মেয়েকে বাঁচাতে অন্য লড়াই শুরু বাবা-মায়ের
টানা ছ’বছর কোমায় থাকার পরে সকলকে আশ্চর্য করে দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনের দিকে ফিরছিল সুমনা। রোগের সঙ্গে লড়াইটা খানিকটা হলেও জিততে চলেছিল সে। কিন্তু এ বার লড়াই শুরু হয়েছে অন্য এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে। এই মুহূর্তে ১৬ বছরের ওই মেয়েটির পরিবারের কাছে সেই প্রতিপক্ষই বেশি শক্তিশালী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দুরারোগ্য উইলসন রোগে আক্রান্ত সুমনাকে বাঁচাতে গেলে এমন একটি ওষুধ প্রয়োজন যা বিদেশ থেকে আনাতে হয়। খরচ মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকা। টানা বছর চারেক সেই ওষুধ খেলে বেঁচে থাকার বিষয়টি খানিকটা নিশ্চিত হবে ওই কিশোরীর। একমাত্র সন্তানের প্রাণরক্ষায় আপাতত তাই মহাকরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ভবনের দরজায় ঘুরছেন সুমনার মা-বাবা। আর্থিক সাহায্যের আশায়।
একটি জটিল, জিনঘটিত রোগ উইলসন। আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে গোটা পৃথিবীতেই এই রোগকে বিরল তালিকায় ফেলা হয়। উইলসন রোগে শরীরের বিভিন্ন অংশে তামা জমে মস্তিষ্ক, যকৃত, কিডনি-সহ বিভিন্ন অঙ্গ বিকল করে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হওয়ায় রোগীর দেহ সম্পূর্ণ অকেজো হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যু হয়। সাধারণভাবে বাবা-মা এই রোগের বাহক হলে সন্তানের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই আচমকা এই রোগ জানান দিতে থাকে সুমনার শরীরে। দমদমের একটি স্কুলে পড়ত সুমনা। পড়াশোনায় মেধাবী মেয়েটির ঝোঁক ছিল নাচ, গান, আঁকা, খেলাধুলোতেও। এক এক করে সব বন্ধ হল। এক সময়ে কোমায় চলে গেল সে। গোড়া থেকেই বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে ভর্তি ছিল সুমনা। কিন্তু কতদিনই বা এক টানা এ ভাবে শয্যা আটকে রাখা যায়? তাই যাবতীয় সহানুভূতি সত্ত্বেও কোমা থেকে বেরোনোর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুমনাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আপাতত বছরের কয়েক মাস বাড়ি আর কয়েক মাস হাসপাতালএ ভাবে কাটছে তার জীবন। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত বাবা-মা।
সুমনার বাবা কাননবিহারী পাল একটি ছোট ছাপাখানা চালান। তিনি জানিয়েছেন, এই রোগের যে ওষুধ এ দেশে পাওয়া যায়, তা নিতে পারছিল না মেয়ের শরীর। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জেরে অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এর পরে চিকিৎসকদের থেকেই বিদেশে তৈরি একটি ওষুধের সন্ধান পান তাঁরা। যার খরচ মাসে এক লক্ষ টাকা। সব সম্পত্তি এবং গয়না বিক্রি করে সেই ওষুধ জোগাড় করছিলেন তাঁরা।
ওই ওষুধেই গত জুনে অবস্থার উন্নতি হয় সুমনার। কোমা থেকে বেরোয় সে। এমনকী উঠে বসতেও পারছিল। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জোর কমে গিয়েছিল অনেকটাই। সামান্য ব্যায়াম করাতে গিয়েই গত অগস্টে পা ভেঙে যায় তার। দেনা করে কোনওমতে অস্ত্রোপচারের খরচ জোগাড় করেন মা-বাবা। সে যাত্রাতেও বেঁচে যায় সে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, এর পরে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে অন্তত বছর চারেক ওই ওষুধ খাওয়াতে হবে।
বিআইএন-এ সুমনার চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, “মেয়েটি যে কোমা থেকে বেরিয়ে আসবে, সেটাই আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। ওকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে ওই ওষুধ ছাড়া গতি নেই। মৃত্যুর মুখ থেকে ও ফিরে এসেছে। ওষুধ না পেলে চোখের সামনে জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। চিকিৎসক হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব যন্ত্রণার।”
যতক্ষণ বাড়ি থাকেন, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন সুমনার মা কাকলি পাল। নিজের মনের মতো করে মেয়েকে সাজান। মেয়ের মুখের বিভিন্ন পেশির ওঠানামা লক্ষ্য করে তাঁর মন্তব্য, “এখন তো ও অনেক কিছু বুঝতে পারে। ওর হয়তো এখনও আশা রয়েছে যে বেঁচে যাবে। তাই মুখটায় এমন হাসির ভাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.