চটকল শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলি বহু আন্দোলন করেছে। কিন্তু বারবার অভিযোগ উঠেছে, শ্রমিক নেতাদের একাংশ মালিক পক্ষের সঙ্গে গোপন রফায় গিয়ে আন্দোলন ভেস্তে দিয়েছে। ফলে স্বাধীনতার ছয় দশক পরেও কুলিলাইনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটে গরিব শ্রমিকদের।
এ বার এগিয়ে এসেছেন হুগলি শিল্পাঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা। এঁরা বিভিন্ন সময়ে ডান-বাম নানা শ্রমিক সংগঠনের ছাতার তলায় ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দাবি, ‘অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল শ্রমিক মঞ্চ’ নামে নতুন এই সংগঠন অরাজনৈতিক মঞ্চ। রাজ্যের অন্তত ৯টি চটকলের প্রায় সাড়ে তিনশো শ্রমিক ইতিমধ্যেই মঞ্চে সামিল হয়েছেন। নানা দাবি নিয়ে চন্দননগরে ডেপুটি লেবার কমিশনারকে, রাজ্য শ্রম দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। |
চটকলে শ্রমিকদের সমস্যা বহুমুখী। বহু শ্রমিক বছরের পর বছর যে মিলে কাজ করছেন, খাতায়-কলমে কর্মী তালিকায় তাঁর কোনও অস্তিত্বই নেই। এঁরা কোনও শ্রমিকের পরিবর্তে কাজ করেন। কর্মস্থলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেই সব শ্রমিকদের কোনও দায় মালিক পক্ষ নেন না। এই সব শ্রমিকেরা জুটমিল চত্বরে ‘ভাগবাওলা’, ‘জিরো’ নানা বিচিত্র নামে পরিচিত। যে কর্মীর বদলে তিনি কাজ করেন, সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা বেতনের সামান্য অংশ দেন এঁদের।
চটকলে সারা জীবন কাজ করেও গ্র্যাচুইটির টাকা পান না অনেকে। অসুস্থ শরীরে বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও টাকা আদায় করতে পারেননি। শ্রমিকেরা মারা যাওয়ার পরে মালিকের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে বাড়ির লোকের কালঘাম ছোটে। টাকা মেলেও না অনেকের। এ সব নিয়ে অভিযোগ, দাবি-দাওয়া বিভিন্ন দফতরের বছরের পর বছর পড়ে থাকে।
নতুন গড়ে ওঠা মঞ্চটির মূল দাবি, বকেয়া গ্র্যাচুইটির ক্ষেত্রে নতুন মামলা হলে দু’মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। জেলাশাসকের ঘরে মামলা হলে, তা শেষ করতে হবে দু’মাসের মধ্যে। বিভিন্ন আদালতে মামলা পড়ে থাকায় শ্রমিকেরা নাজেহাল হচ্ছেন। সে সব মেটাতে হবে অতি দ্রুত।
মঞ্চকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছেন রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বেশির ভাগ শ্রমিক অত্যন্ত দরিদ্র। কোথায় যাবেন, কী করবেন, তার কোনও দিশা পান না। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আমরা উদ্যোগী হয়েছি।” তাঁর বক্তব্য, আইনি পথে মোকাবিলা না করলে সরকার, সংশ্লিষ্ট দফতর বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবিকে কোনও গুরুত্বই দেন না।
অনেক শ্রমিক তাঁদের নায্য পাওনা পাচ্ছেন না স্বীকার করে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন,“দীর্ঘকাল ধরে অনেক শ্রমিকের পিএফ, গ্র্যাচুইটি দিচ্ছেন না মালিকরা। অনেক সময় শ্রম দফতরের তরফে মামলা করি।” অরাজনৈতিক শ্রমিক মঞ্চটিকে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। প্রবীণ সিটু নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কেউ কাজ করলে তা নিশ্চয়ই ভাল। আমরাও শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা নিয়ে কাজ করছি।” |