অসমান ট্রামলাইনে বেসামাল শহর
ভাঙাচোরা রাস্তায় কোনও মতে টাল সামলাচ্ছে অটো। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাসের ঝাঁকুনিতেও প্রাণ ওষ্ঠাগত অসুস্থ যাত্রীর। দিনের পর দিন সইতে হচ্ছে এই ভোগান্তি। তবু শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রামরাস্তার হাল যে-কে-সেই।
ব্যস্ত কলকাতায় যানবাহনের গতি বাড়াতে এক দশক আগেই ট্রামরাস্তা ঢালাইয়ের নীতি গ্রহণ করে বাম সরকার। তৃণমূলের আমলেও সেই অবস্থান বদলায়নি। কিন্তু কলকাতার কংক্রিট-বুকে ক্ষতচিহ্নের মতো বেশ কয়েকটি রাস্তায় এবড়োখেবড়ো অবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে অসমান ট্রামলাইন।
ট্রামরাস্তার ছোটখাটো মেরামতির কাজ দেখভাল করে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি। কিন্তু সার্বিক সংস্কারের দায়িত্ব রাজ্যেরই। ট্রামলাইনের হাল শুধরোতে দেরির জন্য বিপুল ব্যয়ভার ও সময় লাগাটাই বড় সমস্যা বলে মনে করছেন পরিবহণ-কর্তারা। গত এক দশকে শহরে ২০-২৫ কিমির বেশি ট্রামরাস্তা ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। তবে এখনও আমনাগরিকের পথের কাঁটা ৫-৬ কিমি রাস্তা জুড়ে। সিটিসি-র দাবি, ২০১২-তেই ওই তল্লাট সংস্কারের পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য খরচের বিষয়টি পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়ে। কিন্তু এখনও কার্যত সাড়া মেলেনি।

শিয়ালদহের কাছে ট্রামলাইনের হাল।
পুরনো কলকাতায় বাস ও ট্রামের সমান গুরুত্ব ছিল। স্বাধীনতার পরে বাস, দোতলা বাস ও ট্রামের রাস্তাও আলাদা ছিল। নাগরিকদের ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপও বেড়েছে। এ দেশের বা দুনিয়ার বহু শহর থেকে মন্থর যান হিসেবে ট্রাম তুলেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কলকাতায় ট্রাম ও বাসের ঘেঁষাঘেঁষি সহাবস্থানই দস্তুর। পরিবেশবন্ধু হিসেবে ট্রামের গুরুত্বও অনেকে মেনে নিয়েছেন। বিশ্বের বহু আধুনিক শহর মাটির উপরে ঝুলন্ত লাইনে জোরালো গতির ট্রাম বা ‘লাইট রেল ট্রানজিট’ চালু করেছে। এ শহরেও তেমন জল্পনা চললেও পরিবহণ সমস্যা সামলাতে কলকাতা প্রধানত ঝুঁকেছে পাতাল রেলের দিকে। অসমান ট্রামলাইনে বাস বা অন্য গাড়ির চলাচল ক্রমশ কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
তাই প্রথমে ট্রামরাস্তা ঢালাইয়ের কথা ভেবেছিলেন পরিবহণ-কর্তারা। কিন্তু তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশের আপত্তি আছে। তাঁদের মতে, ট্রামের জন্য রিজার্ভ ট্র্যাকই ভাল। কিছু দিন আগে দিল্লির একটি বৈঠকেও ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরের মেয়র ট্রামের ‘রিজার্ভ-ট্র্যাক’-এর জন্য সওয়াল করেন। তাঁর মতে, শহর থেকে ট্রাম না-তুলে নির্দিষ্ট লাইনে পরিবেশবন্ধু যান হিসেবে চালু রাখাই কাজে এসেছে। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় সীমিত রাস্তার শহর কলকাতায় এই ‘রিজার্ভ ট্র্যাক’ থাকলে যান চলাচলের গতি আরও মন্থর হবে বলেই মত প্রশাসনিক কর্তাদের। এখন ময়দানের উপরে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরগামী ট্রামরাস্তা ছাড়া রিজার্ভ ট্র্যাক তুলেই দেওয়া হয়েছে। অন্যত্র ট্রামরাস্তা ঢালাই বা কংক্রিটের ট্রামলাইন পাতার নীতিই গ্রহণ করা হয় এ শহরে।

আর জি কর রোডের চিত্র।
সেই কাজ অসমাপ্ত থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে। যেমন, বেলগাছিয়া ব্রিজ ধরেই যেতে হয় আর জি করে। ভাঙাচোরা রাস্তায় বাসের ঝাঁকুনিতে এই সফর রোগীদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। আমহার্স্ট স্ট্রিট বা সূর্য সেন স্ট্রিট ধরে লেডি ডাফরিন হাসপাতালে যাওয়ার যন্ত্রণাও কম নয়। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ঘিরে অজস্র স্কুল। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ভাঙা রাস্তায় দুলতে দুলতে বিপজ্জনক ভাবে অটো চলে ধর্মতলা-পার্ক সার্কাস রুটে। দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকেই যায়। এই রাস্তাগুলিতে কয়েক পা অন্তর ইটের কঙ্কাল। ভাঙাচোরা ট্রামরাস্তা বেঁকেচুরেও সঙ্গীন দশা। কাছাকাছি বেশ কিছু এলাকায় ট্রামলাইন ঢালাইয়ের পরে যাত্রাপথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই রাস্তাগুলির দশা দুয়োরানির।
সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলছেন, “আশা করি পুজোর পরেই দক্ষ সংস্থার সাহায্যে ট্রামরাস্তা ঢালাই করা হবে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রেরও বক্তব্য, “পুজোর আগে কিছু করা সম্ভব নয়। ট্রামরাস্তা ঢালাইয়ের কাজটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। তার উপরে যেখানে কাজটা হবে, সেখানে ট্রামরাস্তা বন্ধ রাখতে হবে। ট্রামরাস্তা ঢালাইয়ের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি। তাড়াহুড়ো করলে টাকাটা জলে যাবে।”
ঠিক কবে ট্রামরাস্তা ঢালাই হবে, তার সদুত্তর মেলেনি কারও কাছেই। সিটিসি-র এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “কলকাতার ট্রাম নিয়ে অনেকেই আবেগের কথা বলেন। ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন’ বলে বাংলা ছবির গানও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে ট্রামের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।”

ছবি: প্রদীপ আদক।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.