সিনেমা হলে রেকর্ড ব্যবসা করার পরে পুজোর বাজারেও দুরন্ত গতিতে চলছে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি।’ লড়াইটা শুধু রুপোলি পর্দায় আটকে নেই, আছড়ে পড়েছে পুজোর বাজারেও। কাটোয়ায় টিনএজারদের এ বার প্রথম পছন্দ শাহরুখ খানের চেন্নাই এক্সপ্রেস শার্ট বা টি-শার্ট। আর তার সঙ্গে ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানিতে রণবীর কাপুরের বেলুন প্যান্ট।
কাটোয়া সার্কাস ময়দানের এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক বললেন, “কমবয়েসীদের ৮০ শতাংশই চেন্নাই এক্সপ্রেস জামার দিকে ঝুঁকছেন। ফ্যাশনে এখনও এগিয়ে শাহরুখই।” তবে রণবীরও পিছিয়ে নেই। তরুণদের অনেকেই বেলুন প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্টে পাড়া মাতাতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। এছাড়া জিনস্, কুর্তা, পাঞ্জাবির চাহিদা তো সারা বছরের মতো পুজোর সময়েও তুঙ্গে। পুরুষদের একটা অংশের আবার মন মজেছে পাঠান কুর্তায়। |
তবে শাহরুখ-রণবীরের লড়াই যতই হোক না কেন, পুজোর বাজার কিন্তু একচেটিয়া সেই মেয়েদেরই। শাড়ি থেকে সালোয়ার কামিজ, কুর্তি থেকে জিনস্ সবেরই হাট সাজিয়ে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ বলা তো যায় না কখন কোনটা মনে ধরে। কলেজ পড়ুয়ারা যেমন সাবেক পোশাকের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে কিনছেন জিনস্, ক্যাপ্রি, বাহারি টপ। এছাড়া এ বারের পুজোর বাজার ছেয়ে গিয়েছে চান্দেরি চুড়িদারে। হাজার দেড়েক টাকা থেকে শুরু এই চুড়িদারে ১৮ থেকে ৩৮ সবাই সাবলীল। এছাড়া রয়েছে আ্যাপল কাটের লম্বা চুড়িদার, যার দাম হাজার থেকে চার হাজারের মধ্যে, রয়েছে বড় ঘেরওয়ালা কলিদারও। কাটোয়ার এক বস্ত্র বিপণীর কর্ণধার শ্রীকৃষ্ণ বণিক বলেন, “ডিজাইনার চুড়িদার ছাড়া তরুণীদের পছন্দ এখন জিনস্ আর টপ। প্রত্যেকেই সেটাই চাইছে।”
কিন্তু নিম্নচাপ? সকাল থেকে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে ভিড় হচ্ছে বাজারে? দেখা গেল, পুজোয় নিজেকে আর নিজের প্রিয়জনেদের সাজানোর টানকে কাবু করার ক্ষমতা এ বৃষ্টির নেই। রঙেবেরঙের ছাতা নিয়ে বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বাজারে বেরিয়ে পড়েছে মহিলা মহল। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে শাড়ি দেখার ফাঁকে ফুচকাওয়ালার কাছে টুক করে দাঁড়িয়ে পড়া বা গরম রোলে কামড় দিতে দিতে চলছে শাড়ি নিয়ে সাত কাহন। সুতি জামদানি থেকে সিল্ক জামদানি, বালুচরি থেকে পার্সি সিল্ক নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, সুতির জামদানি সাতশো থেকে আটশো, সিল্ক জামদানি আঠেরোশা থেকে দু’হাজার দামের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। পার্সি সিল্ক মিলছে হাজার চারেকে। আর অষ্টমীর সকাল বা দশমীর জন্য তাঁতের শাড়ির চাহিদা তো রয়েইছে।
আর মা-মাসিদের সঙ্গে হাত ধরে যারা ঘুরছে তাদের বাজারও ভালই জমেছে। জিনস্, ধুতি প্যান্ট, নানা কাটের স্কার্ট, টপ, চুড়িদার, রঙিন টি-শার্ট, চেন লাগানো শার্ট লিস্টটা নেহাত কম নয়। সঙ্গে রয়েছে জামার রঙের নেলপালিশ বা জুতো কেনার আবদার। আর না দিলেই ব্যাস! হাত পা ছড়িয়ে, ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না বা টেডিকে নিয়ে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকা। তাই ছেলেমেয়ের আবদার মেটাতে রোলে কামড় লাগিয়েই বৃষ্টি মাথায় ছুটছেন সমর্পিতা দে, বিদিশা সরকারেরা। কাছারি রোডের গাঁধী মার্কেটের এক বস্ত্র বিপণির মালিক বিধান সাহা বললেন, “বৃষ্টিকে আমাদের পুজোর বাজার ভয় পায় না। দু’এক ঘণ্টা থমকে থাকলেও তারপরেই গমগমিয়ে চলে বাজার।”
বৃষ্টিকে হেলায় হারিয়ে, ‘দিওয়ানি জওয়ানিকে’ সঙ্গে নিয়ে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেসে’র গতিতে এভাবেই ছুটছে কাটোয়া পুজোর বাজার। |