কুশল রায়, সাথী ঘোষ, সুব্রত কোঁড়া, কার্তিক মুন্ডা। এদের প্রত্যেকেরই বাড়ি কালনা ২ ব্লকের বড়ধামস পঞ্চায়েতের বিরুহা, বারডেলিয়া, দমদমার মতো অজগ্রামে। এরা প্রত্যেকেই সরকারি নথিতে এক সময় স্কুলছুট ছিল। কিন্তু এখন নেই। এদের স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় কিশলয় সংস্থা।
প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি ও রবির সন্ধ্যায়, বড়ধামস পঞ্চায়েতের আশেপাশের খুদে পড়ুয়ারা বিরুহা গ্রামের কুমার বাড়ির দিকে হাঁটা লাগায়। ওই চার দিন এখানেই ‘কিশলয় ফ্রি কোচিং সেন্টারে’র উদ্যোগে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির গরিব ছাত্রছাত্রীদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানো হয়। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল থাকলেও এখানে শিক্ষার হার কম। অভাবের জন্য অনেকেই মাঝপথে স্কুল ছেড়ে দেয়। এলাকায় স্কুল ছুট আটকাতেই ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ানোর পরিকল্পনা নেয় স্থানীয় বিরুহা মৈত্রী সঙ্ঘ। ক্লাবের সম্পাদক ও কিশলয়ের শিক্ষক আরসেদ আলি মণ্ডল বলেন, “আমরাই প্রাথমিক উদ্যোগ নিয়ে কিশলয় সংস্থাটি তৈরি করি। প্রথমে ক্লাবের ঘরে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রচুর ছাত্রছাত্রী যোগাযোগ করায় প্রয়োজন হয় বড় ঘরের। তাই কুমারবাড়িতে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, কুমার বাড়ির সদস্যরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকায় ওই বাড়িটি পেতে অসুবিধা হয়নি। বর্তমানে ২১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন এই সংস্থায়। প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাশ্রম দেন। তাঁদের কেউ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, কেউ গৃহবধূ, কেউ শিক্ষক, কেউ বা বেকার। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন একশ ছুঁইছুঁই।
আর্থিক সংগতি না থাকায় গ্রামের অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারতেন না। তাই এই উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দারাও খুশি। স্থানীয় বাসিন্দা পরেশ সিংহ বলেন, “খেতমজুরি করি। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বাইরে টিউশন পড়াবার টাকা নেই। কিশলয় তৈরি হওয়ার পর থেকে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে।” কিশলয়ের ইনচার্জ জয়গোপাল মণ্ডলের কথায়, “আপাতত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ক্লাব সদস্যদের টাকাতেই চলছে এই সেন্টার। এলাকার মানুষও সহযোগিতা করেন।” কিশলয়ের ক্লাসরুমে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই চক, ডাস্টার, আলো দিয়ে সাহায্য করেছেন। সর্বশিক্ষা মিশনের কালনা মহকুমা ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য তথা কালনা পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলছুটদের ফেরাতে সরকারি ভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে তার পরেও কিশলয় সংস্থাটি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা প্রশংসনীয়।”
কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডু জানান, “এ বছর কালনা ২ ব্লক থেকে বেশ কয়েকটি ক্লাব সরকারি অনুদান পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিরুহা মৈত্রী সঙ্ঘও। ওই সংস্থা যাতে আরও ভালভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে চেষ্টা করা হবে।” |