উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে একটি নির্মীয়মাণ আবাসন কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ করে দিল কলকাতা পুরসভা। তাদের অভিযোগ, গঙ্গার ধারে প্রস্তাবিত ফিল্মসিটি লাগোয়া তাদের ১৮ বিঘা জমিতে বেআইনি ভাবে ওই আবাসন গড়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ওই জমিতে আবাসন এবং একটি শপিং মল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা। ঘটনাচক্রে যে পুরসভা কয়েক বছর আগে ওই আবাসন প্রকল্প নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল।
ওই আবাসন কমপ্লেক্সটি জিটি রোড এবং গঙ্গার মাঝে গড়ে উঠছে। কলকাতা পুরসভার অভিযোগ, ওই জমিতে ইটভাটা ছিল। রাতারাতি জমির চরিত্র বদল করে সেখানে বিশাল আবাসন বানানো হয়েছে। শোভনবাবু বলেন, “ওখানে আমাদের জমিতে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। তা সরিয়ে ওই জমি পুরসভা নিজেদের দখলে নেবে। ওই জমিতে আর কোনও নির্মাণ যাতে না হয়, উত্তরপাড়া পুরসভাকে তা দেখতে বলেছি। এলাকার মানচিত্র নিয়ে দেখা হচ্ছে কোন কোন দাগ নম্বরের জমি দখল করা হয়েছে।”
বছর কয়েক আগে ওই কমপ্লেক্সে প্রথম পর্যায়ে ২৫০টি আবাসন তৈরি করা হয়। অনেকে ফ্ল্যাটে থাকছেনও। কেউ ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে, কেউ বা নগদে চড়া দামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। বহু ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশনও হয়নি। কলকাতা পুরসভার নির্দেশ জেনে ওই আবাসিকেরা উদ্বেগে রয়েছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ের আবাসন ও মল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটির কর্ণধার প্রদীপ পুগুলিয়ার দাবি, “আইনমাফিক জমি কিনে ওখানে আবাসন বানিয়েছি। আর একটি প্রকল্পের কাজ শেষ পথে। এখন এ সবের তো মানেই বুঝতে পারছি না!” তাঁর সংযোজন, “আগে ওখানে ইটভাটা ছিল ঠিকই। সেই জমির চরিত্র বদল করেছি। নিয়ম মেনে স্থানীয় পুরসভাকে করও দিয়েছি।”
উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার চেয়ারপার্সন, তৃণমূলের অদিতি কুণ্ডু বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কাউকে কোনও নির্মাণের অনুমতি দিইনি। ওই আবাসন-সহ গঙ্গার ধারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বারবার ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে পুরসভার কাছে, তা-ও দিইনি। যা হবে, আইন মেনেই হবে। বেআইনি আবাসন তৈরির দায়ভার পুরসভার নয়!”
অদিতিদেবী পুরসভার চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন বছর দুয়েক আগে। তার কয়েক বছর আগে ওই নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেই সময়ে পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তৃণমূলেরই পিনাকী ধামালি। বর্তমানে তিনি ভাইস-চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি, “ওই প্রকল্পের কর্ণধার জমির মিউটেশনের যথাযথ কাগজপত্র জমা দেওয়ায় সেই সময়ে পুরসভার পক্ষ থেকে নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখন কলকাতা পুরসভা যদি ওই জমি তাদের বলে দাবি করে, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কলকাতা পুরসভা এবং প্রকল্পের কর্ণধারই এ নিয়ে বলতে পারবে।”
তবে, গঙ্গার পাড় ঘেঁষে ওই প্রকল্পে পুরসভা পরিবেশগত ছাড়পত্র কী ভাবে দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। অনেকেই এ প্রসঙ্গে মাস কয়েক আগে চন্দননগরে গঙ্গার ধারের দু’টি আবাসনের গা ঘেঁষে ধসের উদাহরণ তুলে মনে করছেন, পরিবেশবিধি ঠিকমতো মানা না হলে বিপদ হতে পারে। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে ওই প্রকল্প ছাড়াও ইটভাটার জমি বুজিয়ে এখন অন্তত ২৫টি আবাসন বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছে। গঙ্গার পাড় থেকে অন্তত ১৫০ মিটার দূরে প্রকল্প তৈরি হওয়ার কথা। অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না।” একই বক্তব্য নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রেরও। উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদবের আশ্বাস, কড়া হাতেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে। |