পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় (‘অ্যাসিড ও মেয়েরা...’, ২৬-৮) মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপের কথা লিখেছেন। পাশাপাশি আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি।
বাংলাদেশ যা পারে আমরা কেন পারি না? আমার মনে হয়, আমাদের নিশ্চেষ্টতা এ জন্য দায়ী। বিচারপদ্ধতির দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রশাসনের শিথিলতা ঘটছে। কিছু দিন কাগজে নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে, হইচই হচ্ছে। তার পর সব কিছু আমাদের বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাচ্ছে। নির্যাতিতারা না-পাচ্ছেন সুবিচার, উপযুক্ত চিকিৎসা। ঘৃণ্য অপরাধীরা প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং সরকারের শৈথিল্যের সুযোগে হয় অধরা থেকে যায় নতুবা তাদের শাস্তিপ্রদান বিলম্বিত হয়।
দরকার ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। কয়েকটি প্রস্তাব করি।
১) রাজনীতির রঙ সরিয়ে রেখে মানবতাবাদীরা এগিয়ে এসে এই সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিন।
২) পত্রপত্রিকা এগিয়ে আসুক এই আন্দোলনকে জনচেতনার রূপ দিতে।
৩) আইনজীবীরা এগিয়ে আসুন বিনা পারিশ্রমিকে নির্যাতিতাদের আইনি সাহায্য দিতে।
৪) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করুক।
৫) একটা তহবিল গড়া যায় নির্যাতিতাদের সাহায্য করার জন্য।
৬) প্রথম দিকে জেলা স্তরে আলোচনাসভা করা হোক। বিশিষ্ট জনেরা তাতে আসুন জনচেতনার রূপরেখাকে বাস্তবায়িত করতে।
প্রণবকুমার ঘোষ। কলকাতা-১৩০
|
‘চাই প্রকৃত স্বশাসন’ (৬-৮) সম্পাদকীয় নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে: ‘ডিফু কিংবা হাফলঙে না-আছে কোনও হাসপাতাল, না-কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, না-কোনও রাজ্য সরকারি দফতর’। এই প্রসঙ্গে জানাই যে, ডিফু ও হাফলং দুই শহরেই সরকারি কলেজ ও হাসপাতাল আছে। ডিফুতে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাসও রয়েছে। দু’টি জেলা সদরেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের বেশ কতকগুলি কার্যালয় রয়েছে। ডিমা হাসাও (পূর্বতন উত্তর কাছাড়) জেলার মাইবং ও মাহুরেও কলেজ রয়েছে।
সমরজিৎ চৌধুরী। কলকাতা-৭৫
|
র্যাগিংয়ের সমগোত্রীয় অপরাধ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও আছে। তবে ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলগুলির লুপ্ত প্রথা ‘ফ্যাগিং’ (যা এই র্যাগিংয়ের উৎস) বা অধুনা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আনাচে কানাচে চালু ‘হেজিং’ বা ‘বুলিং’-এর সঙ্গে ভয়াবহতার নিরিখে এই ভারতীয় র্যাগিংয়ের কোনও তুলনা হয় না। একমাত্র তুল্য চিত্র পাওয়া যায় প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায়। লক্ষণীয়, র্যাগিং বিভিন্ন মাত্রায় এবং রূপে যুবসমাজ ও বিদ্যালয় চত্বরগুলির বাইরে বিরাজ করছে। এবং আবারও বিভিন্ন সমাজে এর রূপ ও মাত্রার তারতম্য আছে। স্কুলে নিরীহ কোনও ছাত্রকে কোনও শিক্ষক বিকৃত মানসিকতা নিয়ে অত্যাচার করলে অথবা উগ্র বাবা-মা কারণে, অকারণে শিশুকে অত্যাচার করলে তাও কিন্তু বস্তুত র্যাগিং।
র্যাগিং এবং ধর্ষণ সমগোত্রীয় অপরাধ। দুইয়েরই মূল ধর্ষকাম মানসিকতা ও বিকৃত কর্তৃত্ব স্থাপনের অপপ্রয়াস। সেই জন্য কুৎসিততম র্যাগিংগুলি প্রায়শই যৌন অত্যাচারে পরিণত হয়। এবং ক্ষেত্রবিশেষে (বহু উদাহরণ আছে) র্যাগিং উপর্যুপরি মানসিক ধর্ষণ, যৌন ও শারীরিক অত্যাচার এবং হত্যায় পরিণত হয়। আমি মনে করি, র্যাগিংয়ের মতো কুৎসিত পরম্পরা রোধ করতে কঠোরতম আইন প্রণয়ন জরুরি। ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রণেতারা যা সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রাহ্য করেন, সেই আইনের সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি এবং বিভিন্ন আইন সমন্বয়ের বিষয়েও একই রকম নজর দিতে হবে। কারণ, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যেমন, র্যাগিংয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতের ভয়ে এবং পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে অত্যাচারিত ছাত্র বা ছাত্রী অভিযোগ করতেই ভয় পায়। ফলে, অত্যাচারীরা আরও বেশি উৎসাহিত ও অকুতোভয় হয়ে পরবর্তী শিকার খোঁজে।
ধর্ষণ, র্যাগিং এবং সমগোত্রীয় অপরাধগুলি দমন করতে বর্তমানে গৃহীত অনেকগুলি পদক্ষেপের পাশাপাশি আরও কতকগুলি পদক্ষেপের কথা অবশ্যই ভাবা যেতে পারে।
১) যে কোনও গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ না-করাটাও অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
২) ধর্ষণ, র্যাগিং ও সমগোত্রীয় গুরুতর অপরাধের জন্য রাষ্ট্রীয় স্তরে বিশেষ স্বতন্ত্র দফতর তৈরি করতে হবে। এই অপরাধগুলির চরিত্র, গতিপ্রকৃতি অনুধাবনের জন্য স্বতন্ত্র কার্যালয় তৈরি করতে হবে, যারা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার মাধ্যমে এই অসুখগুলির উপশমের পথের সন্ধান দেবে।
৩) বেনামি অভিযোগগুলি যাতে উপযুক্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা যায় তার জন্য ওই সমস্ত অভিযোগের দাখিলমূল্য চাওয়া হোক। এতে সাধারণত ভিত্তিহীন অভিযোগ জমা পড়বে না।
৪) বিদ্যালয়গুলির মধ্যে সিনিয়র ছাত্রদের মধ্য থেকে নবাগত ছাত্রদের জন্য ‘মনিটর’ নিয়োগ করতে হবে। ওই সিনিয়র ছাত্রকে নবাগতরা নানা ভাবে সাহায্য করবে। বিনিময়ে সহপাঠী দাদাটি তার নিজস্ব নবাগত ছাত্রগোষ্ঠীটির প্রতি সর্বদা নজর রাখবে, যা কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়।
৫) অভিযুক্ত র্যাগিংকারী ছাত্রছাত্রী অথবা ছাত্রগোষ্ঠীকেই কেবলমাত্র নয়, সমগ্র শিক্ষায়তনটিকে ও গ্যারান্টার হিসাবে অভিযুক্তের আঞ্চলিক অভিভাবক অথবা আসল অভিভাবককেও (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মা) শাস্তি প্রদান করতে হবে। নিয়মভঙ্গকারী ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পাশাপাশি নিজের বাবা-মাকেও শাস্তি পেতে দেখলে অনেক বেশি আঘাতপ্রাপ্ত ও অনুতপ্ত হবে।
৬) নবাগত ছাত্রছাত্রী তথা জনসাধারণকে অধিকার, রক্ষাকর্তা আইন ও তার প্রয়োগবিধি সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়গুলিতে আরও বেশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা বাহিনীর ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) অত্যাচারিত বা অত্যাচারিতার উচিত অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা। কারণ, সরকার কোনও ভাবেই দেশের মাটিতে সংঘটিত একটি বড় অপরাধের ক্ষেত্রে নিজের পরোক্ষ দায় এড়াতে পারে না। প্রশ্ন করা উচিত সরকার এই জাতীয় অপরাধ দমনে কী প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা নিয়েছিল। এই মামলার ক্ষতিপূরণের অর্থ কোনও একটি সংশ্লিষ্ট এন জি ও বা দফতরকে দান করা যেতে পারে। যাতে, এই জাতীয় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই আরও পুষ্ট হয়। অপরাধের শিকার ছাত্র/ছাত্রী অথবা ধর্ষিতার কোনও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হলে বিশেষ সংরক্ষণ বা পেনশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) সর্বোপরি প্রশাসনিক পরিকাঠামোর অভাব যেমন এই জাতীয় অপরাধগুলিকে পুষ্ট করে, তেমনই র্যাগিং বা ধর্ষণের শিকার সমাজের নানা স্তরে কুৎসিত তামাশা বা বিকৃত হয়রানির শিকার হয়, যার ভয়ে বহু ক্ষেত্রেই অপরাধী তার অভিজ্ঞতা গোপন রেখে অপরাধের সঙ্গে আপস করে চলে।
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। কলকাতা-১৯ |