এক বছরের মধ্যেই বদলে গেল তাঁর পর্যবেক্ষণ।
বছরখানেক আগে আশুতোষ কলেজের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছিলেন, “অষ্টম শ্রেণি ফেল করেও অনেকে কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় থাকছেন।” এই নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
আর সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি বিষয়ে একটি আলোচনাসভায় সৌগতবাবুর মন্তব্য, দক্ষতার বিচার করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ করছে। সৌগতবাবু বলেন, “আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অনুমতিসাপেক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্তা নিয়োগ করে বামেরা একটা মধ্যমেধার যুগ তৈরি করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তার থেকে সরে এসেছে।”
ওই তৃণমূল সাংসদের আরও দাবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, স্কুল সার্ভিস কমিশন-সহ বিভিন্ন সংস্থার মাথায় এখন যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শাসক দলের সদস্য নন। এই সরকার যে শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দলতন্ত্র হটাতে উদ্যোগী, তা বোঝাতে বাম জমানায় নিযুক্ত কোনও কোনও শিক্ষাকর্তাকে এই আমলেও বহাল রাখার দৃষ্টান্ত দেন তিনি। বলেন, “দক্ষতা বিচার করেই বামেদের সময়ে নিযুক্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে এই আমলে ফের ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে।” |
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌগত রায়। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র। |
বছরখানেক আগে অষ্টম শ্রেণি অনুত্তীর্ণ লোকজনও কলেজ পরিচালনায় থাকছেন বলে সৌগতবাবু যে-মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সৌগতবাবুর সেই মন্তব্যের কয়েক দিন আগেই ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি, তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এক শিক্ষিকার দিকে জলের জগ ছুড়ে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন। আশুতোষ কলেজে সৌগতবাবু আসলে নাম না-করে আরাবুলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলেও মনে করেন অনেকে। আশুতোষ কলেজে তিনি যা বলেছিলেন, সেই বক্তব্য থেকে কি তা হলে সরে এলেন?
সৌগতবাবু এ দিনের আলোচনাসভার পরে বলেন, “পরিচালন সমিতির সভাপতির আর এমন কী ভূমিকা থাকে? আমি বলতে চেয়েছি, কোনও প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে যাঁরা সরাসরি সক্রিয় ভাবে জড়িত, তৃণমূল কংগ্রেস সেই সব পদে নিজেদের লোক বসানোর পক্ষপাতী নয়।”
বামফ্রন্টের আমলকে তিনি কেন মধ্যমেধার যুগ বলতে চেয়েছেন, সেই ব্যাপারে সৌগতবাবুর ব্যাখ্যা, “১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাম আমলে সমস্ত উপাচার্য, ডিন, অধ্যক্ষ পার্টি অফিস থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এটা করে ওদের কোনও লাভ হয়নি। তাই সিপিএমের যুগটাকে বলা যায় মধ্যমেধার যুগ।” তৃণমূলের আমলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, স্কুল সার্ভিস কমিশন ইত্যাদি শিক্ষা সংস্থার মাথায় যাঁদের বসানো হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই দলের যোগ নেই বলে তাঁর দাবি।
সৌগতবাবু বলেন, “শুধু স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ছাড়া ওঁদের কেউই তৃণমূলের সদস্য নন।” তার পরেই তিনি সুরঞ্জনবাবুর উল্লেখ করে তৃণমূলের দলতন্ত্র-বিরোধী ভাবনাচিন্তা তুলে ধরেন। ওই অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক বলেন, “আমার ধারণা, সরকার ঠিক পথেই চলছে। এ বার উৎকর্ষের দিকে নজর দেওয়া দরকার।”
সৌগতবাবুর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত নন প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “আগেকার অনেক উপাচার্যকে এই আমলে ফের নিয়োগ করা হয়েছে। এখনকার শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং বাম আমলে শিক্ষকতা করেছেন। তা হলে এঁদের সকলেই কি মধ্যমেধার অধিকারী? এমন অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে
রয়েছে। সৌগতবাবুর মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।”
তৃণমূল বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও এ দিনের সভায় ছিলেন। তিনি অনলাইনে ছাত্র ভর্তির পক্ষে সওয়াল করেন। সব কলেজে অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা হলে ছাত্র-অসন্তোষ বা সংঘর্ষ কমবে বলে তাঁর মত। কিন্তু বাস্তবে কি তা হচ্ছে?
অনলাইনে ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে তো ছাত্র-অসন্তোষের ঘটনা লেগেই আছে। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন কলেজে পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করানোর দাবিতে বিক্ষোভ, অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্র সংগঠনগুলি। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর দিকে। ছাত্রদের তরফে এমন বাধা থাকলে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হবে কী করে?
শোভনদেববাবু পরে বলেন, “গোলমাল পাকানোর অভিযোগ পেলে দল নিশ্চয়ই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। তবে প্রকৃত টিএমসিপি হলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে এ কাজ করতে পারে না বলেই মনে হয়।” |