গ্রেফতার এড়াতে শেষ পর্যন্ত আগাম জামিন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে দলের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। রাহুলের পরামর্শেই আপাতত তাঁর বহরমপুর সফরও পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অধীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ফিরলে তাঁকে বিষয়টি জানাব। তারপর আইনি পরামর্শ নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।” আজ, মঙ্গলবার বিকেলেই তাঁর বহরমপুর পৌঁছনোর কথা ছিল। বুধবার, গাঁধী জয়ন্তী অনুষ্ঠান-সহ বহরমপুর ও কলকাতায় বেশ কয়েকটি দলীয় কর্মসূচিতেও যোগ দেওয়ার কথা ছিল রেল প্রতিমন্ত্রীর।
তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ
খুনের ঘটনায় দিন কয়েক আগে চার্জশিট জমা দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। সেই চার্জশিটে অন্য আট অভিযুক্তের সঙ্গে নাম ছিল অধীর চৌধুরীর। তবে, সেখানে তাঁকে ‘পলাতক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল পুলিশ। বহরমপুরে ফিরলে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে, দেখা দিয়েছিল এমন সম্ভাবনাও।
অধীর অবশ্য পাল্টা ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার রাতেই বহরমপুর পৌঁছবেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন ছিল: “গত কয়েক মাসে বহু সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বহরমপুর ও কলকাতায় গিয়েছি। পঞ্চায়েত ও রেজিনগর উপ-নির্বাচনের সময়েও বহরমপুরেই ছিলাম।
রাজ্য পুলিশ তো আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিল। তার পরেও বলছে আমি পলাতক?”
রবিবার পর্যন্ত বহরমপুর যাওয়ার সিদ্ধান্তেই তাই অনড় ছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ছবিটা বদলে যায় সোমবার। এ দিন সকালে দলের হাইকমান্ডের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা
হয় তাঁর। কথা হয় রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও। দলের সহ-সভাপতি তাঁকে বলেন, তৃণমূল সরকার ‘ষড়যন্ত্র’ করেই যে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তা স্পষ্ট। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত ‘আইনি পরামর্শের’ পথে হাঁটাই স্থির করেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারের খাঁড়া মাথায় নিয়ে বহরমপুর যাওয়া আদালতকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করার সামিল হত। সেই জন্যই তাঁকে আপাতত দিল্লিতে থেকেই আইনি পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে অধীর অবশ্য জানান, নিছক সাংসদ থাকলে গ্রেফতারের পরোয়া করতেন না। কিন্তু এখন তিনি মন্ত্রী হওয়ায় সরকারের ‘সম্মানের’ প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে।
এ দিন দিল্লিতে তিনি অবশ্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন চেনা সুরেই। অধীর বলেন, “বাম আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বার বার পুলিশের হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন তাতে পুলিশের উপর তাঁর এমন নির্ভরতা ভাবা যায় না।” মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে রাজনৈতিক জমি খুঁজতেই শাসক দল তাঁকে যে কোনও প্রকারে জেলে পুরতে চায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অধীর বহরমপুরে এলেই কি তাঁকে গ্রেফতার করা হত?
এ দিন বহরমপুরে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার বলেন, “কামাল শেখ খুনের মামলায় অধীর চৌধুরী অভিযুক্ত। কিন্তু তিনি শহরে এলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কিনা তা জেলা পুলিশই ঠিক করবে।” এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “দেখুন না কী হয়!”
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলি বিশ্বাসের আদালতে ৩৯৬ পাতার চার্জশিট জমা দেন বহরমপুর থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নীলাঞ্জন রায়। মামলায় সাক্ষী রয়েছেন ৫১ জন। অধীরের বিরুদ্ধে অন্য অভিযুক্তদের মতোই খুন, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দশ অভিযুক্তের ৮ জন এখন জেলে। এক জন তদন্ত চলাকালীন মারা গিয়েছেন। আর, অভিযুক্ত রেল প্রতিমন্ত্রীকে ‘পলাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে।
বহরমপুরে অধীরের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ অবশ্য ওই চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানান, কামালের স্ত্রী নীলা হামিদ ও মেয়ে করিশমা বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁরা অধীরকে ওই খুনের ষড়যন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর প্রশ্ন, আড়াই বছর আগের ঘটনা হওয়া সত্ত্বেও এত দিন গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি কেন? |