আমলাদের সফরেও এ বার রাশ মমতার
তাঁকে না জানিয়ে কোথাও যেতে পারেন না মন্ত্রীরা। এ বার আমলাদের ক্ষেত্রেও কর্মস্থলের বাইরে পা ফেলতে গেলে তাঁর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক জন আমলা বিদেশ সফর করেছেন। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ যে, এখন থেকে আইএএস অফিসারদের গতিবিধি তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে ঠিক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে জঙ্গলমহল থেকে ফিরেই মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে তিনি এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, কারিগরি শিক্ষা দফতরের সচিব হৃদেশ মোহন বিদেশে রয়েছেন। চটে গিয়ে প্রকাশ্যেই তাঁকে ওই দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অপর এক অফিসারকে ওই দফতরের দায়িত্ব নিতে বলেন তিনি। জঙ্গলমহল থেকে ফিরেই মমতা জানিয়ে দেন, আপাতত কোনও আমলা বিদেশে যেতে পারবেন না। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠকে যোগ দিতে হলেও তাঁর অনুমতি নিতে হবে। বৈঠক যত গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী না চাইলে বিভাগীয় সচিব বা আমলারা দিল্লিও যেতে পারবেন না। পাশাপাশি, গত দু’বছরে আমলারা সরকারি খরচে কোথায় কোথায় গিয়েছেন, তার হিসেবও পেশ করতে হবে। অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে আমলাদের ভ্রমণ-ভাতা বাবদ হওয়া খরচ, কোন অফিসার কত টাকা খরচ করেছেন, তার হিসেবও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করতে হবে।
অতীতে মন্ত্রী রচপাল সিংহ, মদন মিত্রদের একাধিক বার বিদেশ সফরে যেতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তারও অনুমতি মিলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। গত বছর সিঙ্গাপুর সফররত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর তলব পেয়ে সফর কাটছাঁট করে কলকাতা ফিরতে হয়। এ বছরের গোড়ায় দু’দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় কাজ করা দুই অফিসারের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও নিজে যাননি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেবল মাত্র অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার স্পনসরশিপে চলা বিশ্ববঙ্গ সম্মেলেন পাঠিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। যদিও অমিতবাবু সরকারি নিয়ম মেনেই লাস ভেগাস-লন্ডনের সেই সফর করেছিলেন।
রাজ্যের আইএএস অ্যাসোসিয়েশন এই নির্দেশ সম্পর্কে সরকারি ভাবে মন্তব্য করতে চায়নি। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশে রাজ্যের বরিষ্ঠ আমলাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাঁদেরই এক জন বলেন, “এত দিন কোনও অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র দিচ্ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা বৈঠকে যেতেও তাঁর অনুমতি নিতে হবে! ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ বার রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব না থাকতেই পারে। কারণ, অনুমতি সংগ্রহ করতেই হয়তো বৈঠকের দিন পেরিয়ে যাবে!”
এর আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানাতেও এক বার জেলাশাসকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যসচিব অশোকমোহন চক্রবর্তী এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, কোনও জেলাশাসক যদি জেলা সদর ছেড়ে অন্য কোথাও যান, তা হলে মুখ্যসচিবকে জানিয়ে যেতে হবে। সামান্য কারণে জেলাশাসকরা সদর ছেড়ে যেতে পারবেন না। ওই নির্দেশ জারির পর, জেলশাসকদের নানা অজুহাতে মহাকরণে আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু কেন আমলাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী?
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, এখনও আমলাদের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে মমতা সন্দিগ্ধ। মমতা যে গতিতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি তৃণমূল স্তরে নামাতে চাইছেন, আমলাদের কেউ কেউ তাতে বাধা সৃষ্টি করছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও জেলায় জেলায় বিভিন্ন প্রকল্প সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে, যে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র অগস্ট মাসে নতুন করে এক নির্দেশিকা জারি করে বলেছেন, কোনও প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পেশ করার সময় সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাতে হবে, কবে তার রূপায়ণ সম্ভব। সেই সঙ্গেই প্রতি মাসে মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দফতরের কাজের অগ্রগতি জানাতেও বলা হয়েছিল ওই নির্দেশিকায়। এ ছাড়া বিধানসভার সাবজেক্ট কমিটি, ভিজিল্যান্স কমিশনেও অনেক আমলা সরকারের নীতি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সময় মতো পেশ করছেন না বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ পেয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেও মুখ্যসচিব নির্দেশিকা জারি করে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সতর্ক করেছেন এবং সহযোগিতা চেয়েছেন। তাতেও পরিস্থিতি না বদলানোয় এ বার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আমলাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে নামলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.