সম্পাদকীয় ২...
স্বার্থের মহিমা
রমর্দন ভাল, তবে টেলিফোনে আলাপও মন্দ নয়। সেই আলাপ যদি তিন দশক পরে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তো কথাই নাই। রাষ্ট্রপুঞ্জের অলিন্দে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামার সহিত করমর্দন করেন নাই, কিন্তু দুই নেতা টেলিফোনে কথা বলিয়াছেন। ওয়াশিংটন ও তেহরানের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে শেষ সরাসরি কথা হয় ১৯৭৯ সালে। অতঃপর ইসলামিক বিপ্লব, নূতন ইতিহাস। মহম্মদ আহমদিনেজাদের আমলে সেই ইতিহাস নূতন ‘উচ্চতা’য় উঠিয়াছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় দাঁড়াইয়া তাঁহার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শয়তান’ আখ্যা দানের কাহিনি অ-বিস্মরণীয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইরানে রুহানির নির্বাচনের পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে উত্তরণের লক্ষণ দেখা যাইতেছে, তাহার তাৎপর্য অস্বীকার করিবার উপায় নাই। রুহানির সামনে এখনও বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। কেন তিনি ওবামার সহিত কথা বলিয়াছেন, এই ‘অপরাধ’-এ দেশে ফিরিয়া তিনি, কেবল প্রতিবাদ নহে, নিক্ষিপ্ত পাদুকারও সম্মুখীন হইয়াছেন। এবং, তাঁহার শান্তিকামনা থাকিলেই চলিবে না, দেশের সর্বোচ্চ শাসনদণ্ড যাঁহাদের করায়ত্ত, সেই ধর্মীয় নায়কদের সম্মতি চাই। কিন্তু আপাতত রুহানিই ওয়াশিংটনের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ভরসা। সুতরাং ওবামা তাঁহার বিদেশ সচিব জন কেরিকে ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সহিত আলোচনার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন। অতঃপর ঐতিহাসিক টেলিফোন।
ইরান সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের এই নূতন ভাবনা ও অবস্থানের পিছনে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদেশ নীতির পরিবর্তিত অগ্রাধিকারের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। ইহার সূচনা যদি হইয়া থাকে ইরাক হইতে বাহিনী প্রত্যাহারে, অগ্রগতি তবে আফগানিস্তান হইতে সেনা প্রত্যাহার এবং সেখানে তালিবান ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হস্তে কাবুলের শাসনক্ষমতা ন্যস্ত করার লক্ষ্যে শান্তি-আলোচনার প্রক্রিয়া চালু করায়। লিবিয়ায় মোয়াম্মার গদ্দাফিকে গদিচ্যুত করার পশ্চিমি অভিযানেও ওবামা প্রশাসন কতকটা নিমরাজি হইয়াই অন্তিম পর্বে যোগদান করিয়াছিল। উত্তর কোরিয়ার শত প্ররোচনা ও পরমাণু নিরীক্ষার আস্ফালনও ওবামাকে পিয়ংইয়াংয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ তীব্রতর করিতে কিংবা আরও চরম কোনও সামরিক পদক্ষেপ করিতে প্রাণিত করে নাই। সিরিয়ায় ব্রিটিশ-ফরাসি-জার্মান চাপ সত্ত্বেও ওয়াশিংটন শেষাবধি হুমকিতেই সীমিত থাকিয়াছে, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রসম্ভার উদ্ধার করিতে রাশিয়ার প্রস্তাবই মানিয়া লইয়াছে। সর্বশেষ ইরান।
বারাক ওবামা সম্ভবত মনে করিতেছেন, ক্ষুদ্র ও দুর্বলকে সবলের আধিপত্য শিরোধার্য করিতে বাধ্য করার যে নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের কালে প্রাসঙ্গিক ছিল, এখন আর তাহা নাই। মার্কিন বিদেশ নীতিকেও এই পরিবর্তিত বিশ্ব-পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাইতে হইবে। ওবামা জানেন, অদূর ভবিষ্যতে তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানের উপর নজর ও নিয়ন্ত্রণ রাখিতেও অনির্ভরযোগ্য পাকিস্তান অপেক্ষা রুহানি শাসিত ইরান বেশি নির্ভরযোগ্য প্রতিপন্ন হইতে পারে। অন্য দিকে, রুহানিও সতর্ক। যথার্থ কূটনীতিতে অহমিকা বা আবেগের স্থান নাই, স্বার্থই একমাত্র ঈশ্বর। ভারতীয় বামপন্থীদের সেই বোধ আজও না হইতে পারে, না হইলে পৃথিবীর কিছু যায় আসে না, তাঁহাদের হাতে আপাতত পশ্চিমবঙ্গের ভারও নাই, তেহরান এবং ওয়াশিংটনের নীতিকারদের বোধোদয় হইলেই চলিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.