|
|
|
|
আগন্তুক এসে দিয়ে গেলেন গুরুত্বপূর্ণ সূত্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
|
তদন্তে এগোনোর পথে বন্ধ দরজাটা যেন ঝপাৎ করে খুলে গেল! সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের কাছে অচেনা, অপরিচিত এক ব্যক্তি এসে এমন সূত্র দিয়েছিলেন, যার ফলে বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালুপ্রসাদ যাদব-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে পড়েছিল।
পটনায় তদন্ত শুরু হওয়ার পর তখন তিন মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তেমন কিছুই হয়নি। একটু ঢিলেঢালা ভাবও এসেছে তদন্তকারীদের মধ্যে। সর্বক্ষণই মনের মধ্যে একটা খচখচানি। সেটা ১৯৯৬ সালের শীত। পটনা শহরের ঠান্ডা বাতাসে ছুরির ফলা। ভারত কোকিং কোল লিমিটেড (বিসিসিএল)-এর অতিথিশালায় সিবিআইয়ের ক্যাম্প অফিস। সেখানেই শীতের এক পড়ন্ত বিকেলে আচমকা হাজির সেই ব্যক্তি। সিবিআইয়ের অফিসারদের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা, অপরিচিত। সেই আগন্তুকই জানালেন, শহরের এক প্রান্তে একটি পর্যটন সংস্থার অফিসে গেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
টেলিফোনে একটানা এতটা বলে থামলেন সমীররঞ্জন মজুমদার। সিবিআইয়ের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি এখন সিকিম সরকারের ভিজিল্যান্স কর্তা। ১৯৯৬ সালের সেই সময়ে ছিলেন সিবিআইয়ের ডিএসপি। সিবিআইয়ের তদানীন্তন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে উড়িয়ে এনেছিলেন পটনায়। তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। সমীরবাবুর কথায়, “অচেনা ওই ব্যক্তি ওই তথ্য দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যে আমরাও অফিস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সামান্য, অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই একটি তথ্যের জন্যই এত দিন ওঁত পেতে ছিলাম আমরা।”
কিন্তু তথ্য পাওয়াটা যত সহজ ছিল, তথ্য পাওয়ার পর কাজটা হাসিল করা ছিল ততটাই কঠিন। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরে দেখা যায়, সেই পর্যটন সংস্থার অফিসে তালা পড়ে গিয়েছে। প্রায় ন’জন অফিসার হানা দিয়েছিলেন শীতের রাতে। তাঁদের অভিজ্ঞ চোখ অচিরেই বুঝে নিয়েছিল, সিবিআই যে হানা দিতে পারে, সেটাও আগাম খবর হয়ে গিয়েছে। ফলে, সেই গোটা রাতে কৌশল করে পর্যটন সংস্থার ওই অফিসের চার পাশে ছদ্মবেশে নজরদারি চালিয়েছিল সিবিআই। সমীরবাবু এ দিন গ্যাংটক থেকে ফোনে বলেন, “আমাদের আশঙ্কা ছিল, সেই রাতেই অফিস খুলে কেউ তথ্য লোপাট করতে পারে।”
ওই কনকনে শীতের রাতে কেউ হাফপ্যান্ট-গেঞ্জি, কেউ পাজামা-পাঞ্জাবি পরে, কেউ আবার কাঁধে গামছা ফেলে হাওয়াই চটি পায়ে দূর থেকে নজর রাখছিলেন ওই অফিসের দিকে। সকাল ন’টায় অফিস খোলা হতেই স্ব-মূর্তিতে সিবিআই অফিসারেরা ঢুকে পড়েন সেখানে। সমীরবাবুর কথায়, “ওই অফিস থেকে পাওয়া কাগজপত্র ঘুরিয়ে দিয়েছিল গোটা তদন্তের মোড়। লালুপ্রসাদ যাদব-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে নিয়মিত বিমান টিকিট যে বিনা পয়সায় পাঠানো হত, তা জানা গিয়েছিল ওখান থেকে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল আরও সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।”
তদন্তকারীদের মাথায় ছিলেন খোদ উপেন বিশ্বাস। যিনি নিজেই আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী। সোমবার এই নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। তবে, মুখ খুলেছেন পশ্চিম সিংভূমের তদানীন্তন জেলাশাসক। সেই অমিত খারে এখন কেন্দ্র সরকারের মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব। সিবিআই মামলা শুরু করার আগেই প্রধানত তাঁর উদ্যোগেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। তিনিই বিহারে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৫৪টি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সিবিআই সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত করে। এ দিন অমিতবাবু বলেন, “এত দিনের আইনি লড়াইয়ের পরে এই বিচার শুনে খুব ভালো লাগছে।” |
|
|
|
|
|