ে ১১ কোম্পানি সিআরপি রয়েছে। রয়েছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীও। রাজ্যের আরও কিছু বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জিটিএ চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গের জামিনের ব্যাপারে রাজ্য সরাসরি বিরোধিতা করবে না। |