প্রোমোটারের সঙ্গে বিবাদের জেরে ফের এক মহিলার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই মহিলাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল সেই গোলাবাড়ি থানা এলাকা, যেখানে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে না পেরে তাঁকে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় পুলিশ বাড়িওয়ালাকে গ্রেফতার করেছিল।
রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে গোলাবাড়ি থানার উপেন্দ্রনাথ মিত্র লেনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, উপেন্দ্রনাথ মিত্র লেনের বাসিন্দা নির্মলেন্দু সিংহ রায় তাঁর দু’কাঠা আট ছটাক জমি চুক্তির ভিত্তিতে দুই প্রোমোটারের হাতে তুলে দেন। নির্মলেন্দুবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রোমোটারদের সঙ্গে যখন চুক্তি করা হয় তখন শর্ত ছিল নির্মলেন্দুবাবুর পরিবার একটি ফ্ল্যাট পাবে। সেই সঙ্গে টাকাও পাবে। তাঁদের অভিযোগ, ওই জমিতে নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পরে সব ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন প্রোমোটার। নির্মলেন্দুবাবুদের কোনও ফ্ল্যাট দেননি। টাকাও দেননি। নির্মলেন্দুবাবুরা প্রোমোটিং-এর সময় ওই জায়গারই পিছনে একটি অস্থায়ী বাড়িতে যেমন বসবাস করছিলেন, সে রকমই বসবাস করতে থাকেন। ফ্ল্যাট ও টাকা দেওয়া নিয়ে প্রোমোটারদের সঙ্গে বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁদের বিবাদ চলছিল।
অভিযোগ, রবিবার দুপুরে নির্মলেন্দুবাবুর স্ত্রী কল্পনাদেবী যখন একা ছিলেন, তখন প্রোমোটারের লোকজন এসে তাঁর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। কল্পনাদেবীর বড় ছেলে বিশ্বজিৎ বলেন, “বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি দু’জন প্রোমোটারের লোক আমাদের বাড়ির পিছন দিক দিয়ে পালাচ্ছে। ঘরে ঢুকে দেখি মায়ের গায়ে আগুন। চিৎকার করে লোক জড়ো করি। ততক্ষণে ওরা পালিয়েছে।”
কল্পনাদেবীকে প্রথমে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই মহিলার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। রাতে কল্পনাদেবীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে হাসপাতালে বসে বিশ্বজিৎবাবু অভিযোগ করেন, “আমরা কিছুই পেলাম না। আমাদের প্রাপ্য যখনই চাইতে গিয়েছি, তখনই ওরা আমাদের পুড়িয়ে মারার হুমকি দিত। কিন্তু সত্যিই যে এরকম ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি। মাকে একা পেয়ে প্রোমোটারের লোকজন গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেল।”
এই ঘটনায় গোলাবাড়ি থানা এলাকার ওই পাড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে দুই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
এলাকার এক বাসিন্দা সুদীপ রায়ের অভিযোগ, “গোলাবাড়ি থানা এলাকা জুড়ে প্রোমোটিং-এর নামে গুণ্ডারাজ চলছে। এক মাসের মধ্যে দু’টি ঘটনা ঘটল। এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত।” ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “ওই বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসেছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।” |