সংক্ষেপে, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমস্ত রকম রাসায়নিক অস্ত্র প্রত্যর্পণের নির্দেশ-সহ একটি ঘোষণা করিল রাষ্ট্রপুঞ্জ, যাহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া-সহ ১৫টি দেশের স্বাক্ষর রহিল। এই ঘটনা ঐতিহাসিক। তাহা এই জন্য নহে যে ঘোষণাটি নিশ্চিত ভাবে কার্যকর হইবে, প্রেসিডেন্ট বাশার সাততাড়াতাড়ি নিজের ঘর ফাঁকা করিয়া যত গুরুতর অস্ত্র সব রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদের হাতে তুলিয়া দিবেন এবং সিরিয়া নিরাপদ হইয়া হাঁফ ছাড়িবে। সে সম্ভাবনা এখনও নিকট তো নহেই, সম্ভবত নিশ্চিতও নহে। আসাদ এমনিতেই সময় চাহিয়া রাখিয়াছেন, তিনি আরও কী কায়দাকৌশল করিবেন, কূটনীতির কোন চালে সন্তর্পণে জাল কাটিয়া পলাইবার চেষ্টা করিবেন, জানা নাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বা সংস্থার দিক দিয়া যে শেষ পর্যন্ত এমন একটি ঐকমত্যে আসিতে পারা গেল, ইহাই ঐতিহাসিক। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুন গর্ব প্রকাশ করিয়াছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাত যে সত্যই মিলিতে পারে, বিশেষত সিরিয়া পরিস্থিতি লইয়া, সে আশা ক্রমশই অলীক হইয়া উঠিতেছিল। ভবিষ্যতের জন্য ইহা দৃষ্টান্তস্বরূপ হইয়া থাকুক।
এমন নহে যে, সিরিয়া-প্রশ্নে প্রধান দুই দেশ যে প্রধান দুই পক্ষ তৈরি করিয়াছে, ইতিমধ্যেই তাহাদের সকল মতবৈষম্য মিটিয়া গিয়াছে। প্রসঙ্গত গত মাসে রাসায়নিক অস্ত্রের আক্রমণে প্রায় দেড় হাজার সিরীয় নাগরিকের মৃত্যুর পর বিশ্বদুনিয়া আপত্তিতে সরব হইয়া উঠে, প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধবাহিনী যাত্রারম্ভের জন্য প্রায় প্রস্তুত হইয়া যায়। এই সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই প্রস্তাব দেন যে, যুদ্ধের বদলে বরং আসাদকে তাঁহার তূণের মারাত্মকতম অস্ত্রগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের হাতে তুলিয়া দিতে বলা হউক। এই ঘোষণার খসড়া তৈরির সময়েও বৈষম্য মাথা তুলিয়াছে, যাহার কিছু এখনও পর্যন্ত মিটে নাই। যে দুইটি ক্ষেত্রে সংকট নিরসন সম্ভব হইয়াছে, তাহার একটি হইল এই বাক্য যে: “যে কোনও দেশে, যেমন সিরিয়ায়, এমন ঘটনা ঘটিয়া থাকিলে তাহা একটি মারাত্মক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।” আর অন্যটি হইল, “এবং যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ এই অপরাধমূলক কার্যের জন্য দায়ী, তাঁহাদের দায়িত্ব স্বীকারও বিচারের যোগ্য হইবে।” প্রাথমিক আপত্তির পর দুইটি বক্তব্যই রাশিয়া মানিয়া লইয়াছে। তবে ‘দায়ী’ পক্ষের শাস্তির বিষয়ে রাশিয়া এখনও স্বীকৃত নহে। এতদ্সত্ত্বেও যে মূল নীতির প্রশ্নে ঘোষণাপত্রে তাহারা স্বাক্ষর দিয়াছে, এবং সামগ্রিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জকে অনন্যকণ্ঠে একটি অবস্থান লইতে সাহায্য করিয়াছে, তাহা প্রশংসাযোগ্য।
আসাদ সম্ভবত আন্তর্জাতিক মঞ্চের নিকট এক বৎসর সময় চাহিবেন। কিন্তু তাহার মধ্যে বিষয়টি মিটাইয়া ফেলিবার দায়িত্ব রাষ্ট্রপুঞ্জের উপরই ন্যস্ত রহিল। সিরিয়ার ক্ষেত্রেই একাধিক বার এমন হইয়াছে যে রাষ্ট্রপুঞ্জ কোনও শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত লইবে বলিয়াও লয় নাই, বিষয়টি চাপা পড়িয়া গিয়াছে। ইহাতে সেই সমালোচকদেরই জিতাইয়া দেওয়া হয়, যাঁহারা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অক্ষম এবং অবান্তর পরিহাসে পরিণত হইয়াছে, রাবার স্ট্যাম্প হিসাবেও ইহার আর কোনও প্রয়োজন নাই। সিদ্ধান্ত লওয়া এবং তাহা কার্যকর করিতে পারার মধ্যেই যে কোনও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব নিহিত থাকে। বান-কি মুন ও তাঁহার সতীর্থরা নিশ্চয়ই তাহা খেয়াল রাখিতেছেন। |