ভাঙা পথ দেখতে ঘুরলেন পুরকর্তারা
রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। শিয়ালদহ ট্রাম লাইনের পাশে এসে থামলো পুরসভার ইনস্পেকশন ভ্যান। ট্রাম রাস্তার হাল দেখে তত ক্ষণে অস্বস্তিতে পুরসভার শীর্ষস্থানীয় কর্তারা। জানা গেল, ঘণ্টাখানেক আগে মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরার পথে এখানেই বৈদ্যুতিন মাধ্যমের এক সাংবাদিক পড়ে যান। হাঁটুতে চোট নিয়ে তিনি আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। শনিবার রাতে, পুজোর মুখে শহরের রাস্তাগুলির বেহাল দশার চিত্রটা খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে এমন পরিস্থিতির সাক্ষী হলেন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ ও পুর কমিশনার খলিল আহমেদ।
পুরকর্তাদের কাছে পেয়ে পথচারীরা অভিযোগ জানালেন, রাস্তার এতটাই খারাপ অবস্থা যে সামান্য এ দিক থেকে ও দিক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। স্বচক্ষে দেখে পুর কমিশনার খলিল আহমেদও স্বীকার করে নিলেন, ট্রাম লাইন সংলগ্ন এই রাস্তার হাল সত্যিই শোচনীয়। আশ্বাস দিলেন, খুব তাড়াতাড়ি এই রাস্তা সারানো হবে। মেয়র পারিষদ সুশান্তবাবু বললেন, “দিন দুই আগেও শিয়ালদহে রাস্তা সারাইয়ের কাজ হয়েছিল। বৃষ্টির জন্য তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার কাজ করা হচ্ছে। পুরো জায়গাটায় গর্ত বোজানো হবে। ট্রামের কারণে যে সব জায়গায় রাস্তা খারাপ হচ্ছে সেগুলো কংক্রিট করার দায়িত্ব আমাদের নয়। এই কাজটা ট্রাম কোম্পানি করলেই রাস্তাটা ভাল থাকে।”

চলছে ট্রামলাইন মেরামতের কাজ। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
এ দিন সরোজমিনে তদন্তে নেমে, বার বার উত্তর থেকে দক্ষিণের ট্রাম লাইনগুলির চরম বেহাল দশার মুখোমুখি হতে হল পুরসভার পরিদর্শক দলটিকে। রাত এগারোটা নাগাদ পামার বাজার রাস্তার মশলা তৈরির কারখানা থেকে রাস্তা ও ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের জনা ২৫ ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে বেরোন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ ও পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। পুরসভার ইনস্পেকশন ভ্যানের পথ চলা শুরু হয় বেলেঘাটা মেন রোড, ফুলবাগান মোড় হয়ে কাঁকুড়গাছি অভিমুখে।
পথেই পুরকর্তারা টের পান ভ্যানটিকে বেশ কিছু জায়গায় খানাখন্দ বাঁচিয়ে চলতে হচ্ছে। উল্টোডাঙা মোড়ে এসে ভ্যানের গতি কার্যত থেমে যায়। উল্টোডাঙা হাডকোর মোড়ে এসে রাস্তার ঢেউ খেলানো দশা দেখে সুশান্তবাবু অফিসারদের নির্দেশ দেন, ‘অবিলম্বে এই রাস্তার হাল ফেরাতে হবে’। দ্রুত ওই রাস্তা মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে।
সেখান থেকে শ্যামবাজার হয়ে আর জি কর হাসপাতালের সামনে পৌঁছয় পরিদর্শক দল। সেখানেও ট্রাম রাস্তার হাল দেখে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন রাস্তা বিভাগের অফিসারেরাও। নোটে লিখে নেন, দিন কয়েকের মধ্যেই সারিয়ে ফেলতে হবে এই রাস্তা। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ও এলিয়ট রোডের মোড়ে নেমে কিছুক্ষণ রাস্তা সারাইয়ের কাজও দেখেন তাঁরা।
পরের গন্তব্য দক্ষিণ। পার্ক সার্কাস থেকে রবীন্দ্র সদন হয়ে বহু খানাখন্দময় রাস্তার উপর দিয়েই খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ পৌঁছয় পুরসভার টিম। শেষ প্রহরে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, আনোয়ার শাহ রোড ঘুরে পুরসভার টিম পৌঁছয় গড়িয়াহাট। পথে পুরসভার এক পদস্থ অফিসার বললেন, “এ বার কাজ করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা বৃষ্টি। গত জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে বৃষ্টির ফলে মেরামত করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।”
কোন কোন রাস্তার কাজ এখনও বাকি?
মেয়র পারিষদ জানান, পুরসভার অধীনে ধাপা রোড, দেবেন্দ্র চন্দ্র দে রোড, আনোয়ার শাহ রোড, এবং স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডগুলির কিছুটা করে কাজ এখনও বাকি। অন্যদিকে কেএমডিএ-এর অধীনে বাইপাসের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ভাল অবস্থায় নেই পূর্ত দফতরের অধীনে জেমস লং সরণিও।
কথা ছিল পুজোর আগেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার খানাখন্দগুলি সারাইয়ের কাজ হয়ে যাবে। এই নিয়ে গোটা পাঁচেক জরুরি সভাও হয়েছিল পুরভবনে। তখনই মেয়র বলেছিলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। কেন? সুশান্তবাবুর জবাব, “ভিলেন তো বৃষ্টি। আমরা কী করব? জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।” তাঁর দাবি, “আর তিন-চার দিন সময় পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.