৪২ জনকে তো সামলানো গেল! কী হবে ছ’হাজার আবেদনকারীকে নিয়ে?
সারদায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন সেই রকম ছ’হাজার আবেদনপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাওড়া জেলা পুলিশ-প্রশাসন। পুজোর আগেই সারদা-কাণ্ডে এক লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তকে চেক দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার এই কর্মসূচিরই সূচনা করেন করেছেন তিনি। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে অন্যান্য জেলার সঙ্গে হাওড়ারও ৪২ জন ক্ষতিগ্রস্তের হাতে চেক তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরে এই জেলার আরও ছ’হাজার ক্ষতিগ্রস্তের হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে। তা-ও আবার পুজোর আগে। মানে হাতে মেরেকেটে দিন দশেক সময়। শ্যামল সেন কমিশন ঝাড়াই-বাছাই করে এঁদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসনের কাছে। তালিকা যাচাই করে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলানোর ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকেই। আর এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা।
প্রতিটি নামের ক্ষেত্রে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ করতে হবে। জেলা পুলিশকে এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন নানা কারণে বিভিন্ন ব্যক্তির ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ করতে হয়। এর মধ্যে যেমন রয়েছেন চাকুরিপ্রার্থী, তেমনই আছেন পাসপোর্টের আবেদনকারী। সংখ্যাটি নেহাত কম নয় বলে পুলিশ কর্তাদের দাবি। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব থাকায় পুলিশ নির্দিষ্ট সময়ে এই কাজটিও অনেক সময়ে করে উঠতে পারে না। তার উপরে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ছ’হাজার প্রার্থীর ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ কী ভাবে করা যাবে, সেই উপায় খুঁজে বের করতে এখনও অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন পুলিশ কর্তারা।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক যদিও জানিয়েছেন, চাকুরিপ্রার্থী বা পাসপোর্টের আবেদনকারীর যে ভাবে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ হয়, এই কাজটি ততটা জটিল নয়। এ ক্ষেত্রে নামের যে তালিকা এসেছে, তা শুধু প্রকৃত ব্যক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এত কম সময়ে এই কাজটিও করে ওঠা খুব কঠিন বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা। জেলা প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ আবার অন্য। ক্ষতিগ্রস্তদের নামে চেক দেওয়া হবে। যাঁদের নামে কোনও নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দিতে হবে প্রশাসনকেই।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন থানাওয়ারি নামের তালিকা তৈরি ছাড়া আর কোনও কিছুই কার্যত করে উঠতে পারা যায়নি বলে জেলা গ্রামীণ পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিন সন্ধ্যাতেই তালিকা অবশ্য বিভিন্ন থানায় চলে গিয়েছে। সেখান থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক নামের তালিকা তৈরি হবে।
এ দিন জেলা গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আবেদনকারীদের নিয়ে ব্লকওয়ারি শিবির করা যেতে পারে। সেখানে এক দিকে যেমন পুলিশ থাকবে, অন্য দিকে থাকবেন ব্লক প্রশাসন এবং ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। শিবিরে একই সঙ্গে অনেক আবেদনকারীর ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজটি করা যাবে। জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “যত অসুবিধাই হোক কাজ করতেই হবে। কী পদ্ধতি নেওয়া যায়, তার আলোচনা চলছে।” |