মহালয়া মাত্র তিন দিন দূরে। সরকারি ভাবে বর্ষা-বিদায়ের বাকি আট দিন। কিন্তু শেষ বেলাতেও বর্ষার ব্যাটিংয়ে যেন ভারত অধিনায়ক ধোনির মেজাজ! এবং নিম্নচাপের উস্কানিতেই তার এই ধুন্ধুমার দাপট। পুজোর প্রস্তুতি ধুয়ে যাওয়ার জোগাড়। হাওয়া অফিস বলছে, আরও ভোগাবে নিম্নচাপ। কারণ, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছে সে।
এ বার জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বর্ষা ব্যাট করেছে টি-টোয়েন্টির মেজাজে। তাতে ঘাটতির ফাঁদে পড়তে পড়তেও বেঁচে গিয়েছে চাষ-আবাদ। বারবার নিম্নচাপের উৎসাহেই মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থেকেছে। কিন্তু শেষ ওভারেও বর্ষার দাপুটে ব্যাটিংয়ে প্রমাদ গুনছে উৎসব। নিম্নচাপও নাছোড়। দুর্বল মৌসুমি অক্ষরেখাকে সক্রিয় করে ওই নিম্নচাপই বর্ষার আমেজ জিইয়ে রেখেছে। আর এ বার তার মতিগতি চিন্তা বাড়াচ্ছে উৎসবে মুখর হয়ে ওঠার জন্য মুখিয়ে থাকা বাংলার।
বর্ষার মরসুমে (৮ জুন থেকে ৮ অক্টোবর) বঙ্গোপসাগরে পাঁচ-ছ’টি নিম্নচাপের আবির্ভাব হলেই এ রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বার ইতিমধ্যেই নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে অন্তত ১০টি। নিম্নচাপের জোগান ঠিক থাকায় গোটা রাজ্যেই এ বারের বৃষ্টিপাত বিগত ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সেই বর্ষণও সুষম ভাবে হতে থাকায় বড় ধরনের বন্যার কবলে পড়তে হয়নি। জুন-জুলাই-অগস্টে ধারাবাহিক ভাবে ধামাকা ব্যাটিং চালিয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বর্ষা হাঁপিয়ে যাবে বলে মনে করেছিলেন আবহবিদদের অনেকেই। কিন্তু তা হয়নি। অক্টোবরের গোড়াতেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের ধুন্ধুমারে আকাশের মুখভার। নিম্নচাপটির মতিগতি যা, তাতে কবে যে সে স্থলভূমিতে ঢুকে দুর্বল হবে, সেই অঙ্কটা কিছুতেই মেলাতে পারছেন না আবহবিদেরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ সোমবার জানান, নিম্নচাপটি ওড়িশা-বাংলা উপকূলেই ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রবিবার রাত থেকেই দমদম এবং কলকাতা সংলগ্ন আরও কয়েকটি জায়গায়
ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে এ দিন সকালেও। ৮ অক্টোবর এ রাজ্য থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা। তার আগে এমন পরিস্থিতির জন্য তৈরি ছিলেন না আবহবিদদের অনেকেই।
এ বার মরসুমের শুরু থেকেই দক্ষিণবঙ্গের উপরে দরাজ ছিল বর্ষা। মাঝখানে কয়েকটি জেলায় ঘাটতি দেখা দিলেও অগস্টের মাঝামাঝি থেকে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একের এর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ তা মিটিয়ে দিয়েছে। এ বার যে-হারে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, সেটা আবহবিদদের কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। এক আবহবিদের কথায়, “এ বার কেন এত বেশি নিম্নচাপ তৈরি হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের (অন্ধ্র থেকে কন্যাকুমারিকা) সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরের (ওড়িশা থেকে বাংলা) তাপমাত্রার ফারাক যত বেশি হয়, তত বেশি নিম্নচাপ তৈরি হয়। এ বার তাপমাত্রার সেই তারতম্য ঠিক কত ছিল, যাচাই শুরু হয়েছে।”
নিম্নচাপের এমন হিড়িক চলতে থাকলে কী হতে পারে?
আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, এ ভাবে নিম্নচাপ তৈরির প্রক্রিয়া যদি চলতেই থাকে, বাংলায় বর্ষা এ বার দীর্ঘায়িত হতে পারে। |