|
|
|
|
জল-কাদায় ভরা ফুলবাজারে পলিথিন মাথায় বেচা-কেনা
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
ইট বিছানো এবড়ো-খেবড়ো চাতালটা জল কাদা আর আবর্জনায় একাকার। মাথার উপর আচ্ছাদন নেই। তাই চড়া রোদ বা প্রবল বৃষ্টিতে পলিথিন চাপিয়ে কোনও রকমে মাথা রক্ষার চেষ্টা।
এই রকম অব্যবস্থার মধ্যেই গত ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম কোলাঘাট ফুলবাজার। কোলাঘাট রেল স্টেশন সংলগ্ন এই ফুলবাজার থেকে কর বাবদ রেল দফতর প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা আয় করলেও ফুলবাজারে আসা চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ। তার উপরে রেলের এক শ্রেণির কর্মী ও স্থানীয় তোলাবাজদের মদতে ফুলবাজারের জায়গা দখল করে একের পর এক বেআইনি গুমটি গজিয়ে উঠছে। ফলে ফুল বাজারে নিকাশির পথ বন্ধ। একটু বৃষ্টি হলে গোটা ফুলবাজার চত্বর জলে ডুবে যায়। জল-কাদায় আর পচা ফুলের পাঁপড়িতে দুর্গন্ধে ভরে যায় চারদিক। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ আধিকারিক স্বপনকুমার শিট বলেন, “কোলাঘাটের স্টেশন সংলগ্ন ফুলবাজারে ছাউনি করে দেওয়ার পাশাপাশি পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য আমরা রেল দফতরের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু রেল দফতর জানিয়েছে, ওই বাজারে কোনও স্থায়ী কাঠামো তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না। ফলে আমাদের কিছু করার নেই। তবে চাষি ও ব্যবসায়ীরা যদি বিকল্প কোন সরকারি জায়গায় ফুলবাজার করতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা সাহায্য করতে পারি।” |
|
নিকাশি নালার জল পেরিয়েই কেনাকাটা কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন ফুলবাজারে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
রেল দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাট এলাকায় ফুলচাষ শুরু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখায় কোলাঘাট স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরেই বাজার শুরু হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। পরে ১৯৭৮ সালে বন্যার পর থেকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উত্তর দিকে ফুলবাজার বসতে শুরু করে। প্রতিদিন রাত ২টো থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই ফুলবাজার চলে। জবা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, দোপাটি, পদ্মনানা রকমের ফুল বেচাকেনা হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর, ডেবরা, পিংলা, বালিচক, শ্যামচক ও হাওড়া জেলার বাগনান , শ্যামপুর এলাকা থেকে ফুলচাষিরা এই বাজারে আসেন। এই তিন জেলা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরাও ফুল কিনতে আসেন। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারের অধিকাংশ ফুল সরবরাহ হয় কোলাঘাটের এই ফুলবাজার থেকে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রেল ও সড়ক পথে ফুল নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।
রেলের জায়গা বলে কোলাঘাট বাজারে ফুল বিক্রি করতে আসা চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৫ টাকা করে সংগ্রহ করে রেল দফতর। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা আদায় হয়ে থাকে। প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয় রেল দফতরের। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যবস্থা চললেও পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও চেষ্টা করেননি রেল কর্তৃপক্ষ।
চাষি ও ব্যবসায়ীরাই টাকা খরচ করে ফুল বাজারের মাটির চাতালে ইট বিছিয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় কোথাও সেই ইট বসে গিয়েছে, তো কোথাও উঠে গিয়েছে। অনেক দিন ধরে দাবি জানানোর পর কয়েক বছর আগে একটি টিউবওয়েল বসানো হলেও তাতে যে জল ওঠে তা পান করার অযোগ্য। খোলা চত্বরে গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাঁশকুড়ার কেশাপাটের ফুলচাষি ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল বলেন, “ফুলবাজারে ছাউনি না থাকায় বর্ষাকালে জলে ভিজে নাজেহাল হতে হয়। আবার একটু ভারী বৃষ্টি হলে চাতালের বেশিরভাগ অংশ জলে ডুবে যায়। দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।”
চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য ছাউনি না থাকলেও বাজারে উত্তর দিকে রেল দফতরের দেওয়া তারের বেড়া কেটে তৈরি হয়েছে প্রায় কুড়িটি গুমটি। বেশিরভাগই খাবার ও ফুল সাজানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রির দোকান। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, “বামফ্রন্ট আমলে মন্ত্রীরা দেখে গিয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলেও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী এই ফুল বাজার পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কিন্তু কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি কেউ।”
কোলাঘাটে রেল দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, নিয়ম অনুযায়ী ‘পে বাজারে’ স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির সুযোগ নেই। চাষি ও ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হলেও এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। ফুলবাজারের একাংশ দখল করে বেআইনি গুমটি তৈরি হওয়ার অভিযোগ মেনে নিয়ে রেল দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, “ওই সব বেআইনি গুমটি ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় শেষ পর্যন্ত তা আর করা যায়নি।” |
|
|
|
|
|