এপিএল-বিপিএল নয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জঙ্গলমহল এলাকার সব গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মতো আয়ের ঊর্ধ্বসীমা দেখে শুরুতে এ জন্য উপভোক্তা চিহ্নিত করা হয়। তালিকা তৈরি করা হয়। উপভোক্তাদের নামে নতুন রেশন কার্ড লেখা হয়। নতুন কার্ড বিলিও হয়েছে। তবে, পুরনো সব কার্ড এখনও বাতিল হয়নি। ফলে, বরাদ্দ খাদ্যশস্যের নয়ছয়ের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জঙ্গলমহল এলাকার ১১টি ব্লক এবং ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৯ লক্ষ ১৬ হাজার নতুন উপভোক্তা চিহ্নিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে সকলের কাছে নতুন কার্ড পৌঁছেছে। তবে, পুরনো কার্ড বাতিল করা গিয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার (গত অগস্ট পর্যন্ত)। প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার পুরনো রেশন কার্ড এখনও বাতিল করা যায়নি। তা উপভোক্তাদের কাছেই রয়েছে। |
জঙ্গলমহলে সমস্যা |
• এপিএল-বিপিএল ভাগ নয়, জঙ্গলমহলের সব গরিব মানুষকেই ২ টাকা কেজির চাল দেওয়া হচ্ছে।
• তফসিলি সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আয়ের উর্ধ্বসীমা বছরে ৩৬ হাজার টাকা, সাধারণের ক্ষেত্রে ৪২ হাজার টাকা।
• পুরনো কার্ড বাতিল না হওয়ায় রেশনের খাদ্যশস্য নয়ছয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
• খাদ্য দফতরের বক্তব্য, কর্মীর অভাবেই সঙ্কট। |
|
কেন এই অবস্থা? সদুত্তর মেলেনি জেলা খাদ্য দফতরের কর্তাদের কাছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা শুধু বলেন, “দফতরে কর্মীর অভাব। তার মধ্যেই সব কিছু করতে হচ্ছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব পুরনো কার্ডগুলো বাতিল করার চেষ্টা চলছে।” এর ফলে কী বরাদ্দ খাদ্যশস্যের নয়ছয়ের আশঙ্কা থাকে না? ওই কর্তার জবাব, “আমাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি।”
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি জঙ্গলমহল এলাকার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগী হবেন। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জঙ্গলমহলের জন্য তৈরি হয় ‘স্পেশাল প্যাকেজ’। আমলাশোলের মতো অনাহার-অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে জঙ্গলমহলোর সব গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে তফসিলি থেকে সাধারণ, সব গরিব মানুষই এই সুবিধে পাচ্ছেন। তবে, এ জন্য আয়ের উর্ধ্বসীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তফসিলিদের ক্ষেত্রে পরিবারের আয় বছরে ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে এবং সাধারণের ক্ষেত্রে বছরে পারাবারিক আয় ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে ২ টাকা কেজি দরে চাল মিলবে। জেলার ‘মাওবাদী অধ্যুষিত’ ১১টি ব্লকের জন্যই এই কর্মসূচি, সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকাও রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সমীক্ষা শেষে উপযুক্ত উপভোক্তা হিসেবে ৯ লক্ষ ১৬ হাজার ৩০৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে তফসিলি ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮১০ জন। শুরুতে নতুন কার্ড বিলির প্রক্রিয়াও ধীর গতিতে চলছিল। ক্রমে কাজে গতি আসে। সকলের কাছে নতুন কার্ড পৌঁছয়। তবে সব পুরনো কার্ড বাতিল করা যায়নি।
পুরনো কার্ড বাতিল না হওয়ায় অনেকের কাছেই নতুন ও পুরনো দু’টি রেশন কার্ড রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি খাদ্যশস্য নয়ছয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন মহল। সাধারণত, কোনও রেশন ডিলারের কাছে কত রেশন কার্ড রয়েছে তা দেখেই উপভোক্তার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। পরে সেই হিসেব দেখে ডিলারদের খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়। উপভোক্তা একসঙ্গে দু’টি কার্ড দেখিয়ে খাদ্যশস্য নিতে পারবেন না। ফলে, অতিরিক্ত খাদ্যশস্য ডিলারের কাছে থেকে যাবে। পরবর্তী সময়ে যা খোলাবাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে মুনাফা করার সুযোগ থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির লোকজনও মুনাফা করতে ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠেন। অন্য দিকে, খাদ্য দফতরের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারের সঙ্গে রেশন ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ নতুন নয়। এই
পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ রেশনের খাদ্যশস্য খোলাবাজারে বিক্রি করেন।
পরিস্থিতি দেখে পুরনো রেশন কার্ডগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাতিল করার চেষ্টা চলছে। কোন এলাকায় কতগুলো পুরনো কার্ড বাতিল হয়নি, তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ডিলারদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উপভোক্তারা রেশন দোকানে এলে তাঁদের যেন পুরনো কার্ড ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “শুরুতে আমাদের লক্ষ্য ছিল, সমস্ত উপভোক্তার কাছে নতুন কার্ড পৌঁছনো। কাজটা হয়েছে। এ বার সমস্ত পুরনো কার্ড বাতিল করা হবে। পুরনো রেশন কার্ড জমা দেওয়ার জন্য উপভোক্তাদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরাও কিছু পদক্ষেপ করছি।” |