মাদলের ছন্দে ‘হৈমবতীকে’ বরণ করবেন ডুয়ার্সের মালপাহাড়ি বধূরা। হিমালয় কন্যার আলতা রাঙানো পায়ে বুনো ফুলের অঞ্জলি দিয়ে মহাকাল অর্থাত্ হাতির হানা থেকে জীবন ও শস্য রক্ষার আর্তি জানাবেন গরুমারা জঙ্গলের রামসাই ও বিচাভাঙ্গা বনবস্তির বাসিন্দারা। তারই প্রস্তুতি চলছে জঙ্গল ঘেরা গ্রামে। চলছে নাচ গানের মহড়াও।
জঙ্গল মহলের কোথাও স্থায়ী চাতালে আবার কোথাও মণ্ডপ তৈরি করে পুজো হয়। ঢাকের বাদ্যিতে মিশে যায় ধামসা-মাদলের ধিতাং ধিতাং বোল। পুজোর দিনগুলিতে জ্বালানি সংগ্রহ বা মজুরির কাজে যান না বনবস্তির বাসিন্দারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মণ্ডপে আড্ডা। আর সন্ধ্যের পর থেকে নাচ-গান, সঙ্গে রকমারি প্রতিযোগিতা ও মেলার আয়োজন থাকবে শহর থেকে অনেক দূরে বনবস্তির ওই পুজো মণ্ডপে।
জঙ্গল মহলের পুরনো পুজোর অন্যতম রামসাই বাজারের শক্তি সঙ্ঘের দেবী আরাধনা। বুধুরাম, চটুঁয়া, কালামাটি, কালীপুর, চড়াই মহল বনবস্তির বাসিন্দারা এখানেই দেবীর কাছে শান্তির প্রার্থনা করেন। দেশ বিদেশের যে পর্যটকরা উত্সবের দিনে ছুটি কাটাতে গরুমারা জঙ্গলে বেড়াতে আসেন, বন দফতরের কালীপুর ইকো ভিলেজ অথবা রাইনো রির্সট থেকে সহজে ওই মণ্ডপে চলে যেতে পারবেন।
সাধারণ মণ্ডপসজ্জা। বাহারি আলোর জৌলুস নেই। শহরের কোলাহল মুক্ত প্রাণখোলা আনন্দের অন্য পরিবেশ জঙ্গল ও চা বাগান ঘেরা ওই পুজো মণ্ডপে মহানবমীতে বসবে আদিবাসী নাচের আসর। পর্যটকরাও মাদলের তালে পা মেলানোর সুযোগ পাবেন। মণ্ডপের সামনে থাকবে মেলার আয়োজনও। বেড়াতে এসে গাঁয়ের মেলায় ঘুরে বেরানোর সুযোগটাই বা কম কিসের! স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ দে সরকার, বিপুল ওঁরাও, রণজিত্ ওঁরাও বলেন, “পুজোর দিনগুলিতে পর্যটকদের জন্য অঞ্জলির ব্যবস্থা থাকবে। পাত পেড়ে খাওয়ানো হবে ভোগের প্রসাদ।”
বিচাভাঙ্গা বনবস্তির স্থায়ী চাতালে এ বারও পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিচাভাঙ্গা তো বটেই আশপাশের বামনি, সরস্বতী ও ধূপঝোরা বনবস্তি এলাকায় একটি মাত্র পুজো। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসতেই সেখানকার জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা প্রহর গুনতে শুরু করছেন। কখন দেবী কৈলাস থেকে বাপের বাড়িতে আসবেন, কখন তাঁকে বুনো ফুলের মালায় বরণ করে ঘরে তুলবেন। স্থানীয় বধূ সুশীলা পাইক, চন্দ্রমা কোড়া বলেন, “বছরভর হাতির হানা লেগেই আছে। ঘর ভাঙছে শস্য নষ্ট করছে। এ বারও আমরা দেবীর কাছে বুনো হাতির দলকে শান্ত করার জন্য প্রার্থনা জানাব। পর্যটকদের জন্যও অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে।” |