বহরমপুরে তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনের মামলায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিলেও এ ব্যাপারে আগাম জামিনের আবেদন করবেন না বলে জনিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। এ দিন দিল্লি থেকে তিনি বলেন, “খুনের চক্রান্তকারী তো আমি নই, আমাকে ওই মামলায় জড়িয়ে দেওয়াটাই তো সরকারের একটা চক্রান্ত। আমি কেন আগাম জামিনের আবেদন করতে যাব?”
অধীরের অভিযোগ, এ ঘটনা অবশ্য ‘নতুন নয়’। তাঁর কথায়, “বামফ্রন্ট সরকারও বিভিন্ন খুনের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কংগ্রেসের ক্ষমতা হ্রাস করতে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলকেও যে সে পথেই হাঁটতে হবে এ আর নতুন কী!” বাম জমানায় অধীরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বার খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। তবে, সে সব ক’টি মামলাতেই তিনি বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছিলেন। |
চার্জশিটে বহরমপুরের সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রীকে ‘পলাতক’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অধীরের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, “অধীরবাবু কেবল মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতিই নন, একই সঙ্গে তিনি বহরমপুরের সাংসদ এবং রেল প্রতিমন্ত্রী। সেই সুবাদে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে গত কয়েক মাসে তিনি এই জেলায় ও জেলার বাইরে বহু সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। কামাল খুনের পর রেজিনগর বিধানসভার উপ-নিবার্চনে ও সদ্য সমাপ্ত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও একাধিক প্রকাশ্য জনসভায় উপস্থিত হয়েছেন। তারপরও পুলিশ কোন যুক্তিতে তাঁকে পলাতক বলে আদালতে চার্জশিট জমা দিল বুঝতে পারছি না।” তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ রাজ্যে এলে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের, সেক্ষেত্রে অধীরের রাজ্য সফরে পুলিশ মন্ত্রীর নিরাপত্তা দিল কী করে?
মন্ত্রী নিজে অবশ্য জানান, ২ অক্টোবর বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে গাঁধী-জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মতো এ বারও উপস্থিত থাকবেন তিনি। অধীর বলেন, “জানিয়ে রাখছি আগামী বুধবার, বহরমপুরে মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে হাজির থাকব।”
ওই দিন কি ‘পলাতক’ অধীরকে গ্রেফতার করবে পুলিশ? মুর্শিদাবাদ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “অপেক্ষা করুন। দেখুন না কী হয়।”
তবে আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে অধীরের নাম থাকার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে হাজার খানেক কংগ্রেস সমর্থক পুলিশ সুপারের বহরমপুরের বাংলোর সামনে বিক্ষোভ দেখান। নেতৃত্বে ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সদ্য নির্বাচিত সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার, বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী প্রমুখ। বিক্ষোভ দেখানোর পর মিছিল করে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা বহরমপুর শহর পরিক্রমা করেন। বিক্ষোভ মিছিল হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েও।
অধীরবাবুকে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি দিতে হবে দাবি তুলে এ দিন কলকাতার কংগ্রেস দফতর থেকে মৌলালি পর্যন্ত মিছিল করে যুব কংগ্রেস। মৌলালি মোড় কিছুক্ষণ অবরোধও করে তারা। একই দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা। আজ, রবিবারও রাজ্যের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ধিক্কার মিছিল ও পথসভা করা হবে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়েছে, আজ, রবিবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। সোমবার, জেলার সব ব্লকেই বেলা ১১টা থেকে ১২টা এক ঘণ্টার পথ অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৩ অক্টোবর জেলার প্রতিটি থানার সামনে বেলা দু’টো থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখাবেন কংগ্রেস কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ১৫ মে সন্ধ্যায় বহরমপুরের মোহনের মোড়ে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ। মোটরবাইকে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন কামাল। তাঁর পিছনে ছিল মেয়ে করিশ্মা। খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। জখম হয়েছিলেন করিশমাও। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন কামাল। করিশমা এ দিন বলেন, ‘‘অধীর চৌধুরীর নির্দেশে বাবাকে খুন করা হয়েছে। ধৃতেরা এমনই দাবি করেছে বলে শুনেছি। তাই অধীরের নাম চার্জশিট জমা দেওয়ায় আমরা খুশি।”
ওই ঘটনার সময়ে অধীর ছিলেন জেলা কংগ্রেস ভবনে। অধীর বলেন, “পার্টি অফিসেই ছিলাম। বোমার আওয়াজ শুনে দলীয় কর্মীদের বলেছিলাম, থানায় খোঁজ নিতে। আর সেই মামলাতেই আমাকে জড়িয়ে নির্বাচনের আগে জেলা কংগ্রেসকে দুর্বল করতে চাইছে শাসকদল। সিপিএমের দেখিয়ে দেওয়া পথেই নেমেছে তৃণমূল।”
|
মৃতদেহ পড়ে ১১ ঘণ্টা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল নবদ্বীপের রামসীতা পাড়ার বাসিন্দা তাপস বিশ্বাসের (৪৮)। শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপ্রিয়া হল স্টেশনের ওই ঘটনার পর টানা এগারো ঘণ্টা ধরে প্লাটফর্মে পড়েছিল তাঁর দেহ। শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটার পরে কাটোয়া জি আর পি পুলিশ দেহটি নিয়ে যায়। নবদ্বীপধাম স্টেশনের ম্যানজার প্রণবকুমার কর জানান, আমাদের কাছে শনিবার সকাল ৮টা ৪০-এ বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন থেকে একটি লিখিত মেমো পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। এর পরই আমরা যোগাযোগ করি কাটোয়া জি আর পি থানার সঙ্গে।” বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনের ঠিকাদার সুরজিত বিশ্বাসের সাফাই, পরে মেমো পাঠানো হলেও আগেই ফোনে নবদ্বীপধাম স্টেশন ম্যানেজারকে জানানো হয়। কাটোয়া জি আর পি থানার ও সি তাপস চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “নবদ্বীপধাম স্টেশন থেকে পাঠানো মেমো আমরা পেয়েছি দশটা পাঁচে। তারপরই দেহ তোলা হয়। ঠিকাদারের গাফিলতিতে এমনটা হল।” |