ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ঘিরে সংঘর্ষ গড়াল বাহিনী তোলার দাবিতে
জিটিএ-র নতুন ‘চিফ এগজিকিউটিভ’ মনোনয়নের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নামল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শনিবার সকালে র‌্যাফ-এর জওয়ানের হাতে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তোলে বিমল গুরুঙ্গদের ছাত্র শাখা বিদ্যার্থী মোর্চা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দার্জিলিং থানায়। সেখানে অবরোধ, ঘেরাও তুলতে পুলিশ লাঠি চালায়। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। ক্ষিপ্ত জনতা বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, রবিবার পাহাড়ে বন্ধ ডেকেছে বিদ্যার্থী মোর্চা।
পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, “পাহাড়ে গোলমাল, অশান্তিতে জড়িত সন্দেহে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোর্চা নেতা তথা জিটিএ সদস্য জ্যোতি কুমার রাইকে আটক করেছে পুলিশ। হামলা, আগুন লাগানোয় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
বিক্ষুব্ধ জনতাকে হঠাতে লাঠিচার্জ। শনিবার দার্জিলিঙের চকবাজারে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
পাহাড়ে ফের অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগের কারণ, রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও শুক্রবারই দার্জিলিং থেকে ৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী (এসএসবি) সরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামিকাল, সোমবারের মধ্যে ৫ কোম্পানি সিআরপি সরানোর প্রস্তুতিও নিয়েছে কেন্দ্র। সেই সময়ে পাহাড়ে মোতায়েন র‌্যাফ-সহ রাজ্য পুলিশের যে সব বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে, তাদেরও তোলার জন্য চাপ বাড়াতে আসরে নেমেছে মোর্চা। গোটা ঘটনার আড়ালে আগাম পরিকল্পনার আশঙ্কাও করছে রাজ্য সরকার। তাঁর ‘উদ্বেগ ও বিরক্তি’র কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দেকে ফের চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ অক্টোবরের আগে পাহাড় থেকে আর কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানো হবে না।
শনিবার পাহাড়ে কী ঘটেছিল? এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত ঘুম স্টেশনের অদূরে হিলকার্ট রোডে। ওই এলাকার বাসিন্দা ছাত্রীটি স্কুলে গিয়ে ক্লাস হবে না জেনে একা ফিরছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে সাদা পোশাকে থাকা এক র‌্যাফ জওয়ান তাঁকে ‘বন্ধু’ হওয়ার প্রস্তাব দেন। ছাত্রীটি তাতে রাজি না হয়ে ছুটতে থাকলে ওই জওয়ান পিছু নেন। ছাত্রীর আর্তনাদ শুনে পথচারীরা গিয়ে জওয়ানকে ধরে ফেলে এবং তাঁকে জোড়বাংলো থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। অরুণ প্রামাণিক নামের ওই র‌্যাফ জওয়ানকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভয়ে ছাত্রীটি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাকে দার্জিলিং জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর পরেই পাহাড় থেকে বাহিনী তোলার দাবিতে দার্জিলিং সদর থানা এলাকায় দফায়-দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মোর্চার প্রথম সারির কয়েক জন নেতা গোড়ায় নেতৃত্ব দিলেও পরে বিদ্যার্থী মোর্চার সদস্য তথা পড়ুয়ারা স্কুলের পোশাকেই রাস্তা অবরোধ, থানা ঘেরাও-এ সামিল হয়েছে। দার্জিলিং সদর ও লাগোয়া এলাকায় পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। পুলিশের গাড়ি ভাঙার চেষ্টা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীও আক্রমণের মুখে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা দার্জিলিং সদর থানা ঘেরাও করলে পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাদের চকবাজারে নিয়ে যায়। সেখানে ফের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শূন্যে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। রবার বুলেটও ছোড়া হয়। এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি সরকারি বাস। রাতে কালিম্পঙেও একটি সরকারি বাস পোড়ানো হয়েছে।
মোর্চার সদর দফতর যেখানে, সেই সিংমারির পুলিশ চৌকিতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ একাধিক জায়গায় লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাস ও শূন্যে রবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মোর্চা-প্রধান বিমল গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ সহকারী, সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি রাইকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। মোর্চার ২০ জন কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির দাবি, “পাহাড়ের কেন্দ্রীয় বাহিনী যে অত্যাচার করছে, সেটা ফের স্পষ্ট হয়েছে। তাই ক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফ্যাক্স মারফত সব জানিয়ে অবিলম্বে সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।” পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তোলার দাবিতে আজ, রবিবার দার্জিলিং পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে বিদ্যার্থী মোর্চা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, মোর্চার প্রথম সারির নেতারা ছক কষে ফের পাহাড়ে অশান্তি ছড়িয়ে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্যকে আগাম না জানিয়ে এ ভাবে বাহিনী প্রত্যাহার করা যায় না। কেন্দ্র যা করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বেমানান। সরকারি সূত্রে খবর, পাহাড়ে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রাজ্য যে ভাবে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছে, তা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, জঙ্গলমহল থেকে ১০ কোম্পানি বাহিনী প্রত্যাহারের কথা আগেই বলা হয়েছিল। রাজ্য রাজি হয়নি। এখনও সেখানে ৩৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ে অভিযান চালাতে বাড়তি বাহিনী প্রয়োজন। তাই পাহাড় থেকেই বাহিনী সরানো হয়েছে।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.