সময়ের সঙ্গে বদলেছে সীমান্ত। কিন্তু সীমান্তের নস্করী মায়ের পুজোকে ঘিরে মানুষের আবেগে ভাটা পড়েনি এতটুকু। পুজোর সময় এলেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন মাথাভাঙার দু’পারের মানুষ। ওপার বাংলার নিতাই সাহা, দুলাল দেবনাথ বলেন, “এই তো সেদিনের কথা। সীমান্ত তখনও ছিল। কিন্তু এত কড়াকড়ি ছিল না। পুজো কিংবা ঈদের সময়গুলোতে অনায়াসেই সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত করা যেত।” আর এ পার বাংলার ত্রিদিব বিশ্বাস, শেখর মণ্ডলরা জানাচ্ছেন, “তেমন দিন আর ফিরবে না।”
হোগলবেড়িয়া সীমান্তের অন্যতম প্রাচীন পুজো নস্করী মায়ের পুজো। একটা সময় এই পুজোতে বাংলাদেশের মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। হোগলবেড়িয়ার নস্করী মায়ের পুজোকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে অনেক লোককথা। কথিত আছে আনুমানিক ৯৫০ বঙ্গাব্দে এই পুজোর সূচনা করেন মহাদেব নস্কর নামে এক সন্ন্যাসী। |
প্রতিমা তৈরি দেখতে খুদেদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই সন্ন্যাসীর নাম অনুসারেই এই পুজো নস্করী মায়ের পুজো বলেই পরিচিত। এলাকার প্রবীণ লোকজন জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের এক জমিদার নৌকা করে দুর্গা মূর্তি ও পুজোর উপাচার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ শুরু হয় ঝড়, বৃষ্টি। সেই জমিদার আর যেতে না পেরে আশ্রয় নেন নদীর পাড়ের ওই মহাদেব নস্করের কাছে। পুজো হয় সেখানেই। তারপর দেবীর স্বপ্নাদেশে পঞ্চমুণ্ডের বেদী তৈরি করে ওই সন্ন্যাসীই তান্ত্রিক মতে পুজো শুরু করেন। এখন অবশ্য বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।
নস্করী বাড়ির গৌরসুন্দর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরনো রীতি অনুসারে কালানুক্রমে এখনও পুরোহিত আসেন বর্ধমান থেকে। একটা সময় বলি দেওয়া হলেও এখন সেসব বন্ধ। পুজো উপলক্ষে বিরাট মেলা বসে এখানে।” একটা সময় নবমীর দিন থেকে নস্করী মায়ের পুজো দেখতে উপচে পড়ত ওপার বাংলার মানুষের ভিড়। তারপর কাঁটাতার, বিএসএফের কড়াকড়িতে এখন আর কেউ আসতে পারেন না। তবে শেষ কয়েক বছর আগেও প্রণামী বাক্সে মিলত বেশ কিছু বাংলাদেশি মুদ্রা।
বিএসএফের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “ভিসা-পাসপোর্ট করে দেশে এলে অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা সীমান্তের নিয়ম ভাঙতে দিতে পারি না।” তেহট্টের এসডিপিও সুনীল সিকদার বলেন, “হোগলবেড়িয়ার নস্করী মায়ের পুজো উপলক্ষে অষ্টমীর দিন ভিড় উপচে পড়ে। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ না করতে পারে সে ব্যাপারে বিএসএফকেও সতর্ক করা হয়েছে।”
হাসতে হাসতে কুষ্টিয়ার সুবল সাহা বলছেন, “সশরীরে যাওয়া হবে না বুঝলাম। কিন্তু মনকে কি আর কাঁটাতার দিয়ে আটকানো যায়?” |