পুজোর শিউলি
র্ষার মেঘ কেটে শরতের সোনা রোদ বেরোতে না বেরোতেই প্রতি বছর আমাদের বাড়িতে ঢুকে যায় পুজোর আবহাওয়া। বিভিন্ন পত্রিকার পুজো সংখ্যা আসে। আসে পোশাক-আশাক আরও কত কী!
পুজো নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা প্ল্যান-পরিকল্পনা।
কিন্তু এ বারে একটা গোলযোগে আবহাওয়াটা ঢোকার মুখেই থমকে গিয়েছে। আমাদের বাড়ির সামনে যে চিলতে বাগানটা, সেখানের এক কোণে মেজকা একটা শিউলিগাছ লাগিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। প্রতি বছর এই শিউলিগাছ শরত্‌ পড়তেই ফুলে ফুলে ভরে যায়। কিন্তু এ বারে বর্ষাটা যখন যাওয়ার মুখে, সে সময় এক দিনের বাদল-বিরতিতে ছোটকা একটা লোক লাগিয়েছিল বাগান পরিষ্কার করার জন্য। লোকটা আনাড়ি। শিউলিগাছটাকে এমন ভাবে ছেঁটে দিয়েছে যে এ বারে ওখান থেকে ফুলের আশা বৃথা। এই নিয়ে মেজকার মুখভার। বাড়ির পরিবেশও তাই থমথমে।
কোনও কিছুতেই গা লাগাচ্ছে না মেজকা। ‘জামাকাপড় কবে কেনা হবে’ মা জিজ্ঞেস করলে মেজকার সেই এক উত্তর তোমরা তোমাদেরটা কিনে নাও।
বাড়ির এক জনকে বাদ দিয়ে যে তা এ বাড়িতে সম্ভব নয়, মেজকাও জানে। তাই এর পরেই মেজকার করুণ গলা, ‘বাড়ির শিউলিই যখন ফুটবে না, তখন আর কীসের পুজো!’
বাবা অবশ্য মেজকাকে আশ্বস্ত করেছে যে, শিউলিগাছটা এখন যতই ডালপালাহীন হয়ে থাক, পুজোর ঠিক আগে ওখানে ডালও গজাবে, ফুলও ফুটবে। অন্য বারের মতো পরিমাণে বিপুল হবে না, এই যা।
বাবা যতই বলুক, পুজোর দিন একটা একটা করে এগিয়ে এলেও শিউলিগাছটায় ডাল ফুলের কোনও লক্ষণই কিন্তু নেই। শিউলিগাছটা ঘিরে চাপা টেনশনটা বাড়িতে দিনকে দিন তাই জাঁকিয়ে বসছে।
ছবি: সুমন চৌধুরী।
প্রতিদিন সকাল হলেই এখন আমার প্রথম কাজ হয়েছে, শিউলিগাছের রিপোর্ট নেওয়া এবং তা মেজকা সহ বাড়ির অন্যান্যদের শোনানো। এই মধ্যে আবার শরতের রাঙা রোদ ক’দিন ঢাকা পড়ল আচমকা টানা বৃষ্টিতে। টানা বৃষ্টির পর আবার যে দিন শরত্‌ স্বমহিমায়, সে দিন বাবা সকালে সকলের আগে উঠে হইচই বাঁধিয়ে দিল। কারণ, শিউলিগাছের নতুন ডাল বেরিয়েছে। বাবা মেজকাকে বলল, ‘কী মিলল তো আমার কথা!’
মেজকার কিন্তু সেই একই রকম গম্ভীর মুখ ‘ডাল বেরিয়েছে ফুল তো বেরোয়নি। ফুল কি আর এ বার...’ মেজকার দীর্ঘশ্বাস গোপন থাকে না।
শেষ অবধি অবশ্য মেজকার আশঙ্কাই সত্যি হল। পুজো যখন দুয়ারে একেবারে কড়া নাড়ছে, সে সময়ও শিউলি নিরুত্তর। ফলত, মেজকা আরও গম্ভীর। বাবা ছোটকারও বেশ একটা দমে যাওয়া ভাব।
এই অবস্থায় দাদুর শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আর উপায় কী! পুজোর ঠিক আগে, এক ছুটির সকালে শরতের সোনা রোদ যখন আমাদের বাগানে পড়েও শিউলির জন্য খানিকটা নিষ্প্রভ হয়ে আছে, সে সময় দাদুর ইজিচেয়ার ঘিরে বসে আছি আমরা সবাই। শিউলি নিয়ে বাড়ির গুমোট আবহাওয়াটা গতকালই দাদুকে জানিয়েছে মা। সেই অনুযায়ীই এই বৈঠক।
অকালবোধনে কী হয়েছিল মনে আছে তোদের? দাদুর প্রশ্ন বাবাদের দিকে চেয়ে।
বাবা বলে ফুল নিয়ে কি?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ফুল নিয়েই।
বাবা বলে, ‘ওই তো, একটা নীলপদ্ম কম পড়েছিল, তখন রামচন্দ্র নিজের একটা চোখ...’
দাদু বলেন, তা হলে!
কী তা হলে?
সপ্রশ্ন মেজকা তাকায় দাদুর দিকে। দেখাদেখি আমরাও।
দাদু বলেন, ‘শিউলি কি শুধু গাছেই ফোটে? অন্য কোথাও নয়! শিউলি এ বার আমাদের গাছে ফোটেনি, কিন্তু যখন পাড়ার কচিকাঁচারা পুজোর পোশাকে ওখানে দাঁড়াবে, তখন কি শিউলি ফুটবে না বাগানে!’
মেজকা এক মিনিট কী ভাবে। তার পর বলে, ‘সেটা ঠিকই, কিন্তু...’ আবার কী কিন্তু? বাবা তাকায় মেজকার দিকে। শিউলিতলাটা কিন্তু ওদের খুব পছন্দের জায়গা।
মেজকা বলে, ‘না ও-নিয়ে নয়, বলছি...’, আমার দিকে চায় মেজকা। ‘নীলুও তো ওই কচিকাঁচাদেরই দলে, কিন্তু পুজোর পোশাক কি ও আর এ বার...!’
মার মুখে প্রসন্ন হাসি। আটকে তো আছে তোমারই জন্য।
দাদু সবার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দোকানে যাওয়ার জন্য আজকের দিনটা যে খারাপ, তা কিন্তু কোথাও লেখা নেই।’
এ সময় বাইরের রাঙা-রোদটার দিকে হঠাত্‌ই চোখ যায় আমার। দেখি সেই নিষ্প্রভ ভাবটা এক্কেবারে হাওয়া।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.