অবাঞ্ছিত অতিথি বিদায় নিলে বাঁচে বাংলা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো প্রশ্ন তুলেই যেন থমকে গেল নিম্নচাপ। পুজোর মুখে দুর্ভোগ বাড়ল রাজ্যের।
কলকাতায় এখন অনেক পুজোর উদ্বোধন হয়ে যায় চতুর্থীতেই। তাই মহালয়ার দিনেই শিল্পীরা মণ্ডপের কাজ সম্পূর্ণ করে তুলে দেন উদ্যোক্তাদের হাতে। কিন্তু শুক্রবার থেকে যে-বৃষ্টি চলছে, তাতে অনেক পুজো কমিটিই উদ্বোধনের দিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। মণ্ডপে প্রতিমা না-আসা পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে পারছেন না অনেক শিল্পী। কুমোরটুলিতে প্রতিমায় শেষ টানই দেওয়া যাচ্ছে না। পলিথিনে মুখ ঢেকেছে প্রতিমার।
এর মূলে আছে নিম্নচাপের গয়ংগচ্ছ ভাব। তার শক্তি বাড়েনি। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে জন্মের পর থেকে যে-গতিবেগ নিয়ে তার উপকূলের দিকে এগোনোর কথা, তা হচ্ছে না। সমুদ্রেই রয়ে গিয়েছে সে। নিম্নচাপটি যত বেশি দিন সমুদ্রে থাকবে, তত বেশি জলীয় বাষ্প ঢুকতে থাকবে পরিমণ্ডলে। চলবে বৃষ্টি। গতিপ্রকৃতি দেখে শনিবার আবহবিদদের মনে হয়েছিল, নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে পারে সোমবারেই। তার পরে আবহাওয়া ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু করবে। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ ঘোরালোই। |
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “নিম্নচাপটি আরও ভোগাবে বলেই মনে হচ্ছে। যে-গতিতে তার উপকূলের দিকে এগোনোর কথা, তত দ্রুত সে এগোচ্ছে না। কিছুটা ধীর হয়ে গিয়েছে তার গতি। তাই বুধবার পর্যন্ত আকাশের মুখভার থাকবে। এর মধ্যেও নিম্নচাপটি গতি না-পেলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।” আবহবিদদের পূর্বাভাস, নিম্নচাপের জন্য উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টি হবে। জোর বৃষ্টি হবে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। কলকাতায় ভারী বৃষ্টি না-হলেও আকাশ মেঘলা থাকবে। মাঝেমধ্যে কমবেশি বৃষ্টিও হবে।
মহালয়ার দিন থেকেই লরিতে, ভ্যানে চেপে দুর্গা যাবেন মণ্ডপে। তাই প্রতিমাশিল্পীদের কাছে এখন প্রতিটি মুহূর্তই দামি। কিন্তু বৃষ্টি কুমোরটুলির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। রবিবার দুপুরে কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমায় রং চাপানোর কাজ চলছে পুরোদমে। দু’-একটি জায়গায় এখনও প্রতিমার গায়ে খড়ি রয়ে গিয়েছে। কেন? শিল্পীরা জানাচ্ছেন, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় রং শুকোতে সমস্যা হচ্ছে। জোরালো বৃষ্টির ছাটে প্রতিমার ক্ষতির আশঙ্কাও আছে। তাই অধিকাংশ স্টুডিওর দরজাই মুড়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন দিয়ে। রং শুকোনোর জন্য ফ্যান চালাতে হচ্ছে।
বৃষ্টির দাপট বাড়ায় মহানগরের বেশির ভাগ মণ্ডপের কাজও বন্ধ। কোথাও কোথাও মণ্ডপের ভিতরের কাজ চলছে। দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির পুজো কমিটির পার্থ ঘোষ জানান, বৃষ্টিতে মণ্ডপের বাইরের কাজ শুরুই করা যায়নি। দমদম পার্ক তরুণ দল, কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের কাজেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বৃষ্টি। ওই পুজোগুলির দায়িত্বে থাকা শিল্পী অনির্বাণ দাস চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন, ঠিক সময়ে কাজ শেষ করবেন কী ভাবে! বৃষ্টির দাপটে মুষড়ে পড়েছেন শিল্পী দীপক ঘোষও। লেক গার্ডেন্স পিপলস অ্যাসোসিয়েশনে এ বার তিনি ফুটিয়ে তুলছেন রাজযোগ। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে কাজ প্রায় বন্ধ। চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটির শিল্পী ভবতোষ সুতারও বলছেন, “বৃষ্টির দাপটে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না।”
তবে দুর্যোগের মধ্যেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হাতিবাগানের কাশী বোস লেন ও নবীনপল্লি। কাশী বোস লেনের মণ্ডপ সেজে উঠছে বাঁশ, থার্মোকলের গ্লাস, ধাতব পাত আর সেরামিকের ইনসুলেটরে। দেখা গেল, বৃষ্টির মধ্যেও কাজ চলেছে সেখানে। নবীনপল্লির মণ্ডপও টিনের পাত দিয়ে তৈরি। পুজো-কর্তা অমিতাভ রায় জানালেন, কাজ অনেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। ধাতুর মণ্ডপ হওয়ায় বৃষ্টি তেমন ক্ষতি করতে পারছে না।
বৃষ্টিতে ধাক্কা খেয়েছে পুজোর বাজারও। দুর্যোগ উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় দিয়ে অনেকে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ফ্যাসাদে পড়েছেন হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটের ফুটপাথের দোকানিরা। অনেক দোকানই পলিথিনের শিটে মুড়ে রাখতে হয়েছে। রমেশ কুণ্ডু নামে হাতিবাগানের এক দোকানদার বললেন, “বৃষ্টি চলতে থাকায় অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন না। পুজোর আগে রবিবারে ভিড়ও কিছুটা কম।” তবে সন্ধ্যার মুখে গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট ফিরতে শুরু করে চেনা চেহারাতেই। হাসি ফুটছে দোকানদারদের মুখেও। |