কলেজ-ফেরত এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের পরে তাঁর পরিবারকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চ। এ বার ওই পরিবারই সেই মঞ্চ থেকে নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিল। প্রতিবাদী মঞ্চের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়ে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে তারা। শুধু সরে আসাই নয়, মঞ্চের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তুলেছে নিহত নিগৃহীতার পরিবার।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছিল ওই ছাত্রীর পরিবারকে। ওই পরিবারের তিন জনকে চাকরির প্রস্তাবও দেয় সরকার। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তাঁরা। আজ, মঙ্গলবার তিন জনকেই চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সোমবার জানান।
ছাত্রীর পরিবারের লেখা চিঠির প্রতিলিপি এ দিন মহাকরণে সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিঠিতে ওই পরিবার অভিযোগ করেছে, ‘কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা মুখোশের আড়ালে নিজেদের আখের গোছাতে কয়েকটি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যমের কুপরামর্শে দোষীদের আড়াল করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জনের রাস্তায় নেমে পড়েছে। ঘটনার পর থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি প্রদান ও আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এই প্রতিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রী সম্বন্ধে ভুল
ব্যাখা দিয়ে আমাদের কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চে সামিল করে।’ এই কারণেই তারা ওই মঞ্চ ছাড়ছে বলে জানিয়েছে ছাত্রীর পরিবার।
ওই পরিবার কেন এমন অভিযোগ তুলছে, তা জানতে আজ, মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় সভা ডেকেছেন কামদুনির বাসিন্দারা। ওই পরিবারকেও ডাকা হয়েছে। প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর মণ্ডল বলেন, “এমন কোনও চিঠি আমরা পাইনি।” মঞ্চের সম্পাদক মৌসুমী কয়াল বলেন, “মৃতার পরিবার এমন মিথ্যা কথা বলতেই পারেন না। ওঁরা নিরুপায়। সাদা কাগজে সই করিয়ে এ-সব
লেখা হয়েছে।”
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘এই প্রতিবাদী মঞ্চ মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পরিবারের সমস্যা উপলব্ধি করেন। মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা ও পরিবারের তিন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাস ও অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা এনে দিয়েছে। তাই আজ আমরা প্রতিবাদী মঞ্চ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ চিঠির শেষে সই রয়েছে নিহত ছাত্রীর মা,
কাকিমা এবং ছোট ভাইয়ের। টিপসই রয়েছে বাবার। চিঠিতে সই নেই নিহতের দাদার।
এই চিঠির ব্যাখ্যা জানার জন্য অবশ্য এ দিন নিহত ছাত্রীর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোনও ধরেননি তাঁরা। তবে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের ভাল চান, মঙ্গল চান। মৃতার পরিবার সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকুন, তাতেই মঙ্গল হবে। দোষীরাও সাজা পাবে।” |